1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিজড়াদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২১ জুন ২০১৭

বৃহন্নলা, হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা সমাজে এখনো নানাভাবে বিড়ম্বনা এবং বৈষম্যের শিকার৷ তবে তাঁদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে৷ সরকারও তাঁদের সুখ স্বাচ্ছ্যন্দের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে৷

https://p.dw.com/p/2f7Ki
ছবি: picture alliance/dpa/Jagadeesh Nv

ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর পথে বাধা বা চ্যালেঞ্জ এক নয়, একাধিক৷ সমাজ তাঁদের দেখে থাকে, হয় রাস্তার ভিখারি , না হয় যৌনকর্মী কিংবা ঢোল বাজিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাঁরা গান গেয়ে বেড়ায় তাঁদের সমগোত্রীয় হিসেবে৷ কাজেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোতে এখনও বাধা অনেক৷ তবে ধীরে ধীরে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি সামজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতায় আসছে পরিবর্তন৷ হালে দক্ষিন ভারতীয় রাজ্য কেরালার রাজধানী কোচি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ট্রান্সজেন্ডার-বান্ধব হয়ে উঠেছে৷

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মোদী কোচি মেট্রো রেলের যাত্রারম্ভ করেন৷  কোচি মেট্রো রেল কোম্পানি ভারতের মধ্যে প্রথম সরকারি সংস্থা, যেখানে এই প্রথম কিছু তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়৷ চাকরির ইন্টারভিউতে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়, কাজের জায়গায় তাঁরা কী কী সুবিধা আশা করেন ? সকলেরই একই জবাব– বাথরুম সুবিধা৷ মহিলা মুখপাত্র চন্দ্রধিল রবি জানান,‘‘তৃতীয় লিঙ্গকে হামেশাই বাথরুম সমস্যায় পড়তে হয়৷ যেহেতু কোচি মেট্রো স্টেশন ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে, তাই প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি বাথরুমকে সব লিঙ্গের জন্য খুলে দেওয়া হবে৷ ওয়াশরুমের বাইরে পুরুষ বা নারী চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে৷ তৃতীয় লিঙ্গের কর্মীরা তাঁদের ইচ্ছামতো নারী বা পুরুষের ইউনিফর্ম পরতে পারবে৷''

SwapnamaChakrabortyWriter - MP3-Stereo

বিশিষ্ট লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের ওপর একটি জনপ্রিয় উপন্যাস লিখেছেন৷ লেখার আগে তিনি কয়েক বছর ধরে হিজড়াদের সামাজিক, বৈজ্ঞানিক এবং যাপিত জীবন নিয়ে পড়াশুনা, চর্চা এবং খোঁজ-খবর নেন৷ ডয়েচে ভেলে তাঁর কাছে সমাজে হিজড়াদের স্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ শুধু মধ্যবিত্ত শিক্ষিতদের মধ্যেই যে পরিবর্তন এসেছে, তা নয়৷ নিম্নবর্ণের তথাকথিত অশিক্ষিতদের মধ্যেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এর কারণ অনেক৷ আগে হিজড়াদের প্রতি একটা অবজ্ঞা দেখানো হতো৷ শুধু হিজড়া নয়, এখন ঘরের ভেতরে রুপান্তরকামী যেসব মেয়ে, পুরুষ হতে চায়, তাঁদের মানসিক দাবিকেও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে৷ শুধু কোচি মেট্টো রেল কোম্পানিতেই নয়, অনেক শপিং মলেও তৃতীয় লিঙ্গ বা রুপান্তরকামীদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যেসব হিজড়ে রাস্তায় রাস্তায় ছল্লা করে বেড়ায়, অঙ্গভঙ্গি করে গান গায়, তাঁরা রোজগার করে বেশি৷ তাই তাঁদের ফিরিয়ে আনা সহজ নয়৷''

লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে আরও বলেন, ‘‘সমস্যা আরও আছে৷ ধরুন, বাথরুম৷ যেসব হিজড়ার পুরুষ লিঙ্গ আছে, যাঁদের খোজা বা ক্যাস্ট্রেশন করা হয়নি, তাঁরা পুরুষের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পেচ্ছাব করে, তাঁদের মহিলাদের বাথরুমে ঢুকতে দেওয়া হয় না৷''

 ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয় লিঙ্গকে আইনি স্বীকৃতি দেবার পর থেকে শুধু সরকারই নয়, ভারতের অনেক বেসরকারি কোম্পানিতেও তৃতীয় লিঙ্গকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে৷ অনেক বেসরকারি সংস্থা লিঙ্গ নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করছে৷ তার ভিত্তিতে গতবছর ১৫টি কোম্পানি ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ কিন্তু বাথরুম সমস্যার বিহিত করতে পারেনি, বলেছেন মুম্বাই-এর হামসফর এনজিওর কণিকা রায়৷ 

সলিডারিটি ফাউন্ডেশন নামের আরেকটি এনজিওর নির্বাহী অধিকর্তা সুভ চাকো তাঁর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তাঁদের কাজের প্রথম দিনেই অফিসের গেটে তাঁদের আটকে দেয় সিকিউরিটি স্টাফ৷ পাশাপাশি সেন্ট্রাল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স, সংক্ষেপে সিআইএসএফ একজন নারী কনস্টেবলকে সরকারিভাবে শেষ পর্যন্ত ছয় বছর পর একজন পুরুষ কনস্টেবল হিসেবে মেনে নিয়েছে৷ এর আগে সহকর্মীদের ঠাট্টা তামাশাকে পাত্তা না দিয়ে হরমোন চিকিত্সার পর তিনি অপারেশন করিয়ে পুরুষ হন৷ সেক্স চেঞ্জের জন্য তাঁর খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা৷ সেজন্য সেই টাকা ঋণ নিতে হয়৷ অপারেশনের পর তাঁর দেহে পুরুষের সব লক্ষণ ফুটে বের হয়৷ সিআইএসএফ-এর মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে পরীক্ষা করে পুরুষের সার্টিফিকেট দিলে সরকার দীর্ঘ চার বছর টালবাহানার পর তাঁকে সরকারি রেকর্ডে পুরুষের স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ এক মহিলাকে বিয়েও করেছেন তিনি৷'' রুপান্তরিত পুরুষ কনস্টেবল জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি  নিজেকে ছেলে হিসেবেই ভাবতে শিখেছেন৷ দিল্লি মেট্রোতে নারী কনস্টেবল হিসেবে মহিলা যাত্রীদের হ্যান্ডেল করতে হতো৷ তাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না৷ বিহারে তাঁর বাড়ি৷ দীর্ঘদিন বাড়িমুখো হননি, পাছে তাঁকে কোনো পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়!

ভারতে সেই ব্রিটিশ আমলের সমকামীদের বিবাহ অবৈধ৷ বর্তমানে এই আইন সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়৷ ফয়সালা হয়নি৷ তবে সমকামী দুই প্রাপ্তবয়স্ক নিজেদের সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন৷ কারণ, এটা সংবিধানের ব্যক্তিস্বাধীনতার মধ্যে পড়ে৷ তবে সমকামিদের বিয়ে এখনও বৈধ নয়৷ ভারতে ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী হিজড়াদের সংখ্যা পাঁচ লাখ বলা হলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২০ লাখ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য