1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাইতির কলেরা মহামারি, প্রাণহানি চার শতাধিক

৮ নভেম্বর ২০১০

হাইতির কলেরা মহামারিতে এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ৪৪২ জন মানুষ৷ কলেরায় আক্রান্ত আরো প্রায় ৬ হাজার৷ দেশের দুর্বল অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যনীতি মহামারিকে আরো তীব্র করেছে৷ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও হিমশিম খাচ্ছে মহামারি নিয়ন্ত্রণে৷

https://p.dw.com/p/Q1Hg
ছবি: AP

হাইতিতে হঠাৎ করেই অক্টোবর মাসের শেষের দিকে কলেরা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে৷ দ্রুত বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য আসতে শুরু করলেও পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে৷ ইউনিসেফ দ্রুত ওষুধ-পত্র এবং স্যালাইন সরবারাহ শুরু করে৷ এর পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য সাবানসহ বেশ কিছু নিরোধক বড়িও দেওয়া হয়৷ এ পর্যন্ত কলেরা মহামারিতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪৪২ জন৷ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সাত হাজারের কাছাকাছি৷ হাসপাতালে জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ রাজধানী পোর্ট-অফ-প্রিন্স পর্যন্ত পৌঁছেছে কলেরা৷ রাজধানীর আশেপাশে প্রতিটি নদিতে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে৷ মেডিশেয়ারের কর্মী প্যাট্রিশিয়া পিট্স৷ তিনি জানান, ‘‘কোথাও-ই খাবার পানি বা পরিষ্কার পানি নেই৷ যেখানে পানি রয়েছে সেখানেই সবাই আশ্রয় নিচ্ছে৷ ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে৷ ক্যাম্পগুলোতে যদি কলেরা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হবে না৷''

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায় যখন রাজধানীর একমাত্র হাসপাতালটি রোগীতে ভরে যায়৷ এরপরও রোগী আসতে থাকে৷ তারা আশ্রয় নেয় গাড়ির পার্কিং-এর জন্য বরাদ্দ খোলা জায়গায়৷ খোলায় জায়গাতেই তাদের দেওয়া হয় স্যালাইন৷ অনেকে দাঁড়িয়েই স্যালাইন নিতে থাকে৷ তবে সবকিছুই অত্যন্ত দ্রুত করা প্রয়োজন৷ তা নাহলে শুরু হবে ডায়ারিয়া৷ এর ফলে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে অনেক বেশি৷ কলেরা আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কোন শিশুই তিন-চার ঘন্টার বেশি বাঁচে না৷

কলেরার উৎস কেউই জানেনা

তবে ঠিক কি কারণে কলেরা এই আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বা পড়ছে তা এখনো জানা যায়নি৷ রাজধানীর উত্তরাঞ্চল থেকেও রোগীরা আসছে৷ সবাই ভীড় করছে রাজধানীর হাসপাতালে৷ আলব্যার্ট শোয়াইৎসার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: আয়ান রসন বললেন, ‘‘উত্তরাঞ্চল থেকে রোগী আসা শুরু করেছে৷ এক সপ্তাহের মত হল৷ এর আগে তাদের দেখা যায়নি৷ আমরা এখন সত্যিই জানিনা ঠিক কোন কোন এলাকায় কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে বা পড়তে যাচ্ছে৷ কে কে হাসপাতালে আসছে আমরা শুধু সেদিকে লক্ষ্য রাখছি৷ সেন্ট্রাল ফর ডিসিজ কন্ট্রোল গবেষণা শুরু করে দিয়েছে৷ পানির মধ্যে কীভাবে কলেরার জীবাণু এসে পৌছালো তা তারা খুঁজে বের করবে৷''

প্রায় ১০ মাস আগে হাইতির বুকে আঘাত হেনেছিল ভূমিকম্প৷ এরপর বছর না ঘুরতেই হানা দিলমহামারি আকারে কলেরা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র গ্রেগরি হার্টল জানান, নির্দিষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না৷ কতদূর পর্যন্ত কলের ছড়িয়ে পড়তে পারে তা এখনো অজানা৷ হার্টলের মতে, ‘‘হাইতিতে আমাদের বেশ কিছু কর্মীকে পাঠানো হয়েছে৷ তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ আমাদের একটি অফিসও সেখানে রয়েছে৷ সেই অফিস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে জেনেভা এবং ওয়াশিংটনে আমাদের সদর দপ্তরের সঙ্গে৷ আমাদের মূল লক্ষ্য হল অত্যন্ত দ্রুত অসুস্থ মানুষদের সেবা প্রদান করা, তাদের সুস্থ করে তোলা৷ সারা দেশে ঠিক কত মানুষ কলেরায় আক্রান্ত তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি৷ এছাড়া কত দূর পর্যন্ত কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে তা আমরা জানি না৷ নির্দিষ্ট করে কিছু বলা এ কারণেই সম্ভব হচ্ছে না৷''

জায়গা নেই, ঠাই নেই

হাইতির হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়ছে মানুষ৷ চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারছেন না কি করা উচিৎ৷ কলেরার পাশাপাশি টাইফয়েড এবং অন্যান্য সংক্রামিত ব্যাধির পরীক্ষাও চালানো হচ্ছে রোগীদের ওপর৷ কারণ সবই পানিবাহিত রোগ৷ চিকিৎসক মিরিয়াম গুজমান জানান, ‘‘কী কারণে কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে তা এখনো আমরা জানি না৷ আমরা শুধু জানি যে ডায়রিয়ার মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে৷ কিন্তু ডায়রিয়ার কারণ এখনো খুঁজে বের করতে পারিনি৷ তবে এটুকু আমরা নিশ্চিত যে ডায়রিয়ার মূল কারণ হল দূষিত পানি৷''

প্রতিদিন রোগী আসছে৷ সবাইকে সাহায্য করা যাচ্ছে না৷ যারা হাসপাতাল বা মেডিক্যাল ক্যাম্পে জায়গা পায়নি তারা খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছে মর্গে, কবরস্থানে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক