1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্নের মুখে গ্রাম আদালত

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশে ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ সহায়তায় গ্রাম আদালত প্রকল্প সফল বলে দাবি করা হলেও, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদের কথায়, বিচারের যোগ্যতা নেই এমন লোকের হাতে বিচার তুলে দেয়ার এ প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয়৷

https://p.dw.com/p/1HeEf
Symbolbild Gewalt gegen Frauen in Indien
প্রতীকী ছবিছবি: Roberto Schmidt/AFP/Getty Images

মাগুরার পবিত্র বালার একমাত্র সন্তান নিখিল মানসিক প্রতিবন্ধী৷ ৬৫ বছর বয়স্ক পবিত্র বালার নিজের মাসিক আয় এক হাজার টাকা৷ এছাড়া তাঁর প্রতিবন্ধী পুত্রও মাছ ধরে কিছু আয় করে৷ এভাবেই চলে তাদের সংসার৷ কিন্তু একদিন এক প্রতিবেশী তাদের মাছ ধরার জাল, বাই-সাইকেল এবং রিকশাভ্যান চুরি করে নেয়ায় তারা বিপদে পড়েন৷ তাদের আয়-রেজগার সব বন্ধ হয়ে যায়৷

এরপর পবিত্র বালা গ্রাম আদালতে বিচার চান৷ বিচারে তিনি ১৯ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পান৷ বলা বাহুল্য, এই ক্ষতিপূরণ পেয়ে তিনি বেজায় খুশি৷ ইউএনডিপি-র এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় গ্রাম আদালতের বিচারের এই ঘটনা৷ পবিত্র বালা বিচার পেয়েছেন অভিযোগ করার মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে৷

von Brunnenwasser vergiftete Frau in Bangladesh
ছবি: I. Bickis

বাংলাদেশে ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ এবং বিধিমালা পাশ হলেও, ২০০৯ সাল থেকে সাধারণ মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করেন৷ ২০১৫ সালে গ্রাম আদালতের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ শেষ হয়৷ এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে ২০১৯ সালে৷

ইউএনডিপি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় এই গ্রাম আদালত পরিচালিত হচ্ছে৷ গ্রাম আদালত চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আদালতগুলোয় ৮৫ হাজার অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে শতকরা ৭৮ ভাগ অভিযোগ ২৮ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, এ সমস্ত অভিযোগে নারীর অংশগ্রহণ শতকরা ৩৫ ভাগ৷ আর তাদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে৷

An der Grenze zwischen Indien und Bangladesch
ছবি: S. Rahman/Getty Images

গ্রাম আদালতের সুবিধার মধ্যে রয়েছেন দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ৷ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে নতুন ১ হাজার ইউনিয়নে গ্রাম আদালত কাজ করবে৷ এই সব ইউনিয়নে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস৷ এরসঙ্গে প্রথম ধাপের ৩৫১টি ইউনিয়নের ৭০ লাখ মানুষও গ্রাম আদালতের আওতায় থাকছেন৷

গ্রাম আদালতের প্রধান হলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান৷ তাঁর নেতৃত্বেই পাঁচ সদস্যের একটি আদালত অভিযোগের বিচার করে৷ ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়া দু'জন করে সদস্য থাকেন দুই পক্ষ (বাদি ও বিবাদি) থেকে৷ গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে৷ এই আদালতে ফৌজদারি মামলায় চার টাকা এবং দেওয়ানি মামলায় দু'টাকা ফি৷

বাংলাদেশের সাধারণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে যেখানে গড়ে পাঁচ বছর সময় লাগে, সেখানে গ্রাম আদালতে একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে মাত্র ২৮ দিন৷ তবে গ্রাম আদালত ছোট-খাট অবপরাধ, চুরি, বিরোধ নিষ্পত্তি ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে৷

তোফায়েল আহমেদ

তবে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ গ্রাম আদালতকে আদালত বলতে নারাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি শালিস মিমাংসার প্রকল্প৷'' তিনি গ্রাম আদলতের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘বিচার বিভাগের বাইরে স্থানীয় সরকার আলাদা কোনো আদালত সৃষ্টি করতে পারে না৷ তাই যারা এটা করছেন, তারা না বুঝে করছেন৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘বিচারের জন্য প্রশিক্ষিত নয়, এমন লোকদের হাতে কোনো বিচার ছাড়া যায় না৷ আর ইউপি চেয়ারম্যানরা তো ভবিষ্যতে দলীয়ভাবে নির্বাচিত হবেন৷ দলীয় ব্যক্তি কীভাবে বিচার করেন?''

ড. তোফায়েল আহমেদের কথায়, ‘‘বিচার প্রশাসনকে উপজেলা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে৷ উপজেলা আদালতের অধীনে গ্রাম আদালত স্থাপন করতে হবে৷ তাহলে মানুষ এর সুফল পাবে৷''

বন্ধু, আপনি কি গ্রাম আদালত প্রকল্পকে সমর্থন করেন? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান