1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কন্যা সন্তানের জন্ম, নির্যাতিত মা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৫ আগস্ট ২০১৭

কন্যা সন্তানের জন্মদানের জন্য দায়ী ‘মা' – এমন একটা মধ্যযুগীয় মানসিকতা গেড়ে বসেছে ভারতীয় সমাজে৷ গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরাঞ্চলেও দেখা যাচ্ছে এমনটা৷ কন্যাসন্তানের জন্মের পর মাকেই সহ্য করতে হচ্ছে গঞ্জনা, নির্যাতন৷

https://p.dw.com/p/2hgYA
ছবি: imago/Chromorange

গত কয়েকদিনের খবরের দিকে চোখ রাখলেই উঠে আসে একাধিক কন্যাসন্তানের জন্ম দেবার জন্য কীভাবে দোষী করা হচ্ছে মায়েদের৷ উঠতে বসতে নানা ধরনের কটুক্তি ও গঞ্জনা শুনতে হয় তাঁদেরই৷ কখনও কখনও তা মাত্রাও ছাড়িয়ে যায়৷ দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন ভোগ করতে হয় সংসারের এবং পরিবারের নিকটজনদের হাতে৷ কিন্তু কেন? কেন বৈজ্ঞানিক সত্য নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না? কারণ সেকেলে বিশ্বাস পুত্রসন্তান পরিবারের সম্পদ৷ বংশ রক্ষা হবে আর কন্যাসন্তান ট্যাবু৷ অনাকাঙ্খিত বোঝা, অপরের গচ্ছিত সম্পদ৷ যত তাড়াতাড়ি তাদের বিদায় করা যায়, ততই মঙ্গল৷ তাই বাল্যবিবাহ প্রথা আজও বন্ধ হয়নি ভারতে৷ এই মধ্যযুগীয় মানসিকতার জন্য দায়ী আসলে অশিক্ষা বা কুশিক্ষা৷ ঋতুচক্র যে নারীদেহের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেবিষয়ে জনশিক্ষার অভাব৷ আর সে কারণেই কন্যাসন্তানের জন্মদান এক ট্যাবুতে রূপান্তরিত হয়েছে৷ ভারতে কন্ডোম ট্যাক্স-ফ্রি, কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিনে ট্যাক্স দিতে হয় প্রায় ১৫ শতাংশের মতো৷ এটা মেয়ে হয়ে জন্মাবার বিড়ম্বনা ছাড়া আর কী? অথচ বিশ্বে মেয়েরা আজ পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছে৷ শিক্ষায়, দীক্ষায়, কর্মদক্ষতায়, মেধায়, প্রতিভায়৷ অথচ সমাজের একটা অংশ সেটা দেখতে চায় না, চায় না মেয়েদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে৷

এই তো ক'দিন আগের ঘটনা৷ হরিয়ানার সিরসা জেলার এক গ্রামে ৪০ বছর বয়সি এক মহিলার তিনটি সন্তানই মেয়ে৷ চতুর্থবার গর্ভবতী হয়েছেন তিনি৷ চতুর্থ সন্তানও হয়ত মেয়েই হবে – এই ক্ষোভে দুঃখে আশংকায় ৫৬ বছর বয়সি শাশুড়ি চার বছরের নাতনির যৌনাঙ্গ গরম খুন্তি দিয়ে পুড়িয়ে দেয়৷ বাচ্চা মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ মেয়েটির মা পুলিশের কাছে শাশুড়ির বিরুদ্ধে ডাইরি করেন৷ শাশুড়ি নাকি তাঁকে বলেছিল, এবারে ছেলে হলে তবেই রাখবে, না হলে নয়৷ পুলিশ শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে৷ এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এর পেছনে কোনো তান্ত্রিকের হাত আছে কিনা৷ কিছু এনজিও কর্মীও তদন্ত কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন৷

 

দক্ষিণী রাজ্য তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদের মেহবুবনগরে এক মহিলা নিঃসন্তান এক ভারতীয় দম্পতিকে তাঁর গর্ভভাড়া দেন৷ আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলার গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয়৷ দেখা যায়, অনাগত সন্তান হবে মেয়ে৷ তখন সেই দম্পতি চুপচাপ সরে পড়ে৷ এখন নবজাত কন্যাসন্তানকে দেখভাল করতে হচ্ছে সারোগেট মাকেই৷ পুলিশ অবশ্য গর্ভ ভাড়া নেওয়া দম্পতিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে৷

পশ্চিমবঙ্গও পিছিয়ে নেই৷ কাটোয়া জেলার একটি গ্রামে হতদরিদ্র খেতমজুর পরিবারের মেয়ে নূরতাজ৷ বিয়ে হয় গ্রামেরই হিরাসিন শেখের সঙ্গে৷ তার অভিযোগ, মেয়ে হওয়ার পর বাপের বাড়ি থেকে ৬০ হাজার টাকা আনার জন্য চাপ দেওয়া হয়৷ সেইসঙ্গে মারধরও করা হয় নিয়মিত৷ প্রথমে পুলিশের কাছে নালিশ করলেও, শেষ পর্যন্ত অভিযোগ তুলে নেয় নূরতাজ৷ বাবার সংসার যে চলে টেনেটুনে৷ তাই বাবার ওপর আর বাড়তি বোঝা চাপাতে চায়নি সে৷

স্বামীর ঘরেই ফিরে যায়৷ কিন্তু মা-মেয়েকে স্বামী ঘরে জায়গা না দিয়ে পাশের একটি চালা ঘরে থাকতে দেয়৷ সেখানে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একদিন ঝগড়া হলে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে বটি দিয়ে মারধর করে৷ গায়ে কার্বলিক অ্যাসিড ছিটিয়ে দেয়৷ চিত্কার শুনে পাড়ার লোকজনেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ পুলিশ নূরতাজের স্বামীকে জেরা করলে সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, বৌ মিথ্যা কথা বলেছে৷ ফর্সা হবার ক্রিম মেখেই নাকি তার চামড়া পুড়ে গেছে৷

এইসব ঘটনা তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র৷ সবথেকে বড় কথা পুত্র ও কন্যাসন্তানের জন্মে জীববিজ্ঞানের ব্যাখ্যা কী? প্রত্যেক মানুষের ডিএনএ-তে এক জোড়া সেক্স-ক্রোমোজোম থাকে, যার একটির নাম ‘এক্স' অন্যটির নাম ‘ওয়াই'৷ এক্স ও ওয়াই ক্রোমোজোম দিয়ে গঠিত হয় পুরুষ শরীর৷ আর নারী দেহে থাকে দু'টোই ওয়াই ক্রোমোজোন৷ তাই নারী-পুরুষের মিলনের সময় সন্তানের ভ্রুণে বাবার থেকে এক্স ও মায়ের থেকে ওয়াই ক্রোমোজোম নিয়ে এক্স-ওয়াই যুগল অথবা দু'জনের থেকে ওয়াই ক্রোমোজোন নিয়ে ওয়াই-ওয়াই যুগল তৈরি হতে পারে৷ এক্স-ওয়াই যুগলে পুত্রসন্তান আর ওয়াই-ওয়াই যুগলে কন্যাসন্তান হয়৷ ঘুরিয়ে বলতে গেলে সন্তানের লিঙ্গ গঠনে বাবারই পরোক্ষ অবদান করেছে, মায়ের নয়৷

কন্যাসন্তানের জন্মের পিছনে যে মেয়েদের ভূমিকা নগণ্য – এ কথা বিশ্বাস করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য