1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোনালি ডানার চিল

১৭ মে ২০১৭

চিল একটি শিকারি পাখি, আবার যাযাবর পাখি৷ ইউরোপে শীত আসার মুখে তারা জিব্রালটার হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায় গরমকাল কাটাতে৷ কিন্তু তারা জিব্রালটার প্রণালীর প্রায় ১২ মাইল সাগর পার হয় কী করে?

https://p.dw.com/p/2d53p
Waldrappen Ibis BITTE EINSCHRÄNKUNG BEACHTEN
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Unsöld

গ্রীষ্মের শেষদিকে স্পেনের দক্ষিণ উপকূল৷ আগস্টের শেষে লক্ষ লক্ষ যাযাবর পাখি এখানে এসে জড়ো হয় – তাদের সুদীর্ঘ যাত্রাপথে সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি এখন তাদের সামনে৷

চিলের মতো শিকারি পাখিদের জন্য জিব্রালটার প্রণালী হলো একটি অনতিক্রম্য প্রতিবন্ধক৷ যে সব পাখি পাখা মেলে ভেসে যেতে পারে, সাগর পার হওয়ার জন্য তাদেরও প্রয়োজন ‘থার্মাল’ বা গরম হাওয়ার ঘূর্ণির৷ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে চান, এতো বাধা সত্ত্বেও পাখিরা জিব্রালটার প্রণালী পার হয় কী করে৷

মাক্স প্লাংক পক্ষিবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা দেখতে চান, ইউরোপীয় ‘কাইট’ বা চিলরা কীভাবে জিব্রালটার প্রণালী পার হয়৷ এক্ষেত্রে বাতাসই পাখিদের সবচেয়ে বড় শত্রু, কেননা এই পুবের বাতাস পাখিদের আবার ডাঙার দিকে ঠেলে ফিরিয়ে দেয়৷ চিলরা কীভাবে সাগর পার হয়, তা জানার জন্য গবেষকরা এবার তাদের গায়ে ট্র্যাকিং ট্রান্সমিটার বসাতে চান৷

কাজ শুরু হলো৷ তাঁর গবেষণার জন্য দাভিদ সান্তোসকে যতো বেশি সম্ভব চিল ধরে, তাদের গায়ে খুদে ট্র্যাকিং ডিভাইস বসাতে হবে৷ সেই ডাটা থেকে চিলরা কীভাবে সাগর পার হয়, তা জানার আশা রাখেন বিজ্ঞানীরা৷

এযাবৎ মাত্র ছ'টি চিল ধরা পড়েছে – সূচনা হিসেবে খারাপ নয়৷ পাখির মাথার ওপর ঢাকনা দিলেই সে মনে করে, এখন রাত হয়েছে – তাই সে চুপচাপ থাকে৷ ট্রান্সমিটারটা সযত্নে রুকস্যাকের মতো পাখির পিঠে বেঁধে দেওয়া হল৷ গবেষক তাঁর নিজের মোবাইল ফোন থেকে দেখতে পান, পাখিটা কোথায় আছে এবং ঠিক কী করছে৷

পক্ষিবিজ্ঞানী দাভিদ সান্তোস জানালেন, ‘‘এটা একটা বিশেষ ধরনের লগ৷ সেলফোন নেটওয়ার্ক জিএসএম-এর মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সমিট করে৷ ভেতরে একটা সিমকার্ড আছে, এটার জিপিএস, একটা অ্যাক্সিলারোমিটার আছে, যা পাখিটার ওড়ার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করে৷’’

পরদিন সকালে বিজ্ঞানীরা পরিস্থিতি যাচাই করছেন৷ আজ যতগুলো সম্ভব পাখি ধরতে হবে - কেননা বাতাস ধরে এলেই পাখিরা তাদের যাত্রা শুরু করবে৷ সময় চলে যাচ্ছে: এক সপ্তাহের মধ্যেই পাখিদের অভিপ্রায়ণের সময় শেষ এবং বিজ্ঞানীদের সব কাজটাই মাটি৷ সান্তোস বললেন, ‘‘কাজেই পাখি ধরার এটাই সেরা সময় – অধিকাংশ পাখি এখন সাগর পার হবে না৷ ওরা এখানে থেকে খাবারের খোঁজ করবে৷’’

গবেষকরা খাঁচার মধ্যে খাবার ছড়িয়ে রেখেছেন৷ পাখিরা কি খাবারের লোভে খাঁচায় ঢুকবে, নাকি তারা ইতিমধ্যেই সাগর পাড়ি দিতে শুরু করেছে? এক ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, তবু কোনো পাখি এখনও খাঁচায় ঢোকেনি৷ প্রথমে কোনো একটি পাখির সাহস করে ঢোকা দরকার৷ হঠাৎই খাঁচাটা ভর্তি হয়ে গেল!

এখন কোনো ভুল হলে চলবে না৷ একটি শেল্টার থেকে গবেষকরা খাঁচাটা বন্ধ করে দিতে পারেন – চিলরা তাদের দেখতেই পারবে না৷ আজ সেই দিন৷ বাতাস ঘুরে গেছে৷ পাখিদের পক্ষে আদর্শ আবহাওয়া৷ পক্ষিবিজ্ঞানীরা জিব্রালটার প্রণালীর অনেক উপর থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন৷ যে কোনো মুহূর্তে পাখিদের যাত্রা শুরু হতে পারে৷

সাগরপাড়ি

বাতাস গরম হচ্ছে৷ স্বল্পক্ষণের মধ্যেই প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে শত শত পাখি এসে জড়ো হয়েছে; তারা ‘থার্মাল’ বা গরম বাতাসে চড়ে ওপরে উঠছে, যা কিনা যাত্রার অব্যবহিত প্রস্তুতি৷

প্রাথমিক তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে, চিলরা এনার্জি সেভিং-এর ব্যাপারটা খুব ভালো বোঝে৷ ডাঙায় থাকতেই তারা গরম হাওয়ার ঘূর্ণি ধরে ১,২০০ মিটার উচ্চতায় উঠে যায়, যাতে তারা পাখা না ঝাপটে, স্রেফ ধীরে ধীরে ভেসে ভেসে প্রণালী পার হয়ে নীচে নামতে পারে৷ এক্ষেত্রে পাখিদের সঠিক হিসেব করতে হবে, ১৪ কিলোমিটার সাগর পার হওয়ার জন্য তাদের কতোটা উঁচুতে উঠতে হবে৷ ওপারে পৌঁছে কয়েকবার পাখা ঝাপটালেই আবার ‘থার্মাল’ ধরে আকাশে ওঠা যাবে৷

এবার শুধু আফ্রিকা মহাদেশটা পার হলেই দক্ষিণ আফ্রিকা – সেখানেই গ্রীষ্ম কাটাবে এই সাগরপারের অতিথিরা৷