1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোলিঙেনের অগ্নিকাণ্ডের ২৫ বছর

২৯ মে ২০১৮

১৯৯৩ সালের ২৯শে মে সোলিঙেন শহরে একটি পুরনো, আধা-কাঠের বাড়ির উপর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাঁচজন তুর্কি বংশোদ্ভূত মহিলা ও শিশু প্রাণ হারায়৷ বহিরাগত-বিদ্বেষের ফল যে কী হতে পারে, সোলিঙেন তার দৃষ্টান্ত৷

https://p.dw.com/p/2yVFk
ছবি: dpa

কাঠের বর্গা আর ইট-সুড়কির তৈরি পুরনো আমলের বাড়ি, জার্মানিতে যেমন হামেশা দেখতে পাওয়া যায়৷ দুষ্কৃতীরা অগ্নিসংযোগ করার ফলে যারা প্রাণ হারান, তাদের মধ্যে ছিল চার বছর বয়সের সাইমে গেঞ্চ; আর ছিল নয় বছর বয়সের হুইলিয়া গেঞ্চ৷ বাকি তিনজন ১২ বছর বয়সের গ্যুল্যুস্তান ও্যজতুর্ক, ১৮ বছর বয়সের হাতিচে গেঞ্চ ও ২৭ বছর বয়সের গ্যুরস্যুন ইঞ্চে৷

১৬ থেকে ২৩ বছর বয়সের একদল তরুণ, যারা সবাই দৃশ্যত সোলিঙেনের চরম দক্ষিণপন্থি স্কিনহেড গোষ্ঠীর সদস্য ছিল এবং একটি মার্শাল আর্টস স্কুলে একসঙ্গে ব্যায়াম করত৷ পরে জানা যায় যে, ঐ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি যিনি চালাতেন, তিনি বস্তুত নর্থরাইন ওয়েস্ট ফেলিয়া রাজ্যের গুপ্তচর বিভাগের একজন ইনফর্মার৷

তদন্ত থেকে প্রকাশ পায় যে, ১৬ বছর বয়সের দুষ্কৃতী ক্রিস্টিয়ান রেহার ইতিপূর্বে বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষসূচক প্রচারপত্র বিলি করেছিল৷ যে বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, তার কাছেই ক্রিস্টিয়ানের বাড়ি এবং পুলিশ তাকেই প্রথমে গ্রেপ্তার করে৷ আরেক দুষ্কৃতী, ১৯ বছর বয়সের ক্রিস্টিয়ান বুখহলৎস একটি ডায়রি রাখতো, যাতে বিদেশি ও বহিরাগতদের প্রতি বিদ্বেষ ব্যক্ত করে নানা অপ্রীতিকর মন্তব্য লিপিবদ্ধ করা ছিল৷

১৯৯৫ সালে সোলিঙেনের সব দৃষ্কৃতীকে পাঁচ দফা হত্যা, ১৮ দফা হত্যার প্রচেষ্টা ও অগ্নিসংযোগের দায়ে ১০ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়৷ গেঞ্চ পরিবারের উকিল রাইনার ব্র্যসোভ বলেন, ‘‘সোলিঙেন যুদ্ধপরবর্তী জার্মানির ইতিহাসের বইগুলিতে বহিরাগত বিদ্বেষের একটি চরম নমুনা হিসেবে পরিচিত হবে৷’’

Infografik Angriffe Flüchtlingsheime Deutschland 2016 ENG

অ্যাসাইলাম আইনের কড়াকড়ি

সোলিঙেনের ঘটনার সঙ্গে তার কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্কে না থাকলেও, উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ঘটনার মাত্র তিনদিন আগে জার্মান সংসদ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তির অধিকার ব্যাপকভাবে সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ সিডিইউ-সিএসইউ ও এফডিপি দলের শাসকজোটবিরোধী এসপিডি দলের সমর্থনের বলে সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা করে৷ সংবিধানের ষোড়শ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সে পর্যন্ত জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার মুক্ত অধিকার ছিল৷ আশির দশকের শেষ থেকে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বিপুলভাবে বাড়ার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদটি বাতিল করা হয়৷

বহু বছর ধরে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা মোটামুটি বছরে এক লাখের নীচে ছিল – কিন্তু ১৯৯০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় দু'লাখে, আর তার আরো দু'বছর পরে প্রায় চার লাখ চল্লিশ হাজারে৷ এই সময়ে রিপাবলিকানদের মতো উগ্র দক্ষিণপন্থি দলগুলি নির্বাচনে বিশেষ সাফল্য লাভ করে, যেমন পূর্বাঞ্চলে, তেমনই জার্মানির পশ্চিমাংশে৷

সে সময়েও জাতিবাদ প্রণোদিত আক্রমণের কোনো কমতি ছিল না এবং সে ধরনের আক্রমণের ফলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে৷ ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে উত্তর জার্মানির রস্টক-লিশ্টারহাগেনে উত্তেজিত জনতা ভিয়েতনামী অধিবাসীদের বাসস্থান একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করে ও আগুনে বোমা ইত্যাদি ছোঁড়ে৷ সারা বিশ্বের মিডিয়া তা প্রত্যক্ষ করেছিল৷ ঘটনায় যে কেউ প্রাণ হারায়নি, সেটা নিছক সৌভাগ্য৷

‘বিষাক্ত’ আবহাওয়া

নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ‘আউসল্যান্ডার রাউস’ বা ‘বিদেশিরা বেরিয়ে যাও’ ধ্বনি জার্মানির বহু ছোটবড় শহরে মাথা চাড়া দেয় – বিশেষ করে সাবেক পূর্ব জার্মানিতে, জার্মান একীকরণের পর যেখানে বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কেননা আগের রাষ্ট্রায়ত্ব ও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল৷ কাজেই জার্মানির পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের হতাশা ও রোষ গিয়ে পড়ে ‘বিদেশিদের’ উপর৷

বার্লিনের জাতিবাদ-বিরোধী আমাদেউ আন্তোনিও নিধির প্রধান আনেট্টা কাহানের মতে ২৫ বছর আগের সেই বিস্ফোরক আবহাওয়া বর্তমানেও পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ জার্মানিতে কত উদ্বাস্তু নেওয়া উচিত, সে প্রশ্ন উঠলেই শোনা যাচ্ছে, ‘দেশে কি ইতিমধ্যেই বড় বেশি বিদেশি নেই?’ এই মনোভাব পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তুলেছে বলে কাহানের ধারণা৷

আদতে অ্যাঙ্গোলার অধিবাসী আমাদেউ আন্তোনিও জার্মান পুনর্মিলনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারান৷ ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে বার্লিনের এভার্সভাল্ডে এলাকায় একদল চরম দক্ষিণপন্থি যুবা বেসবল ব্যাটসহ আমাদেউকে আক্রমণ করে৷ সে আমলের ‘বিষাক্ত আবহাওয়াই’ ছিল আমাদেউর মৃত্যুর কারণ বলে আনেট্টা কাহানের ধারণা৷ আমাদেউর আক্রমণকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে চার বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, বাকিদের কারাদণ্ড মুলতুবি রাখা হয়৷

কাহানের মতে সে আমলের রাজনীতিকরা এই বিষাক্ত পরিস্থিতিতে জনমতের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অভিবাসীদের জার্মানিতে আগমন সীমিত করার প্রচেষ্টা করেন, যা জনগণের কাছে একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বার্তা পাঠায়৷

এবং আজও সে বিপদ রয়ে গেছে বলে আমাদেউ আন্তোনিও নিধির প্রধান ইঙ্গিত দেন৷

মার্সেল ফ্যুর্স্টেনাউ/এসি