1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না’

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

সুন্দরবনের শেলা নদীতে অয়েল ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পরপরই তেল যাতে না ছড়ায় তার ব্যবস্থা নেয়া যেত৷ কিন্তু তা না করায় একশ’ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে, মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা৷

https://p.dw.com/p/1E3eL
Ölteppich bedroht Weltnaturerbe in Bangladesch
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images

সুন্দরবনের আশপাশের নদীতে এবং ভিতরের খালে ছড়িয়ে পড়া তেল সরানোর কাজ এখনো চলছে স্থানীয় পদ্ধতিতে৷ এলাকার সাধারণ মানুষ ফোম বা অন্য কোনো উপায়ে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ করে ৩০ টাকা লিটার দরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে বিক্রি করছেন৷ আর এই আর্থিক সুযোগ দেয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তেল সংগ্রহে ব্যাপক সাড়াও পড়েছে৷ তাঁরা নৌকাযোগে হাড়ি-পাতিল নিয়ে যে যাঁর মতো ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ করছেন৷

দুর্ঘটনা কবলিত অয়েল ট্যাংকার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭'-এ ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল ছিল এবং ট্যাংকারের তলদেশ ফেটে যাওয়ায় পুরো তেলই ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু গত দু'দিনে এর সামান্য পরিমাণ তেলই স্থানীয় পদ্ধতিতে অপসারণ সম্ভব হয়েছে৷

সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে কর্তৃপক্ষ

গত মঙ্গলবার ভোরে দুর্ঘটনা ঘটে এবং এরইমধ্যে চার দিন পার হয়ে গেলেও শুধু ট্যাংকারটি টেনে তোলা ছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদ্ধতি চোখে পড়ছে না৷ ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েলের কার্যকারিতা রোধে কোনো কেমিকেল ব্যবহার করা হবে কিনা – সে ব্যাপারে শনিবার অবধি সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার৷

সুন্দরবন (পশ্চিম) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমদ ডয়চে ভেলেকে জানান, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘‘ফার্নেস অয়েলের কার্যকারিতা রোধে কেমিকেল ব্যবহার করা হলে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব পড়তে পারে৷ এমনিতেই ফার্নেস অয়েলের কারণে সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে৷ আবার যদি কোনো কেমিকেল ব্যবহার করা হয় তবে অক্সিজেনের পরিমাণ আরও কমে যাবে৷''

Ölteppich bedroht Weltnaturerbe in Bangladesch
নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান অবশ্য দাবি করেছেন, তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে নাছবি: STRDEL/AFP/Getty Images

বিভাগীয় এই বন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা এখন পর্যন্ত মনে করছি ম্যানুয়ালি যতটা তেল অপসারণ করা যায় তা করব৷ ন্যাচারালি এক থেকে ছয় সপ্তাহ পর তেল পানির নীচে পড়ে যাবে৷''

ফার্নেস অয়েলের প্রভাবে এরইমধ্যে জলজ প্রাণি ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ মরে যাচ্ছে কাঁকড়া এবং কচ্ছপ৷ সুন্দরবন এলাকার নদীতে ইরাবতী ডলফিন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ আর গাছের ঠেসমূল জাপটে ধরেছে তেলের পুরু আস্তরণ৷ মাছও দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ এর প্রভাব পড়বে অন্য স্থল ও জলজ প্রাণি এবং গাছপালার ওপর৷

‘সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না'

নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান অবশ্য দাবি করেছেন, তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না৷ শনিবার দুপুরে সুন্দরবন এলাকার জয়মনি নদীর তীরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘তেলের কারণে সুন্দরবনে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না৷ ডলফিনেরও ক্ষতি হবে না৷ তেল বনের ভেতর বিস্তৃত হয়নি৷ খালের মুখে জাল (মাছধরা জাল) দিয়ে বাধা দেয়ায় তেল বনে ডুকতে পারেনি৷ ভাসমান তেল চলে যাচ্ছে, তাছাড়া স্থানীয়রা তেল উঠিয়ে নেয়ায় আস্তে আস্তে তেলের প্রভাব কমছে৷''

অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অদক্ষতা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এরইমধ্যে সুন্দরবনের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে৷ শুধু স্বল্পমেয়াদেই নয় দীর্ঘমেয়াদেও এই ক্ষতি অব্যাহত থাকবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তেলের ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর এটা যে ক্ষতির কারণ হতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ করে গণমাধ্যম৷ শুরুতেই যদি সরকারের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারতেন তাহলে তেল ছড়িয়ে পড়তো না৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি৷''

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘‘এ নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারে দক্ষ এবং যোগ্য লোকের অভাব আছে সত্য৷ তবে তার চেয়ে বড় অভাব হলো সচেতনতার৷ উদাসীনতা৷''

এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সরকারে সক্ষম ও দক্ষ বিশেষজ্ঞ না থাকলেও সুন্দরবনের তেল বিপর্যয় প্রতিরোধে সক্ষম অনেক বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ আছেন৷ তারা দেশের বাইরেও এ নিয়ে কাজ করেছেন৷ সরকারের উচিত হবে দ্রুত তাদের পরামর্শ নিয়ে এই বিপর্যয় মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, বলেন মাকসুদ কামাল৷