1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সু চি'র ভাষণে হতাশা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি'র ভাষণ হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা৷ আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন দেশকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে৷ তবে অবশ্যই কাজটা সহজ নয়৷

https://p.dw.com/p/2kO1g
ছবি: Reuters TV

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মিয়ানমারের সরকারী বাহিনী যে গণহত্যা করেছে তার জন্য তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার এখন ভুলুণ্ঠিত৷

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি'র ভাষণ প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট৷ জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে সু চি'র  কোনো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাঁর বক্তব্য আমরা জোটের পক্ষ থকে প্রত্যাখ্যান করছি৷'' বুধবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন৷

মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সু চি নানাবিধ আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তাঁর কৌশল পরিবর্তন করেছেন৷ তারপরও বলব, তারা যে স্পেস আমাদের দিয়েছে সেটা কাজে লাগানো দরকার৷ তারা যে এখনই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে সেই ধরনের কিছু তিনি বলেননি৷ তবে এই গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার৷ তারা মানবাধিকার লংঘন করেছে, মৌলিক অধিকার হরণ করেছে৷ ফলে আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্ব তাদের বিচারের মুখোমুখি করা৷’’

সূ চি নানাবিধ আন্তর্জাতিক চাপের কারণে কৌশল পরিবর্তন করেছেন: নূর খান

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘‘সু চি বলেছেন, তিনি আন্তর্জাতিক চাপকে ভয় পান না৷’’ তিনি মনে করেন, সু চি একটি মিশ্র বক্তব্য দিয়েছেন৷ যার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গন এবং সামরিক বাহিনীকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছেন৷ মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যা শুনতে পছন্দ করে সু চি তাই বলেছেন৷ সু চি তাঁর বক্তব্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো বলেছেন৷ যা দেখে মনে হয় তিনি কিছুটা সরে এসেছেন৷’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি এটিকে সূচনা হিসেবে দেখছি, যার মাধ্যমে হয়তো কূটনৈতিক প্রয়াসের মাধ্যমে একটি জায়গায় উপনীত হওয়া যাবে৷’’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওখানে যে গণহত্যা চলছে সেটার জন্য বার্মা সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করা যায়৷ যদিও আমাদের দেশে এই হণহত্যা হয়নি, তবুও আমরা যেহেতু ক্ষতিগ্রস্থ, সে কারণে আমরা অভিযোগ উত্থাপন করতে পারি৷ এই রাস্তাটাই একমাত্র রাস্তা৷ অন্য যে পথগুলো আছে, সেখানে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে একত্রিত হয়ে অভিযোগ উত্থাপন করতে হয়৷ সেখানে বাংলাদেশের এককভাবে কিছু করার সুযোগ নেই৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের চাপ অব্যহত রাখতে হবে৷ আমাদের জাতীয় আইনে এমন কিছু নেই যাতে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারি৷ আমাদের আইন অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধ হলে সেটা দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে হতে হবে৷ তাহলে ৭৩-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়া যায়৷ এখানে আক্রান্তরা যেহেতু আমাদের দেশের নাগরিক না, সে কারণে এটা করা সম্ভব নয়৷’’

বার্মা সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করা যায়: জ্যোতির্ময় বড়ুয়া‌

১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিজ দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে৷ আমরা ১৪ দলের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা করছি৷ আমরা নিন্দা জানাই সু চি'র আজকের এই ভূমিকাকেও৷ তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়ে কিভাবে এই নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন?’’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘আজকে আমরা আশা করবো বিশ্ববাসী জেগে উঠবে, চাপ সৃষ্টি করবে মিয়ানমারের ওপর৷ তারা যেন এই নিরীহ মানুষদের ফিরিয়ে নেয়, তাদের যেন নিজের দেশের আশ্রয় পাওয়ার ব্যবস্থা করে৷ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে অনুরোধ করব এই নিরীহ মানুষের দিকে তাকিয়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করার জন্য তারা যেন এগিয়ে আসে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...