1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন হুমকির মুখে রোহিঙ্গারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ মার্চ ২০১৮

নোবেলজয়ী তিন নারীর বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গা ইস্যুকে চাঙ্গা করলেও মিয়ানমারের কোনো বিকার নেই৷ প্রত্যাবর্তন চুক্তির পরও তারা রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-হুমকি অব্যাহত রেখে সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে৷ দেখা দিয়েছে উত্তেজনাও৷

https://p.dw.com/p/2tXCj
Bangladesch Myanmar - Grenzgebiet Rohingya - Flüchtlinge
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতায় বিস্মিত শান্তিতে নোবেল জয়ী ইরানের শিরিন এবাদি, আয়ারল্যান্ডের মারেইড ম্যাগুয়ার এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান৷ তাঁরা বলেছেন, এই ইস্যুতে তাঁরা আর নীরব থাকবেন না৷ বিষয়টিকে তাঁরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে যেতে চান৷ বিচারের মুখোমুখি করতে চান হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে৷ শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ায় অং সান সুচি ভূমিকা না নিলে তাঁকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা৷

নোবেল বিজয়ী এই তিন নারী কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ করেছেন রবি, সোম ও মঙ্গলবার৷ তাঁরা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন৷ বুধবার ঢাকায় তাঁরা জানান, ‘‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা স্পষ্টই গণহত্যার শিকার৷ এর জন্য দায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷ স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে সুচিও এর দায় এড়াতে পারেন না৷''

তাঁরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন বুধবার৷ প্রধানমন্ত্রীকেও একই কথা বলেন তাঁরা৷ জানান, ‘‘রোহিঙ্গাদের হত্যা-নির্যাতনের দায় মিয়ানমারকেই নিতে হবে৷''

নাজমুল ইসলাম

নোম্যান্স ল্যান্ডে হুমকি

অবশ্য এতে মিয়ানমারের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না৷ এই নোবেলজয়ীরা বাংলাদেশে থাকার সময়ই মিয়ানমার তাদের সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে৷ তমব্রু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে (জিরো পয়েন্ট) আশ্রয় নেয়া কম-বেশি ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে তারা৷ তাদের হুমকির মুখে ভয় পেয়ে নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অর্ধেক পালিয়ে গেছেন৷ বাকিরা বাংলাদেশ সীমান্তে  ভিড় করছেন৷ বন্দরবনের সাংবাদিক নজরুল ইসলাম টিটো নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে ফিরে টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমানে সেনাবাহিনী মাইকিং করে তাদের নোম্যান্স ল্যান্ড ছাড়তে বলছে৷ ২০ ফেব্রুয়ারি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরও সীমান্তে মিয়ানমার সেনা সমাবেশ ঘটায়৷ নোম্যান্স ল্যান্ডের দিকে তারা ভারী অস্ত্রসস্ত্র তাক করে ভয় দেখায়৷ এরইমধ্যে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে৷ বাকিরা সীমান্তে ভিড় করেছে৷''

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘কোনোভাবেই নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না৷ আর মিয়ামনমার সীমান্ত নীতি ভঙ্গ করলে সমূচিত জবাব দেয়া হবে৷''

সীমান্তে সেনা সমাবেশ

এদিকে বিজিবি-র অতিরিক্ত মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মজিবুর রহমান বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘‘আজকে (১ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ তমব্রু বর্ডার পোস্ট ৩৪ ও ৩৫-এর মাঝামাঝি এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ১৫০ গজ অভ্যন্তরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷ তারা মিলিটারি প্যাটার্নের পিকআপের ট্রাক লরির মাধ্যমে সেখানে ভারি অস্ত্র স্থাপন করেছে৷ আমরাও সতর্ক অবস্থানে আছি৷ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি৷ ইতিমধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছি৷''

শহিদুল হক

গত নভেম্বরে মিয়ানমার সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে৷ এরপর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ফেরত নেয়ার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১,৬৭৩টি পরিবারের ৮,০৩২ জনের একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ৷ তারিখ নির্ধারিত না হলেও মিয়ানমার প্রথম দফায় ওই রোহিঙ্গাদের ফেরাত নিতে সম্মত হয়৷ এছাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান নেয়া ছ'হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার তাদের মতো করে ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলে৷ কিন্তু এরপর থেকেই নোম্যান্স ল্যান্ডে ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়৷ স্থানীয় সূত্র জানায়, এই অবস্থার মধ্যে গত তিন দিনে ৫০০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর হলো, প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখাইনে তাঁদের বাড়ি-ঘরের শেষ চিহ্নও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে৷

বাংলাদেশের প্রতিবাদ

মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে সেনা সমাবেশ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ-কে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়৷ ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব এম খোরশেদ আলম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র  দিয়ে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন বিষয়ে  জানতে চান৷ পত্রে বলা হয়, এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ভালো নয়৷

বিশ্লেষকদের অভিমত

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স এটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিয়ানমার যে সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে ,তার টার্গেট বাংলাদেশ নয় বলেই আমি মনে মনে করি৷ মিয়ানমার নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য এটা করেছে৷ তারা চায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ুক অথবা মিয়ানমারে ফিরে যাক৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যে ফেরত নেবে এবং নিলে সেটা কবে নেবে – তা আসলে নিশ্চিত নয়৷ তারা যে প্রক্রিয়াটা দীর্ঘায়িত করতে চায়, তা স্পষ্ট৷ কারণ খেয়াল করবেন রোহিঙ্গরা এখনো কিন্তু বাংলাদেশে আসছে৷''

মুনসি ফয়েজ

বাংলাদেশ সরকার তিন নোবেল বিজয়ীর সফরের পর তাঁদের ওপর তুষ্ট৷ সরকারের একটি সূত্র জানায়, ‘‘বাংলাদেশ চায় এই তিন নোবেলজয়ী যা দেখেছেন এবং যা মনে করেন তা যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেন৷ বাংলাদেশ প্রয়োজনে তাঁদের আরো তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে৷ বাংলাদেশ চায়, তাঁরা যেন আরো নোবেল বিজয়ীদের সম্পৃক্ত করে ধারাবাহিক ক্যাম্পেইন শুরু করেন৷''

ওই সূত্র জানায়, ‘‘বাংলাদেশ মনে করে তিন নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার যে বিচারের দাবি তুলেছেন, তা নতুন মাত্রা দেবে৷ বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবে৷''

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর (বিআইআইএসএস বা বিস) সভাপতি মুন্সি ফয়েজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কী চায়? বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গারা যাতে তাঁদের প্রাপ্ত অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারেন৷ তাই নোবেলজয়ীদের মতো বিশ্বের আরো যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন, তাঁরা যদি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান, তাঁদের জন্য কাজ করেন, তাহলে বাংলাদেশের লক্ষ্যপূরণ সহজ হবে৷ বাংলাদেশের কাজ হলো তাঁদের সাথে নিয়ে কূটনৈতিক চাপ আরো বাড়ানো৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি বুলডোজার দিয়ে লেভেল করে দিচ্ছে – এই তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা দরকার৷ তারা এটা করে থাকলে কেন করছে, কীভাবে করছে, তাও জানা দরকার৷ কারণ এই সময়ে তারা চাইলেও কিছু গোপন করতে পারবে না৷ তাছাড়া জিরো পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গারা ভয় পেয়ে চলে যাচ্ছেন না তাঁদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাও আমাদের বুঝতে হবে৷ মিয়ানমারের মধ্যে যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিকতার অভাব থাকে তাহলে আমাদের কাজ হলো, তারা যাতে আন্তরিক হয় সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করা৷''

গত বছরের আগস্ট থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন৷ তাঁদের আসা এখনো অব্যাহত আছে, যদিও মিয়ানমার তাঁদের ফেরত নেয়ার চুক্তি করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে৷ এর আগে থেকেই আরো চার লাখ রোহিঙ্গা আছেন বাংলাদেশে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য