সিরিয়ায় ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা বন্ধ
সিরিয়ার দামেস্ক শহরের শিশু হাসপাতালে ক্যানসার ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা ওষুধ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না৷ তবে এটা যে শুধুমাত্র সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে হচ্ছে, তা নয়৷
যুদ্ধাবস্থায় হাসপাতালের পরিস্থিতি
চিকিৎসা সেবায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একসময় বেশ সুনাম ছিল সিরিয়ার৷ কিন্তু ছয় বছরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ অর্ধেকেরও কম হাসপাতাল ঠিকমত কাজ করছে দেশটিতে৷ দামেস্কের হাসপাতালগুলোতে প্রতি সপ্তাহেই ভিড় করছে কমপক্ষে ২০০ শিশু, যাদের ৭০ ভাগই আসছে রাজধানীর বাইরে থেকে৷
নিষেধাজ্ঞার কারণে ওষুধপত্র অপ্রতুল
দামেস্কের শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে রোগীরা৷ স্থানীয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাবের কারণ হিসেবে সিরিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছে৷ কেননা বেশিরভাগ ওষুধপত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকেই আসতো সিরিয়ায়, যেগুলো তারা আর আসতে দিচ্ছে না দেশটিতে৷
ব্যয় কমিয়েছে সরকার
যুদ্ধ মানেই তা ব্যয়বহুল৷ আর এই ব্যয়ের কারণে সরকার স্বাস্থ্য খাতে বাজেট কমিয়েছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থের দাম পড়ে গেছে সিরিয়ায়৷ আর বিদেশি ওষুধ না পেয়ে রোগীরা দিন কাটাচ্ছে অসহায় অবস্থার মধ্যে৷ যুদ্ধ শুরুর আগে দেশে ব্যবহৃত ৯০ ভাগ ওষুধ নিজেরাই উৎপাদন করত সিরিয়া৷ তবে ক্যানসারের ওষুধগুলো বরাবরই আমদানি করতে হতো৷
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কম
একটি অসুস্থ শিশুর দেখভাল করছেন এক নার্স৷ সিরিয়ার অবস্থানরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরুর পর সিরীয় সরকার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট কমানোর কারণে বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে৷
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
সিরিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এলিজাবেথ হফ জানান, দেশটির উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্যানসারবিরোধী বিশেষ কিছু ওষুধ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না৷
চিকিৎসার জন্য রোগীদের অপেক্ষা
ক্যানসারের রোগী ফাহাদ মোবাইল ফোন নিয়ে খেলছে আর তার মা বসে আছেন বিছানায়৷ চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন এরা৷ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে সিরিয়ায়৷ তাই ওষুধপত্র না থাকায় ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা৷
চিকিৎসায় বিলম্ব
বেসরকারি সংস্থা ‘বাসমা’ দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ক্যানসারের ওষুধ কিনতে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷ সংস্থাটির নির্বাহী ব্যবস্থাপক রিমা সালেম বললেন, ‘‘যুদ্ধ শুরুর পর সাহায্যপ্রার্থী পরিবারের সংখ্যা ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে৷’’ কিন্তু চিকিৎসা শুরু হতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ সময়৷ তাই উদ্বিগ্ন সালেম জানান, ‘‘চিকিৎসা দিতে দেরি হলে যে কোনো দিন মারা যেতে পারে যে কোনো শিশু৷’’