1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিরিয়া পরিস্থিতি: মুখোমুখি পরাশক্তিরা!

২০ এপ্রিল ২০১৮

সিরিয়ার বারোয়ারি যুদ্ধের ময়দানে প্রতিনিয়ত উত্তেজনা বাড়ছে৷ সিরিয়ায় বিবাদমান বিভিন্ন পক্ষ একে অপরের অবস্থান নিয়ে উত্তপ্ত হুঁশিয়ারি বিনিময় করলেও, সরাসরি কেউ কারো প্রতি সামরিক আক্রমণে যায়নি!

https://p.dw.com/p/2wPbf
Syrien Armee nimmt Dumair ein
ছবি: picture-alliance/Photoshot/A. Safarjalani

সিরিয়ায় অ্যামেরিকার আক্রমণ নিয়ে যত কথাই বলুক না কেন রাশিয়া, শেষ পর্যন্ত কিন্তু সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি এই দু'টি দেশ৷ বরং এই সপ্তাহে হাওয়া উল্টোদিকেই বইছে৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে শুক্রবারই জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ৷

তবে তিনি বলেছেন, এর জন্য অ্যামেরিকার পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে রাশিয়া৷ আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুটিনকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ করেছিলেন মার্চ মাসে৷

গত ৭ এপ্রিল সিরিয়ায় পূর্ব গুটার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দুমায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ ওঠে৷ সেখানে প্রায় ৭০ জন শ্বাসকষ্টে মারা যায়৷ অসুস্থ হয় আরও পাঁচশ'র বেশি মানুষ৷

এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সিরিয়ার তিনটি রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার লক্ষ্য করে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স৷ জার্মানি ও তুরস্ক এ হামলা সমর্থন করলেও চীন, ইরান, জর্ডান ও ইরাক বিপক্ষে অবস্থান নেয়৷

রাশিয়া ১৪ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে এ হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলে৷ বলিভিয়া ও চীন ছাড়া ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে আর কেউ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি৷

এদিকে ওই হামলায় অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় ফ্রান্সের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া মর্যাদাপূর্ণ লেজিওঁ দ'নর খেতাব ফিরিয়ে দেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ৷

সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আসাদ বলেন, তিনি এমন কোনো দেশের পুরস্কার পরবেন না, যারা আমেরিকার ‘দাস'৷

অবশ্য আসাদকে দেওয়া এ খেতাব প্রত্যাহারে ‘আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম' শুরু হয়েছে, ফরাসি সরকারের এমন ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নিজেই তাঁর সম্মাননা ফেরত দিলেন৷

বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেই ফ্রেঞ্চ সরকারের কাছ থেকে লেজিওঁ দ'নরের সর্বোচ্চ পদক ‘গ্র্যান্ড ক্রসে' ভূষিত হয়েছিলেন আসাদ৷

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়া নিয়ে ইরান এবং অ্যামেরিকা সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনাও এখন চরমে৷ দু'টি দেশই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে একে অপরের উপস্থিতি নিয়ে হুমকি-ধামকি বিনিময় করলেও এখন পর্যন্ত সেটি সামরিক তৎপরতায় গড়ায়নি৷

সিরিয়ার ময়দানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষের সেনারা মার্কিন মদদপুষ্ট কুর্দি বাহিনী এবং তাদের বিমান ঘাঁটিতে হামলা করছে৷ আসাদের পক্ষের সেই সেনাদেরই লক্ষ্য করে আক্রমণ করছে অ্যামেরিকা৷ যদিও এখন পর্যন্ত তারা ইরানিয়ান রেভুলশনারি গার্ডের ওপর হামলা চালায়নি৷ ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড আসাদের পক্ষের যোদ্ধাদের এবং সিরিয়ার পক্ষের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি সহযোগিতা করছে৷

অন্যদিকে সিরিয়ায় নাক গলানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার সতর্ক করে আসলেও এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ইরানের মদদপুষ্ট যোদ্ধাদের অ্যামেরিকার সৈন্য বা দেশটির সমর্থনে থাকা সেনাদের সরাসরি আক্রমণের কোনও নির্দেশ বা ইঙ্গিত দেয়নি৷

অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ইরানের কট্টর সমালোচক জন বল্টনকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন৷

জাতিসংঘে অ্যামেরিকার দূত নিকি হ্যালি আগুনে ঘি ঢেলেছেন আরও বেশি৷ তিনি বলেছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে ইরানের অনুপ্রবেশ ঠেকানো ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্যের একটি৷

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মূল শত্রু দেশগুলোর একটি হচ্ছে ইসরায়েল৷ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, সিরিয়ার মাটিতে ইরানের বাহিনীকে আক্রমণের আগে ইসরায়েলকে মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের সাথে পরামর্শ করে নেয়ার ব্যাপারে বলেছে৷

ওয়াশিংটনে আরব সেন্টারের প্রধান জো ম্যাকারন বলেছেন, ‘‘আমরা এখন দেখছি আগ্রাসী এবং রক্ষণশীল উপদেষ্টাদের পরামর্শে অ্যামেরিকা সিরিয়ার ময়দানে নামছে৷ ইসরায়েলের ইন্ধনে অ্যামেরিকার ঐ যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার, যা সম্পূর্ণ বিপরীত৷

‘‘তবে ট্রাম্প নিজে পেন্টাগনকে নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছেন৷ ভবিষ্যতে হয়তো ইসরায়েলের লড়াই তাদের নিজেদেরই করতে হবে,'' বলেন তিনি৷

এদিকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটা অতিরঞ্জিত৷

ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের প্রফেসর স্কট লুকাস বলেন, ‘‘দু'পক্ষের (ইরান ও অ্যামেরিকা) মধ্যে চূড়ান্ত সংঘাতের কোনো সুযোগ নেই৷ কেননা দুপক্ষই যা পাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি দিতে হবে৷

‘‘আপনাকে এর জন্য প্রচুর সম্পদ নিয়োগ করতে হবে৷ এবং কেউই জানেনা এটা কতোদূর গড়াবে!'' বলেন লুকাস৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তেজনা টানটান থাকলেও সিরিয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সামরিক কোনও পদক্ষেপ নেবেনা অ্যামেরিকা, ইরান এবং রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো৷

এইচআই/জেডএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ, আল জাজিরা)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য