পাহাড়ে সাগরের ঢেউ!
২৩ নভেম্বর ২০১৩এ এমন এক প্রকল্প, যেখানে বোতাম টিপলেই ঢেউ আসে৷ প্রকল্পের প্রধান কারিন ফ্রিশ নিজেই সার্ফ করে দেখাচ্ছেন: ঢেউটি বেশ সমানভাবে বয়ে যাচ্ছে, সার্ফিং করার পক্ষে আদর্শ৷ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসেছে এই সাফল্য৷ ‘ওয়েভগার্ডেন' বা ‘তরঙ্গোদ্যান'-এর প্রতিষ্ঠাতা শোনালেন সে কাহিনি: ‘‘সারা বছর কোনো না কোনো সমস্যা লেগে থাকে৷ আমরা যখন ভাবছি, চমৎকার ঢেউ হচ্ছে, তখনই আবার কিছু একটা খারাপ হয়ে যায়৷''
প্রকল্পটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও উদ্ভাবক কারিন ফ্রিশ ও তাঁর স্প্যানিশ স্বামী ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে ডিজাইনটা বেচতে শুরু করেছেন৷ কারিনের ছোট ছেলেও এখানে সার্ফিং করতে ভালোবাসে৷ তার যখন সাত বছর বয়স, তখন তার বাবা-মা ঢেউ-এর ফিজিক্স নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করেন৷ অবশ্য ড্রেজার দিয়ে কাটা খাতে ঢেউ বয় অন্যভাবে৷
বিনিয়োগকারীর কোনো অভাব নেই
ঢেউ তৈরির প্রণালীটা ঠিক কীভাবে কাজ করে, সেটা ট্রেড সিক্রেট৷ প্রকল্পটিতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক মিলিয়ন ইউরো ঢালা হয়েছে৷ গোড়ায় সেই বিনিয়োগের কিছুটা আসে স্পেনের বাস্ক প্রদেশের সরকারের কাছ থেকে৷ আজও বিনিয়োগকারীর কোনো অভাব নেই৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় সার্ফবোর্ড নির্মাতা এখানে লোক পাঠান তাদের নতুন সার্ফবোর্ডগুলো টেস্ট করার জন্য৷ তারাও এই ‘ফেসিলিটি' দেখে চমৎকৃত৷ সার্ফবোর্ড নির্মাতা ‘পুকাস'-এর প্রতিনিধি আদুর লেতামেন্দিয়া বলেন, ‘‘আজ সকালে আমি নিজে সার্ফ করে দেখেছি – খুবই ভালো লেগেছে৷ ঢেউটা খুবই সমান আর তার গতিও অনেক বেশি৷ সাগরে ওরকম সমান ঢেউ হয় না৷ এখানে ঢেউটা পার্ফেক্ট – নানা আকৃতির ঢেউ, যার ফলে আরো জমিয়ে সার্ফ করা যায়৷''
ট্রেড সিক্রেটের এটুকু ফাঁস করা চলে যে, খাতের মাঝখানে একটি সেন্ট্রাল বার মাউন্ট করা আছে, যা বরাবর লাঙলের মতো ব্লেড বা ব্লেডেড শভেল-টি চলে যায় – সেটাই ঢেউ তৈরি করে৷ জার্মান স্থপতি ফিলিপ ফন বাউম এই ডিজাইনে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ তিনিই খাতের তলার প্রোফাইলটা ডিজাইন করেছেন৷ ঢেউ তৈরির শভেলটি নিয়েও উত্তরোত্তর গবেষণা চলেছে৷ প্রতিটি ঢেউ-এর মাপজোক রাখা হয়৷ ‘ওয়েভগার্ডেন'-এর স্থপতি ফিলিপ বাউম বলেন, ‘‘সত্যি বলতে কি, আমরা একটা ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা৷ আমরা কোনো কিছু কপি করতে পারি না, সব কিছু নিজেদেরই ডেভেলপ করতে হয়৷ আমরা কিন্তু বহুদূর এগিয়েছি এবং এখনই এই প্রণালী বাজারে ছাড়া যায়৷''
তরঙ্গোদ্যানের বাজার ভালো
অস্ট্রেলিয়ার এক খরিদ্দার ইতিমধ্যেই স্পেনে এসে পৌঁছেছেন৷ অ্যান্ড্রু গ্যারি রস ‘ডাউন আন্ডারে' পাঁচটি এই ধরনের ‘ওয়েভগার্ডেন' তৈরি করতে চান৷ তার এক একটি তৈরি করতেই এক কোটি ইউরো খরচ পড়বে৷ রস নিজেই সার্ফিং করতে ভালোবাসেন৷ এবার তিনি গোটা পরিবারের জন্য একটি ওয়েভগার্ডেন তৈরি করবেন৷ রস বলেন: ‘‘সাগরে যদি বড় বড় ঢেউ থাকে, তাহলে আমি নিশ্চয় সাগরের ঢেউ-এর উপরই সার্ফিং করব৷ কিন্তু আমার চার বছরের ছেলে আর আড়াই বছরের মেয়ে এই ওয়েভগার্ডেনেই সার্ফিং করবে৷''
কারিন ফ্রিশ আদতে স্টুটগার্টের বাসিন্দা৷ তিনি এবং তাঁর পরিবার নিজেরাও ঠিক তাই'ই করেন, যা ভবিষ্যতে ওয়েভগার্ডেনের খরিদ্দাররাও করবেন৷ ওয়েভগার্ডেনের খদ্দেরের যে কোনো অভাব হবে না, কারিন সে বিষয়ে নিশ্চিত৷ পানি খুব গভীর নয়, কাজেই কারোর ডোবার ভয় থাকার কথা নয়৷ পর্যটন শিল্পের অন্যান্য প্রকল্পেও ওয়েভগার্ডেন মূল আকর্ষণ হতে পারে৷ ‘ওয়েভগার্ডেন'-এর প্রতিষ্ঠাতা খোসেমা ওদ্রিওসোলা বলেন, ‘‘বিশ্বের যে সব শহরে সার্ফিং হয়, যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার সান সেবাস্টিয়ান কিংবা সান্টা ক্রুজ, তাদের সকলেরই চেষ্টা, পর্যটন শিল্পের জন্য সার্ফিং থেকে আর কতোটা প্রোমোশন পাওয়া যায়৷''
খোসেমা-র সাত বছরের ছেলে কাই-ও বলে, সে সাগর চেনে, কিন্তু এখানে সব কিছু অনেক বেশি পরিষ্কার৷ ঢেউগুলি পাইপ অবধি বয়ে যায়, সার্ফিং-এর জায়গাও বেশি থাকে৷ কৃত্রিম সার্ফিং-এর অন্যান্য নানা কনসেপ্ট রয়েছে, কিন্তু সেগুলো সবই কম্পিউটারের মডেল৷ হাতেকলম পরীক্ষা করে দেখাটা শুধু স্পেনের এই পাহাড়গুলোতেই সম্ভব৷