সাদ্দাম’কে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আমি দুঃখিত নই : টোনি ব্লেয়ার
৩০ জানুয়ারি ২০১০ব্লেয়ার বলেন, ‘‘সাদ্দাম'কে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যপারে তাঁর কোন দুঃখ নেই এবং প্রয়োজনে তিনি আবারো ঐ একই কাজ করবেন৷''
কেমন হল প্রথম দিনের জেরা
শুক্রবার লন্ডনে এই প্রথম, কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে একটি তদন্ত কমিটির সামনে হাজির করা হয় ব্লেয়ার'কে৷ যেখানে তাঁকে তিনি কেন ইরাক যুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তা জনসম্মুখে ব্যাখ্যা করতে হয়৷ শোনা যায়, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের পট প্রস্তুত করা এবং তার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে ব্লেয়ার'কে প্রায় ৬ ঘন্টার জেরা করেন স্যার জন সিলকোট৷
জেরার মুখে সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি কোনরকম ঝুঁকি নিতে চাই নি৷ আমার মনে হয়েছিল, ইরাক ১০ বছর ধরে বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছে৷ তাই তাকে বশ মানানো দরকার৷'' প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল৷
বুশ ব্লেয়ার সমঝোতা - এই প্রশ্ন কী উঠেছিল
উঠেছিল অবশ্যই৷ ব্লেয়ার ইরাক হামলার জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ-এর সঙ্গে গোপন সমঝোতা করার অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ সাদ্দাম হোসেন ৪৫ মিনিটের মধ্যে পরমাণু বা ‘গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র' ব্যবহার করতে সক্ষম বলে ব্লেয়ার যে দাবি করেছিলেন, তা সঠিক ছিল কিনা - এ প্রশ্ন করা হলে ব্লেয়ার বলেন, ‘‘এ সম্পর্কিত শিরোনাম সংশোধন করা হলে ভালো হয়৷ এছাড়া, যুদ্ধের ব্যাপারে মিথ্যাচার বা প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার কথাও অস্বীকার করেন ব্লেয়ার৷
ইরাক যুদ্ধকে ঘিরে ব্লেয়ারের ওপর তো যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের
সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার সাত বছর এবং গর্ডন ব্রাউনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের তিন বছর পরেও, বিষয়টি নিয়ে ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কমেনি৷ কারণ, ইরাক যুদ্ধ সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলপত্রে লেখা হয়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ‘নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে' যে সাদ্দাম হোসেনের কাছে ‘গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র' রয়েছে৷ অথচ, এ ধরনের কোনো অস্ত্রের অস্তিত্ত্বই পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায়নি৷ অতএব শুক্রবারও তদন্ত যেখানে চলছিল সেই ভবনের বাইরে ব্লেয়ারকে ‘যুদ্ধ অপরাধী' বলে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে মানুষ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্লেয়ারের জীবনী লেখক অ্যান্টনি শেলডন এ দিনটিকে ব্লেয়ার, ব্রিটেনের জনগণ এবং সারাবিশ্বে ব্রিটেনের নৈতিক যে রূপ রয়েছে তার জন্য একটি ‘ঘুরে দাঁড়ানোর দিন' হিসেবে আখ্যা দেন৷
উল্লেখ্য, ইরাক যুদ্ধে সাড়ে চার হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তটিই ব্লেয়ারের দশ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে সবচেয়ে সমালোচিত ঘটনা ছিল৷ ব্রিটেনের লেবার পার্টির কয়েকজন নেতার আশঙ্কা, এই জেরা তাঁদের দলের সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করবে৷ যা আসন্ন নির্বাচনে দলের সমর্থনে ভাটা ফেলতে পারে৷ আগামী জুনে ব্রিটেনে নির্বাচন হওয়ার কথা৷
প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ
সম্পাদনা : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়