1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবজি বেচে হাসপাতাল

২২ আগস্ট ২০১৫

২৩ বছর বয়সে স্বামী হারিয়েছিলেন সুবাসিনী৷ স্বামীর মৃত্যুর পরই ভেবেছিলেন তাঁদের মতো গরিবদের জন্য কিছু করবেন৷ পথে পথে সবজি বেচে সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে জমিয়ে একটা হাসপাতাল গড়ে ফেলেছেন সুবাসিনী মিস্ত্রী!

https://p.dw.com/p/1GJEk
Screenshot Humanity Hospital
ছবি: humanityhospital.org

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার হংসপুকুর এখন অনেকেই চেনেন৷ চেনেন সুবাসিনী মিস্ত্রী নামের অতি সাধারণ এক নারীর কারণে৷ অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুবাসিনীর বিয়ে হয়েছিল এক দিনমজুরের সঙ্গে৷ সুভাসিনীর বয়স তখন ১২৷ বাধ্য হয়ে বাল্যবিয়ে করা মেয়েটি বিধবাও হয় মাত্র ২৩ বছর বয়সে৷ প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান স্বামী!

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বেশ কয়েক বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে থালা-বাসন মেজেছেন৷ তাতে যে আয় হতো তার পুরোটা ব্যয় করেননি, এক পয়সাও হাতে থাকলে তা জমিয়েছেন সুবাসিনী৷ জমিয়েছেন একটি স্বপ্ন পূরণের জন্য৷ স্বামীর মৃত্যুর পরই যে ভেবেছিলেন, ‘‘সব গরিবকে আর এভাবে মরতে দেয়া যাবে না, গরিবের জন্য একটা কিছু করতে হবে৷''

Gemüsemarkt Indien
এ রকম সাধারণ সবজি বিক্রি করেই এতটা পথ হেঁটে গেছেন সুভাসিনী মিস্ত্রী...ছবি: CC/rachel in wonderland

ওই ‘একটা কিছু করা' মানে, একটা হাসপাতাল গড়া৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে থালাবাসন মেজে, সবজি কেটেকুটে দিয়ে যেটুকু আয় হয় তা থেকে কয় পয়সাই বা বাঁচে যে হাসপাতাল গড়বেন! আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো এমন চিন্তা করলে তাঁর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না৷ কিন্তু সুবাসিনী, সুবাসিনীর স্বপ্ন, তাঁর প্রতিজ্ঞাটা যে অনন্যসাধারণ৷ গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়ার সেই স্বপ্নটাকে কখনো ফিকে হতে দেননি সুবাসিনী৷

স্বামীর মৃত্যুর সময় দিনে মাত্র ৫ পয়সা আয় করতেন সুবাসিনী৷ ঘরভাড়া বাবদ দু'পয়সা দিতেন বাড়িওয়ালাকে, দু'পয়সা যেত খাওয়া-দাওয়ায় আর বাকি এক পয়সা জমাতেন৷ এক সময় শাক-সবজি বিক্রি শুরু করলেন৷ আয় কিছুটা বাড়লেও বিলাসিতার জন্য কখনো একটা পয়সাও ব্যয় করেননি৷

এভাবে অল্প অল্প করেই জমে যায় এক লাখ ভারতীয় মুদ্রা৷ সেই টাকায় হংসপুকুরে এক একর জমি কিনলেন৷ নিজের মাথা গোঁজার জন্য নয়, গরিবের চিকিৎসার জন্য৷ বড় ছেলে ততদিনে স্নাতক হয়েছে৷ দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছিলেন না বলে মেজ ছেলে অজয়কে অনাথ আশ্রমে দিয়েছিলেন সুবাসিনী৷ অজয় ততদিনে ডাক্তার হয়েছে৷ সুবাসিনী অজয়কেই বললেন, ৪০ বছর ধরে লালন করে আসা স্বপ্নটির কথা৷ শুরু হলো ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘরে গরিব রোগীদের চিকিৎসা৷

অজয়ের ডাক্তার বন্ধুরাও যোগ দিয়েছিলেন বিনা পারিশ্রমিকে গরিবদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজে৷ প্রথম দিনে বিনা খরচে চিকিৎসা পেয়েছিল ২৫২ জন মানুষ৷ এতগুলো মানুষকে সার বেঁধে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মৃত স্বামীর কথা মনে পড়েছিল, নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলেছিলেন সুবাসিনী মিস্ত্রী৷

এখন দুঃস্থ রোগীদের মুখে হাসি ফোটান সুবাসিনী৷ একজন সৎ, নিষ্ঠাবান মানুষের মানবকল্যাণের স্বপ্ন পূরণের সংকল্প এবং প্রয়াস দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন৷ ১৯৯৩ সালের সেই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটি তাই আজ আয়তন এবং খ্যাতিতে অনেক বড়৷ তিন একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুবাসিনীর স্বপ্নের সেই হাসপাতাল৷ ২৩ বছর বয়সে বৈধব্য বরণ করা সুবাসিনী, ঘরে ঘরে গিয়ে থালাবাসন মেজে, পথে পথে শাক-সবজি বিক্রি করে এক পয়সা দু'পয়সা করে জমানো সুবাসিনী তাঁর স্বপ্নের হাসপাতালটির নাম রেখেছেন, ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল'৷

এসিবি/ডিজি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান