1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিলখানা হত্যা মামলায় ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুল আলোচিত মামলার দ্বিতীয় ধাপ শেষ হলো৷ ২০০৯ সালে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়৷ ঐ মামলাতেই ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলো হাইকোর্ট৷

https://p.dw.com/p/2oL2l
ছবি: DW

নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে আটজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে খালাস দিয়েছে আদালত৷ এখন আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলে সাজা কার্যকর করা যাবে৷

মৃত্যুদণ্ড ছাড়া যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে৷ এছাড়া ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং খালাস পেয়েছেন ৪৯ জন৷ সোমবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেয়৷ বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার৷ আদালত এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে রায়ে বিভিন্ন সুপারিশও করা হয়েছে৷ এই মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৪৬ বিডিআর জওয়ানকে৷ মামলার অন্য চার আসামি বিচার চলাকালে মারা যান৷ আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা৷

এর আগে ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর এ মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেয় বিচারিক আদালত৷ এদের একজন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআরের সদস্য৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬ জনকে৷ সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরও ২৫৬ জন৷ আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন আসামি৷ অর্থাৎ সাজা হয় মোট ৫৬৮ জনের৷ হাইকোর্টে কোনো রায় পড়তে দু'দিন সময় লাগার বিয়ষটি অনেক আইনজীবীই নজিরবিহীন বলেছেন৷ এ মামলায় আদালত এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে৷ সম্পূর্ণ রায় প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার৷ আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলে, তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে৷ গণতন্ত্র ধ্বংস করাই ছিল বিদ্রোহের উদ্দেশ্য৷

হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত বড় একটা মামলা সেটা শুনানি করে শেষ করতে তো একটু সময় লাগবেই৷ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সবার কথাই আদালতকে শুনতে হয়৷ ফলে একটু বেশি সময় লেগেছে৷ যে কোনো মামলার বিচার শেষ করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷’’

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সবার কথাই আদালতকে শুনতে হয়: মাহবুবে আলম

রায় পড়তে গিয়ে বিচারপতি নজরুল বলেন, তৎকালীন বিডিআর-এর নিজস্ব গোয়েন্দারা কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা আগে জানতে পারেনি, সেই ব্যর্থতা খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি করা দরকার৷ তিনি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, কোনো সমস্যা এলে তা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে হবে৷ বিজিবির জওয়ানরা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে তা মীমাংসা করতে হবে এবং বিজিবিতে সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের মধ্যে পেশাদারি সম্পর্ক থাকতে হবে৷ নজরুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, কেন সে সময়ের বিডিআর ডাল-ভাত কর্মসূচি নিল? ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি যেন না নেওয়া হয়, সে ব্যাপারেও বিজিবিকে সতর্ক করেন এই বিচারপতি৷

আরেক বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বলেন, কোনো সেনা কর্মকর্তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে থাকবে না, এটাই ছিল বিদ্রোহে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মূল মনোভাব৷ তাই তিনি জওয়ানদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক (কলোনিয়াল) আমলের মতো ব্যবহার না করার কথা বলেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘একই দেশ৷ এখানে সবাই ভাই ভাই৷’’ আদালত পর্যবেক্ষণে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করেছেন৷ আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে৷ সীমান্তরায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে৷ কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর-এর কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন৷ এই কলঙ্কচিহ্ন তাদের অনেকদিন বয়ে বেড়াতে হবে৷ একইসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নজির ইতিহাসে নেই৷ সে কারণেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷