1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংলাপে মুখোমুখি ইউরোপ-বাংলাদেশ

দেবারতি গুহ২২ অক্টোবর ২০০৮

১৭ থেকে ১৯-শে অক্টোবর জার্মানির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর হ্যানোভারে অনুষ্ঠিত হলো তিনদিনব্যাপী নবম বাংলাদেশ সম্মেলন৷ সম্মেলনের বিষয় - সংলাপ ও মতবিনিময় : ইউরোপ এবং বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/Fezx
নবম বাংলাদেশ সম্মেলনে আলোচকরাছবি: Debarati Guha

অর্থাত্, নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ এবং জার্মানি তথা ইউরোপের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি নির্দিষ্ট করাই ছিল এ-সম্মেলনের মূল বিষয়৷ ঘটেছিল ইউরোপের প্রগতিশীল সামাজিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের উদার প্রগতিবাদীদের সংলাপ৷

Bangladesch Tagung Hannover 2008
সম্মেলনে অংশ নেন বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রর নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালছবি: Debarati Guha

২০০৮ সাল যেন বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল৷ রাজনীতির অচলাবস্থা, অর্থনীতির সংকট কাটবে কি কাটবে না, গণতন্ত্রের পথ অবাধ হবে কি না, এ-বছর যেন তারই একটি দিক নির্দেশনা আশা করছে বাংলাদেশের জনগণ, সাধারণ মানুষ৷ ২০০৬ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যে সংকট এসেছিল, জনগণ এখনও তার অনতিক্রান্ত বৃত্ত থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায় নি৷ তবে জনপ্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতার যে চরম অপব্যবহার সে সময় শুরু হয়েছিল, তার খানিকটা হলেও কাটাতে পেরেছে বাংলাদেশের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷

নির্বাচন কমিশনের সংশোধন করা হয়েছে৷ নতুন ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে৷ ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড দেওয়া হয়েছে৷ এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনেরও পুনর্গঠন করা হয়েছে৷ আর আগামী ১৮-ই ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশে৷ ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি নিবন্ধনের জন্য গঠনতন্ত্র জমা দিতে শুরু করেছে৷ শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি-ই নয়, প্রায় ৩৭ বছর পর এই প্রথম, বাংলাদেশের সংবিধান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে জামায়েত ইসলামীও৷

কাজেই আশার আলো যে একেবারেই নেই - তা বলা যায় না৷ তবে, ইউরোপ যেন এখনও কিছুটা সন্দিহান৷ বাংলাদেশের সামনে তাই তারা তুলে ধরেছে হাজারো প্রশ্ন৷ সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশকে নিয়ে ইউরোপের মূল উদ্বেগ কি? সম্মেলনে উপস্থিত জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের সবুজ দলের মুখপাত্র থিলো হপের কথায় : আমার মতে, এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের একান্ত কর্তব্য৷ তবে শুধু ইউরোপীয় পার্লামেন্টেরই নয়, যুক্তরাজ্য, জার্মানি সহ ইউরোপের অন্যান্য জাতীয় পার্লামেন্টেরও এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো উচিত্৷ নির্বাচনে বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম কর্তব্য হবে একটি সুষ্ঠু ও মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা৷ যাতে তারা সব রকম সংবাদমাধ্যমগুলির স্বাধীনতা রক্ষা করবে এবং নির্বাচন ফলাফল যাই হোক না কেন - তা তারা মেনে নেবে৷

Bangladesch Tagung Hannover 2008
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের একাংশছবি: Debarati Guha

অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন কাম্য অবশ্য সবারই৷ তা সে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষই হন, বা ইউরোপবাসী প্রবাসী বাঙালী অথবা ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠন৷ তাই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তাদের একমাত্র শর্ত - নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে৷ কিন্তু, মানবাধিকার ? ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে সব ঘটনা ঘটেছিল - তার কি পুনরাবৃত্তি হতে পারে ?

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ফোরামের কর্মকর্তা বের্নহার্ড হ্যার্টলাইন জানান : এর জন্যই আমরা আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবো৷ আমরা লক্ষ্য রাখবো নির্বাচন চলাকালে বা নির্বাচন পরবর্তী সময় যাতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়৷ তবে এরপরেও যদি সে রকম কোন ঘটনা ঘটে, আমরা চেষ্টা করবো বিশ্বসমাজের সামনে তা তুলে ধরতে৷ ২০০১ সালেও আমরা সে চেষ্টাই করেছি৷ সে সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে না পারলেও, এবার আমরা আগে থেকেই এ-ব্যাপারে প্রস্তুত থাকবো৷

কিন্তু, এরপরও সংশয় দূর হয় না৷ কারণ, বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকার গত দু-বছর যাবত ক্ষমতায় রয়েছে৷ জরুরি অবস্থা এখনও চালু আছে দেশে৷ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলে গেছে৷ দূর্নীতিবাজরা আবার ছাড়া পাচ্ছে একের পর এক৷ এমতাবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কি আদৌ সম্ভব হবে ?

এ-সন্দেহ এখনো থেকে গেলেও, সংলাপ এবং মতবিনিময়ের গুরুত্বকে স্বীকার করলেন সকলেই৷ তাঁদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অবাধ এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক৷ ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৮ - গত চোদ্দ বছর যাবত বাংলাদেশের এবং ইউরোপের সচেতন মানুষদের একটি ফোরামে নিয়ে আসাই ছিল হ্যানোভার-সম্মেলনের আসল উদ্দেশ্য৷ তাই সম্মেলনের অন্যতম সংগঠক সরাফ উদ্দীন আহমেদের কথায় - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য ইউরোপের আর্থিক সহযোগিতা মূল ব্যাপার নয়, বরং এই সংলাপ দেশে স্বৈরতন্ত্র এবং মৌলবাদের উত্থানের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেই বলা যাবে যে সংলাপ সার্থক হয়েছে৷