সংস্কারের ফলে ফ্রান্সে সংকট
১৭ নভেম্বর ২০১৭জার্মানির মারেভা রানফটল চিরকাল প্যারিসে গিয়ে থাকার স্বপ্ন দেখেছেন৷ আট মাস আগে তিনি সেখানে একটা কাফে খুলেছেন৷ কিন্তু প্যারিসে ছোট ব্যবসা চালানো কতটা কঠিন, সেটা তিনি ভাবতে পারেননি৷ বিশেষ করে কর্মী নিয়োগ করে তাঁদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না৷ মারেভা বলেন, ‘‘সমস্যা হলো, ফ্রান্সে কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে কড়া নিয়ম রয়েছে৷ দু'মাস পরেও পেস্ট্রি তৈরির এক কারিগর বড়ই ধীরে কাজ করছিলেন৷ তাই তাঁকে ছাঁটাই করতে হয়৷ এর বেশি সময় রাখলেই তাঁর চাকরি পাকা হয়ে যেত৷ কাজে উন্নতি না করলেও বাধ্য হয়ে তাঁকে রাখতে হতো৷''
প্রস্তাবিত সংস্কার সত্ত্বেও কর্মী ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম বজায় থাকবে৷ তবে নতুন নিয়মের আওতায় স্বল্প সময়ের চাকুরির চুক্তি সম্ভব হবে৷ নিয়োগকারীরাও কর্মীদের যোগ্যতা যাচাই করার যথেষ্ট সময় পাবেন৷ তাঁরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানালেও শ্রমিক সংগঠনের অনেক অ্যাক্টিভিস্ট কিন্তু এর ফলে প্রমাদ গুনছেন৷ সিজিটি শ্রমিক সংগঠনের কাটরিন পেরে বলেন, ‘‘এর ফলে আমরা এক ধাক্কায় বিংশ শতাব্দীর শুরুতে শ্রমিকদের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি৷ নিয়োগকারীরা হিসেব করে কর্মী ছাঁটাইয়ের মূল্যায়ন করতে পারবেন৷ সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তাঁরা অভিজ্ঞ ও বেশি খরচের কর্মীদের ছাঁটাই করে তাঁদের জায়গায় সস্তায় তরুণ কর্মীদের নিয়োগ করতে পারবেন৷''
কট্টরপন্থি সিজিটি ইউনিয়ন এর মধ্যেই বড় আকারের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে৷ এখনো পর্যন্ত অবশ্য বেশিরভাগ ইউনিয়ন তাদের এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না৷ অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, এতে বিস্ময়ের কোনো কারণ নেই, কারণ পরিকল্পিত সংস্কারগুলি তেমন জোরালো নয়৷ উলটে তারা আরও পরিবর্তন দেখতে চায়৷ অর্থনীতিবিদ মিশেল রুইমি বলেন, ‘‘বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিতে করের ক্ষেত্রে আরও ছাড়ের প্রয়োজন৷ সরকারকেও মজুরির সঙ্গে যুক্ত আনুষঙ্গিক ব্যয় কমাতে হবে৷ সেইসঙ্গে প্রশিক্ষণ ও ধারাবাহিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে৷ একমাত্র এভাবেই প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকে থাকতে পারবে৷''
মারেভা রানফটল-ও আশা করছেন, যে প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফার সংস্কারও কার্যকর হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই কর্মী রয়েছে৷ চাইলেও তিন জন রাখার সামর্থ্য নেই৷ মজুরির আনুষঙ্গিক ব্যয় বড্ড বেশি৷''
মজুরি নয়, শ্রমিকদের জন্য এমন ব্যয় কমাতে ও ছাঁটাই সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করতে আরও সংস্কারের প্রস্তুতি চলছে৷ তবে ফ্রান্সের ইউনিয়নগুলি বিনা সংগ্রামে সে সব মেনে নেবে, এমনটা আশা করা কঠিন৷
আন্দ্রে মায়ার/এসবি