1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুরু হবে মরদেহের পরিচয় জানার কাজ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ মার্চ ২০১৮

ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে৷মরদেহের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কাজ শুরু হবে৷ তবে হতাহতের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/2uSdV
Nepal Flugzeugabsturz in Kathmandu
ছবি: Reuters/N. Chitrakar

নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ৪৯ জনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে৷ শনিবার থেকে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার কাজ শুরু হবে৷ পরিচয় স্বাভাবিকভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে৷

নেপালের কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের মেডিক্যাল টিমের ফরেনসিক এক্সপার্ট ড. সোহেল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে ওই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘‘যাঁদের পরিচয় সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে না, তাঁদের পরিচয় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে৷ লাশের অবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছে ৮-১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে৷''

ডা. সোহেল মাহমুদ

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় আমরা নেপালের হাসপাতালে মোট ৪৯টি মরদেহ পেয়েছি৷ এর বাইরে আর কোনো মরদেহ আমরা পাইনি৷ বৃহস্পতি ও শুক্রবার আমরা ৪৯টি মরদেহেরই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি৷ ৫১ জন নিহতের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও নেপালের হাসপাতালে আমরা ৪৯টি লাশই পেয়েছি৷ নেপালের চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরা একযোগে কাজ করছি৷''

এখনও পর্যন্ত কোনো নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘‘না কারুর পরিচয়ই নিশ্চিত হয়নি৷ পরিচয় নিশ্চিতের কাজটিই আমরা শনিবার থেকে শুরু করব আশা করছি৷''

ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার আগে ডা. সোহেল মাহমুদ কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মেডিক্যাল ও ফরেনসিক এক্সপার্টদের এক সংবাদ সম্মেলনে সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন৷ সেখানে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চিকিৎসক দলের সদস্যরা ছাড়াও নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস উপস্থিত ছিলেন৷

আশিক হোসেন

প্রেস বিফিংটি কাভার করার পর বাংলাদেশের ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সংবাদিক আশিক হোসেন টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শনিবার নেপালে সাপ্তাহিক ছুটি৷ সেক্ষেত্রে লাশ শনাক্ত করার কাজ রবিবার থেকেও শুরু হতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘নেপালের চিকিৎসকরাই আগে ময়নাতদন্তের কাজ শুরু করেছেন৷ বাংলাদেশের টিম বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন৷ আমি নেপালের ফরেনসিক দলের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ তারা এখনো নিহতদের কারুরই পরিচয় প্রকাশ করেনি৷ নেপালের নিয়ম হলো সবার ময়নাতদন্ত শেষ করে শনাক্ত করার কাজ শুরু করা৷''

শারমিন জাহান

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সব লাশ ত্রিভূবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হসপিটাল যা টিচিং হসপিটাল নামে পরিচত সেখানকার মর্গে রাখা হয়েছে৷ অন্য কোনো হাসপাতালে কোনো লাশ নেই৷ সেই হিসেবে মোট লাশ ৪৯টি৷ এরমধ্যে বাংলাদেশের ২৬ জন, নেপালের ২২ এবং  চীনের একজন নাগরিকের লাশ রয়েছে৷ এর বাইরে কোনো লাশ থাকার কথা আমাদের নেপালের কোনো কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি৷''

তিনি জানান, ‘‘৪৯টি মরদেহের ময়নাতদন্ত করার সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে৷ নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে রক্ত, চুল, হাড় ও দাঁতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷''

ডিএনএ টেস্ট ঢাকার সিআইডিতে

বুধবার বাংলাদেশ থেকে নয় সদস্যের ফরেনসিক ও ডিএনএ এক্সপার্টদের একটি দল নেপালে যায়৷ বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দু'জন কর্মকর্তাও নেপাল গেছেন৷ সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার শারমিন জাহান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নেপাল থেকে ডিএনএ-র নমুনা নিয়ে আসার পর তা  সিআইডি-র ফরেনসিক ল্যাবেই ম্যাচ করা হবে৷ নেপাল থেকে এই ডিএনএ-র নমুনা আনায় কিছুটা জটিলতা আছে৷ তাই এ জন্য সময় লাগতে পারে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের টিম এরইমধ্যে সময় বেশি লাগার কথা জানিয়েছে৷ কিন্তু ঠিক কতদিন লাগতে পারে তারা এখনো তা জানায়নি৷''

বাংলাদেশের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এনএফডিপিএল) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রক্ত বা মুখের লালা থেকে ডিএনএ প্রোফাইল একদিনেও করা সম্ভব৷ কিন্তু যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে ডিএনএ টেস্টের জন্য ভিকটিমের মরদেহের দাঁত ও হাড় নমুনা হিসাবে সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল করা হয়৷ দাঁত ও হাড় থেকে ডিএনএ প্রোফাইল করা সময়ের ব্যাপার৷ ছ'মাসও লাগতে পারে৷ সাধারণত নিহতদের বাবা-মা, সন্তান, ভাই-বোনের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে ম্যাচ করে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়৷''

এদিকে আহত ১০ জন বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজন নেপালের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ইতিমধ্যে৷ বৃহস্পতি ও শনিবার – এই দু'দিনে চারজন বাংলাদেশে ফিরেছেন৷ আর একজনকে নেপাল থেকেই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে৷

ক্ষতিপূরণ

নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে হতাহতের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট৷ তারা জানায়, ১৯৯৯-এর মন্ট্রিয়াল চুক্তিতে বাংলাদেশ ও নেপালের স্বাক্ষরের বিষয়টি বিলম্বিত হওয়ায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে৷ ১৯৯৯ সালের ২৮ মে বাংলাদেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেনি৷ আর নেপাল এখনও স্বাক্ষরই করেনি৷ ২০১০ সালে উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত সই করেনি তারা৷ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে৷

আশীষ কুমার মজুমদার

মন্ট্রিয়াল চুক্তির ২১নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নিহত যাত্রীদের প্রত্যেকের জন্য এয়ারলাইন্স ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২৬ ডলার দেবে৷ সব এয়ারলাইন্সই এই ক্ষতিপূরণের জন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে বীমা করে থাকে৷ যাত্রী ও তাঁদের পরিবারকে এই ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে আগেই জানাতে হয়৷ তবে নেপাল ওয়ার্স কনভেনশনে স্বাক্ষর করায় এয়ারলাইন্সকে এখন প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ২০ হাজার ডলার দিতে হবে৷ দেশটির বীমা প্রতিষ্ঠান সাগমাথার কর্মকর্তা সুভাষ দিক্ষিত বলেন, ‘‘এমন দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে দু'রকম নীতির মধ্যে পড়তে হবে নেপালকে৷''

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স৷ আর এভিয়েশন বীমার আওতায় ইউএস-বাংলার যাত্রীসহ সম্পদের সব ঝুঁকি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স৷ এছাড়াও আন্তর্জাতিক এভিয়েশন বীমা করা হয়েছে ‘কে এম দাস্তুর' নামের একটি ব্রিটিশ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে৷ দুর্ঘটনার পরই এই দু'টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য