1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ শীতের সময়টা কবি-সাহিত্যিকদেরও পছন্দ'

৯ জানুয়ারি ২০১৮

শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশে আগে যে উন্মুক্ত সংস্কৃতির পরিবেশ ছিল, এখন সেটা নেই৷ তবে শীত এখনো কবি-সাহিত্যিকদের পছন্দ৷

https://p.dw.com/p/2qQMy
Bangladesch BG Bildergalerie Gesangsaufführung
ছবি: DW/Mustafiz Mamun

বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে একসময় শীতকালে অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো৷ কিন্তু এখন সেই সংখ্যা কমে গেছে৷ ডয়চে ভেলেকে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন ড. ইসলাম৷ ‘‘এখন তো আর গ্রামদেশে ঐগুলি বেশি দেখা যায় না৷ তার কারণ হচ্ছে আগে যে উন্মুক্ত একটা সংস্কৃতির পরিবেশ ছিল, এখন সেটা নেই৷ এখন অনেকটাই আমরা রক্ষণশীলতার ভেতরে পড়ে গেছি৷ এখন অনেকে ছেলে-মেয়ের অংশগ্রহণে কোনো কিছু করাকে নিরুৎসাহিত করেন৷ এখন ধর্মীয় উৎসবগুলি বেশি জাঁকজমক দিয়ে হয়,'' বলেন তিনি৷

তবে রক্ষণশীলতাই সাংস্কৃতিক চর্চা কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়, বলে জানান ইংরেজির এই অধ্যাপক৷ গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নও একটি বড় কারণ বলে মনে হয় তাঁর৷ ‘‘এখন অনেক মানুষের বাড়িতে টেলিভিশন এসে গেছে, অনেক মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে৷ ফলে সেই মানুষগুলি আর মাঠে গিয়ে রাতভর যাত্রাপালা দেখার উৎসাহ পায় না,'' মনে করেন অধ্যাপক ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে পালা-পর্বনে যে সমস্ত অনুষ্ঠান হত গ্রামে, সেগুলো খুবই ক্ষুদ্র পর্যায়ে হতো, কিন্তু গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে সেটি অনেকটাই সাড়া তুলতো৷ এখন টেলিভিশন, ইন্টারনেট এবং ফেসবুক এসে যাওয়ায় ঐ তাড়াটুকু মানুষ আর অনুভব করে না৷''

‘রক্ষণশীলতা বাড়ছে বলে সাংস্কৃতিক চর্চা কমছে'

ড. ইসলাম বলেন, এখন বেশিরভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ আসায় গ্রামের মানুষের জীবন শহরের মতো হয়ে গেছে৷ ‘‘আগে গ্রামের মানুষ মনে করতেন, কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই সারা বছরের সম্পদ৷ ফলে সবাই সেগুলোতে যেতেন৷ কিন্তু এখন টেলিভিশনে সব পাওয়া যাচ্ছে৷''

অবশ্য এই পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন নন তিনি৷ কিছুদিনের জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা কমে গেলেও আবার তা ফিরে আসবে বলে আশাবাদী এই শিক্ষাবিদ৷ ‘‘সংস্কৃতির একটা শক্তি হচ্ছে, সংস্কৃতি স্মৃতিনির্ভর৷ মানুষের স্মৃতির উপর সংস্কৃতি বেঁচে থাকে৷ সেজন্য অনেক পুরনো সংস্কৃতি আবার নতুন করে হাজির হয়৷ গত শীতে আমি আবাহনীর মাঠে দেখলাম কয়েকজন ছেলে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, আর সেখানে সব বুড়োরা হাজির হয়েছেন৷ তাঁরা কিন্তু স্মৃতি থেকেই সেখানে গিয়েছেন৷ অর্থাৎ সংস্কৃতি কখনই ভুলে যাওয়ার বিষয় না৷ যে সংস্কৃতি সকলের অংশগ্রহণে একসময় তৈরি হয়েছিল, এখন তার উপর যতই বিপদ আসুক, তাকে যতটাই অবহেলিত করে রাখা হোক না কেন, সেটি আবার ফিরে আসবে,'' বলেন অধ্যাপক ইসলাম৷

অবশ্য সব সংস্কৃতি যে ফিরে আসে তাও মনে করেন না এই সাহিত্যিক৷ তবে পুরোপুরি না আসলেও সংস্কৃতি বিবর্তিত হয়ে আসে৷ ‘‘যেমন ধরুন আমাদের পল্লিগীতিটা যদি ফিউশন মিউজিকের মধ্য দিয়েও আসে মন্দ কী?,'' বলেন ড. ইসলাম৷

সাহিত্যে শীত

সাহিত্যে শীত বলতে সাধারণত জরাজীর্ণ একটা সময়কে বোঝায়৷ কিন্তু শীতের একটা আনন্দও আছে, বলে মনে করেন অধ্যাপক ইসলাম৷ ‘‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে; পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে' গানের মাধ্যমে শীতের দারুণ একটা আনন্দের বিষয় সঞ্চারিত করেছেন৷''

শীত নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শীতের সময়টা কুয়াশার জন্য একটু রহস্যঘেরা থাকে৷ তাই যখনই কোনো রহস্যঘেরা আবহ তৈরি করতে হয় তখন মানুষ শীতের কাছে ফিরে যায়৷ ‘‘আমি আমাদের পেইন্টিংয়েও দেখেছি শীতের উপস্থিতি৷ আমাদের কাইয়ুম চৌধুরী শীতের ছবি এঁকেছেন, সফিউদ্দিন আহমেদ সাহেবের ‘শীত' নামে একটা ছবিই আছে,'' জানান অধ্যাপক ইসলাম৷ শীতের সময় প্রকৃতি যে ঘোমটা পরে বসে থাকে, কবি-সাহিত্যিকদের তা পছন্দ৷ তাই তাঁরা শীতকাল নিয়ে লেখালেখি করেন৷

পশ্চিমে যেভাবে শীতকে আঁকা হয়, বাংলাদেশে তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তাপ নিয়ে, আনন্দ নিয়ে আঁকা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘কারণ আমাদের জন্য শীত একটা খুব গতিশীল ও বিপরীতধর্মী ঋতু, জুবুথুবু কোনো ঋতু বটেই নয়৷''

ইংরেজি কবি শেলি তাঁর এক কবিতায় শীতকে আশাবাদের ঋতু হিসেবেও তুলে ধরেছেন৷ কবিতায় তিনি লিখেছেন, ‘‘ও, ভিন্ড, ইফ ভিন্টার কামস্, ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড?'' অর্থাৎ ‘‘যদি শীত আসে, বসন্ত কি খুব দূরে থাকতে পারে?''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য