শিশুর চোখে ঘুম নেই কেন?
শিশুর ভালো ঘুম না হলে ওর স্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি মা-বাবা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারে না৷ ঘুম তো সকলের জন্যই জরুরি৷ আর ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজন অভ্যাস গড়ে তোলা এবং তা একেবারে শিশু বয়স থেকেই৷ কীভাবে করবেন তা জেনে নিন৷
শিশু বয়স থেকেই ঘুমের ‘ট্রেনিং’ প্রয়োজন
ঘুমের সমস্যা নিয়ে কোনো কথা হলে মানুষ ধরেই নেয় যে, তা বড়দের ব্যাপার৷ তবে ঘুমের অভ্যাস কিন্তু তৈরি করতে হয় শৈশবেই৷ না হলে পরে বা বড় হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়৷ কারণ, সুস্থ থাকার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি৷ তাই যে কোনো মানুষেরই ভালো ঘুমের জন্য শৈশব থেকেই ‘ট্রেনিং’ বা নিয়মিত অভ্যাস করা প্রয়োজন বলে জানান জার্মানির শিশু বিশেষজ্ঞরা৷
নিরিবিলি পরিবেশ
একেবারে অন্ধকার ঘরে শিশুরা ঘুমোতে বা একা থাকতে ভয় পায়৷ তাই শিশুর ঘরে রাতে একটি ‘ডিম লাইট’ জ্বালিয়ে রাখা কিংবা দরজা একটু ফাঁক রাখা জরুরি৷ দরজাটা ফাঁক করে রাখলে পাশের ঘর থেকে কিছুটা আলো বা হালকা শব্দ আসতে পারে৷ এর ফলে শিশু ভয় না পেয়ে সেভাবেই ঘুমাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে৷
টেডি বেয়ার বা কাপড়ের খেলনা
শিশুর জন্মের পর থেকেই ওর বিছানার পাশে একটি টেডি বেয়ার বা কাপড়ের তৈরি কোনো খেলনা রাখুন৷ ইচ্ছে করলেই যেন শিশুটি তা ওর বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে ধরতে পারে৷ তবে খেলনার কাপড় যেন ‘অ্যান্টি অ্যালার্জি’ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷
মিউজিক বা গান
ফিতা ধরে হালকা টান দিলেই মিউজিক বা গান বাজে, এরকম একটি রঙিন খেলনা ঘড়ি শিশুর বিছানার ওপর ঝুলিয়ে রাখতে পারেন৷ ঘুম ভেঙে গেলে যে শিশু কান্না শুরু করে, তা থেকে তাকে দূরে রাখার জন্য বেশ কাজে দেয় এই খেলনা ঘড়ি৷
প্রথমেই কোলে তুলবেন না
শিশু বিছানায় একটু কাঁদলেই অনেকে সাথে সাথে কোলে তুলে নেয়৷ আসলে তা না করে প্রথমে শিশুর গায়ে বা মাথায় একটু হালকাভাবে হাত বুলিয়ে দিন, কিংবা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে আদর করে কিছু বলুন, দেখবেন তাতেই হয়তো শিশু আবার ঘুমিয়ে যাবে৷ এভাবে কাজ না হলে অবশ্যই কোলে তুলে নিতে হবে৷
সুশৃঙ্খল জীবন যাপন
জার্মানরা বিশ্বে সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে পরিচিত৷ জার্মানিতে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, ‘অর্ডনুং ইস্ট ডাস হালবে লেবেন’, যার অর্থাৎ নিয়মমাফিক চললে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়৷ প্রতিদিন একই সময়ে একই কাজ করা হলে মানুষ সেভাবেই কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে যায়৷ তাই শিশু বয়স থেকেই ঘুম, খাওয়া-দাওয়া বা বই পড়ার মতো জরুরি কিছু বিষয়ে অভ্যাস তৈরি করা উচিত৷ পরবর্তী জীবনে এসবের সুবিধা পাওয়া যায়৷
শিশুকে ‘পান’ করান
শিশু যেন দিনের বেলায় যথেষ্ট ক্যালোরিযুক্ত খাবার খায় এবং তরল পান করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ কারণ, ক্যালোরি ও পানির অভাবেও অনেক সময় শিশুর ঘুম ভেঙে যেতে পারে বা সময়মতো ঘুম না আসতে পারে৷ তাছাড়া দিনের বেলায় ভীতিকর কোনো ঘটনা দেখলেও রাতে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে৷
জার্মানিতে যা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়
জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে রাত দশটা- সাড়ে দশটার দিকে, অর্থাৎ বেশ দেরিতে অন্ধকার হয়৷ অনেক মা-বাবা অন্ধকার হওয়ার আগেই বাচ্চার ঘরের জানালার শাটার ফেলে দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়৷ এর ফলে শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম হয় এবং পরের দিন সকালে সময়মতো উঠে কিন্ডারগার্টেনে যেতে পারে৷