1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রবীন্দ্রসংগীত

১২ এপ্রিল ২০১২

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিশ্বভারতী৷ আর সেই দিন, দেশ-বিদেশের পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে ‘দেশিকোত্তম' উপাধি দেবে তারা৷ এঁদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সনজীদা খাতুন৷

https://p.dw.com/p/14bqD
ছবি: DW

বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রবীন্দ্রসংগীতের সাধনা এবং তার প্রচার-প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য এই সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দেশিকোত্তম' দেওয়া হচ্ছে সনজীদা খাতুনকে৷ এ কথা শোনার পর, কেমন লাগছে তাঁর? খানিকটা হাসির সুরেই সনজীদা জানান, ‘‘বিশ্বভারতী থেকেই আমি এমএ পাস করেছি, পিএইচডি করেছি৷ তাই এখন ওখান থেকে এত বড় সম্মান আমার জন্য অভাবনীয়৷''

স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রসংগীতের প্রভাব

বলা বাহুল্য, স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল রবীন্দ্রসংগীত৷ আর সেই বাধা ভেঙেছিলেন যাঁরা, সনজীদা খাতুন তাঁদের মধ্যে অন্যতম৷ মুক্তিযুদ্ধের সময়, বিশেষ করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ছিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার৷ সনজীদা নিজের কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আমাদের কোনো আশ্রয় ছিল না৷ একুশে ফেব্রুয়ারির যে গান গাইবো, সেই গানও রবীন্দ্রনাথের গানে খুঁজে গেলাম৷ ‘কে সে যায় ফিরে ফিরে, আকুল নয়ন নীড়ে'৷ ‘সোনার বাংলা' এইভাবে গেয়ে গেয়েই তো আমাদের জাতীয় সংগীত হয়ে উঠেছে৷ পয়লা বৈশাখেও আমরা অনেক রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করতাম৷ আসলে এ দিনটি বাংলাদেশের মানুষকে তার জাতীয় সত্ত্বা বিষয়ে সচেতন করা এবং জাতীয়তাবোধে আপন সংস্কৃতির প্রতি নিবেদনে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার দিন৷''

Bangladeshi singer Dr. Sanjida Khatun
‘একুশে ফেব্রুয়ারির যে গান গাইবো, সেই গানও রবীন্দ্রনাথের গানে খুঁজে গেলাম’ছবি: DW

রবীন্দ্রনাথের গান আজ আর ঢাকা কেন্দ্রিক নয়

আজকের বাংলাদেশে অবশ্য রবীন্দ্রসংগীতের আবহটি পৌঁছে গেছে মফস্বল শহরগুলিতেও৷ তবে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে বর্তমান প্রজন্ম - বাংলাদেশে এ গানকে যাঁরা সযত্নে লালন করেছেন, করছেন, সনজীদা তাঁদের মধ্যে একেবারে প্রথমদিককার একজন৷ তিনি বললেন, ‘‘যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, আমরা ওপারে চলে গেলাম৷ তখনও আমরা এমন কতগুলি গান খুঁজে পেলাম, যেন আমাদেরই কথা৷ যেমন, ‘দেশে দেশে ভ্রমি তব দুঃখ গান গাহিয়ে / নগরে প্রান্তরে বনে বনে অশ্রু ঝরে দু'নয়নে / পাশান হৃদয় কাঁদে সে কাহিনি শুনিয়ে'৷ এভাবে, আমরা বলি, রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে আমরা যুদ্ধ করেছি৷''

ছায়ানট গড়ার পিছনে ছিল বাঙালিকে বাঙালি করার সংকল্প

বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, প্রয়াত ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন অত্যন্ত উদার স্বভাবের৷ তাঁরই মেয়ে সনজীদার জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ঠা এপ্রিল৷ ফলে বাবার কাছ থেকে উৎসাহের অভাব ছিল না কন্যা সনজীদার৷ রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন, গেয়েছেন৷ পরবর্তীকালে শিখিয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন ‘ছায়ানট'৷ এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পিছনে কী কাজ করছিল? সনজীদা বলেন, ‘‘১৯৬১ সালে যখন রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ, তখন আমরা সবাই মিলে বড় কষ্টে সেই অনুষ্ঠানগুলো করে গেছি৷ তারপর আমাদের মনে হয়েছে, একটা কোনো সংগঠনে সংহত হয়ে সবাই কাজ না করলে, দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না৷ ছায়ানটে আমরা প্রথম দিকে শ্রোতার আসর করেছি, যাতে বাঙালি বন্ধুরা সেখানে বাংলা গানগুলো শুনে উদ্বুদ্ধ হতে পারে৷ এরপর এক সময় বুঝেছি যে, শুধু শ্রোতার আসরে চলবে না৷ একটা সংগীত সাধনার কেন্দ্র থাকা দরকার৷ সেটা কবিগুরুকে অবলম্বন করে শুরু করলেও, ডি এল রায়, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, নজরুল - কেউই সেখানে বাদ পড়েন নি৷ সকলেই যে আমাদের ঐতিহ্যের অঙ্গীভূত৷ আর স্বাধীনতার পর আমরা বুঝতে পারি যে, শুধু ঐ নাগরিক গান শিখিয়ে হবে না৷ লোকসংগীতের চর্চাও দরকার৷ কারণ এ দেশের বহু মানুষ গ্রামাঞ্চলে থাকেন৷ তাঁদেরকেও উদ্বুদ্ধ করতে হলে গ্রামের সুরে গান করা দরকার৷ সেই সঙ্গে পল্লি সুরে গান বেঁধে গাওয়া৷''

রবীন্দ্রসংগীতের আধুনিকীকরণে ভীত নন সনজীদা

৭৯ বছর বয়সি সনজীদা খাতুন একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক৷ ছায়ানটের পাশাপাশি জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি৷ এমনকি প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নালন্দা'-র সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন সনজীদা৷ বর্তমানে রবীন্দ্রসংগীতের আধুনিকীকরণ দেখে কি তিনি ভীত? সনজীদা কিন্তু বললেন অন্য কথা৷ বললেন, ‘‘যাঁরা ঐ বিকৃতিগুলো করছেন, আমরা বুঝি তাঁরা এসব হুজুগে করছেন৷ কিছুদিন পরে কিন্তু এসব দিকে তাঁদের আর মন থাকবে না৷ অল্প বয়সে যখন ধুমধাড়াক্কা গানের দিকে আকর্ষণ হয়, ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি মানুষ ছোটে, একটি বয়সের পরে সেগুলি আর ভালো লাগে না৷ তখন তাঁরা শান্তি খোঁজেন৷ যে শান্তি আমরা পাই রবীন্দ্রনাথের গানে৷''

সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে ২৭শে এপ্রিল

ঐ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ থাকতে না পারলেও, তাঁর তরফে বিশ্বভারতীর প্রথা মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সপ্তপর্ণী তুলে দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন৷ আর বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এবারের সমাবর্তনে ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১১ শিক্ষাবর্ষের প্রায় আট হাজার ছাত্র-ছাত্রীর হাতে প্রশংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে৷

গত সোমবার, শান্তিনিকেতনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সমাবর্তন ও দেশিকোত্তোম প্রদানের বিষয়টি জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত৷ ঘোষণা করেন বিশিষ্ট সেই পাঁচজনের নাম, যাঁদের এ বছর দেশিকোত্তম দেওয়া হবে৷ শিল্পী সনজীদা খাতুন ছাড়াও, সেই তালিকায় আছেন বিজ্ঞানী ড. এম এস স্বামীনাথন, নাট্যকার ইব্রাহিম আল কাজী, খ্যাতনামা চিত্র শিল্পী গণেশ পাইন এবং বিখ্যাত সংগীত শিল্পী পণ্ডিত যশরাজ৷

প্রসঙ্গত, ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুনের আগে, ১৯৯৯ সালে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সম্মাননা পান৷ একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার এবং রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত সনজীদা খাতুন৷ রচনা করেছেন ১৬টির মতো গ্রন্থও৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য