কর্নেল জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ
১৭ জুলাই ২০১৪হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা কর্নেল জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে এই জিজ্ঞাসাবাদ চলে৷
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় র্যাবের তিনজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ এ জন্য র্যাবের অপারেশনাল হেড হিসেবে কর্নেল জিয়াউল আহসানের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে৷ পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷'' তবে তিনি কী ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি তদন্ত কমিটির প্রধান৷
পরে জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটি যে সব বিষয় জানার প্রয়োজন মনে করেছে, সেগুলো জানিয়েছি৷'' তবে এর বেশি কিছু তিনি সাংবাদিকদের বলতে চাননি৷
এর আগে কর্নেল জিয়া সংবাদ মাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাতজন অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১-এর তখনকার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল৷ নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমান তাঁকে অপহরণের ঘটনা জানানোর পর তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদের সঙ্গে কথা বলেন৷ এরপর ৩০শে এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধারের পর কর্নেল জিয়া আগ বাড়িয়ে বলেন, যে প্রধান আসামি নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেছে৷ পরে অবশ্য নূর হোসেন ভারতেই গ্রেফতার হন৷ নিহত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাব সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করেছে বলে যে অভিযোগ করেন তাকে ‘আবোল-তাবোল কথা' বলেও অভিহিত করেন কর্নেল জিয়া৷
গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়৷ ৩০শে এপ্রিল তাদের লাশ পাওয়া য়ায় শীতলক্ষ্যা নদীতে৷ এরপর নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাবের তিন কর্মকর্তা সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করেছে৷ এরপর র্যাব বা পুলিশ ঐ তিন র্যাব কর্মকর্তাকে স্ব-উদ্যোগে গ্রেফতার না করলেও শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে তাদের গ্রেফতারে বাধ্য হয়৷
গ্রেফতার হওয়ার পর র্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, মেজর (অব.) আরিফুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন৷ তাঁরা এখন কারাগারে আছেন৷ তাদের জবানবন্দিতে তারা ছাড়াও র্যাবের আরো ১০ জন সদস্যের নাম এসেছে৷ তাঁদের মধ্যে র্যাব সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামও আছে৷ জানা গেছে, জবানবন্দি ধরে কর্নেল জিয়াকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল৷ র্যাবের আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷
নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত ৩৫০ জন ব্যক্তির বক্তব্য নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লা৷ কমিটি কয়েক দফায় নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসে ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রেস্ট হাউসে গণশুনানি করে৷ কমিটি ঐ সাতজনের লাশ উদ্ধারের স্থান, নারায়ণগঞ্জ র্যাব-১১-এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ও ক্যাম্প অফিসও পরিদর্শন করেছে৷