1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রিগার সৃষ্টিশীল তরুণদল

সিল্কে বার্টলিক/আরবি১১ জানুয়ারি ২০১৪

২০১৪ সালের ইউরোপের সংস্কৃতির রাজধানী রিগার জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে৷ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়ছে৷ বাড়িঘর, দোকানপাট ও কারখানাগুলি খালি হয়ে যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/1AofP
Riga Kulturhauptstadt 2014
ছবি: DW/S. Bartlick

এই শূন্যতার মধ্যেও সৃজনশীল কিছু তরুণ অসাধারণ এক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ‘‘এখানে এলে মানুষ দিশাহারা হয়ে যেতে পারে৷'' পরিত্যক্ত এক কারখানা প্রাঙ্গনে এসে বলেন শিল্পী কাসপার লিলগালভিস৷ রিগা শহরের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে বিশাল এক চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষয় ধরা কিছু দালান৷ বেশিরভাগই সময়ের স্বাক্ষর বহন করছে৷ অনেক বছর ধরে খালি পড়ে আছে এগুলি৷ এখানে এক সময় শিল্প কারখানা ছিল সেখানে৷ ২০.০০০ মানুষ কাজ করতেন৷ তৈরি করতেন রেডিও ও টেলিফোন৷ কিন্তু সোভিয়েট ইউনিয়েনের পতনের পর লাটভিয়ার উৎপাদন পড়ে যায়৷ ১৯৯৯ সালে বেসরকারিকরণ করা হয়৷ ভেঙে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি৷

খালি বাড়ি থেকে শিল্প চর্চার স্থান

‘‘আমরা ৭/৮ বছর আগে এখানে উঠেছি৷ যেহেতু আমাদের ওয়ার্কশপ ও স্টুডিওর জন্য জায়গার প্রয়োজন ছিল৷'' ১৫ জন শিল্পী ছিলেন তখন৷ বলা যায় বাড়ি দখলকারী৷ এরপর তাঁরা সেখানে প্রদর্শনী, ওপেন ডে, এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে থাকেন৷ বছর দুয়েক পর এক মালিক আমাদের জিজ্ঞেস করেন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গঠন করার জন্য তাঁর একটি বাড়ি নিয়ম মাফিক ব্যবহার করতে চাই কিনা৷ তিন বছরের জন্য একটি চুক্তিও করা হয়৷ এরপর বাড়িটি ভেঙে দামি ফ্ল্যাট বাড়ি পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর৷ ‘‘কিন্তু ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের জন্য শাপে বর হয়'', হেসে বলেন কাসপার্স৷ বলেন, ‘‘মালিকের পক্ষে আর্থিক কারণে বাড়িতে হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ আমরা এখানে আছি বলে তিনি এখন খুশি৷ কেননা শিল্পীদের নানা ধরনের কর্মকাণ্ড গোটা এলাকাকেই আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে৷''

Riga Kulturhauptstadt 2014
সাংস্কৃতিক কেন্দ্রছবি: DW/S. Bartlick

পুরোনো বাড়িতে প্রাণের স্পন্দন

কাসপার্স বাড়ির দরজাটি খোলেন৷ কয়েকটি সাইকেল দাঁড় করানো৷ সিলিং-এ ঝুলছে ঝাড়বাতি৷ কিছু তরুণ যাতায়াত করছেন৷ চলছে জিজ্ঞাসাবাদ৷ ‘কেমন ছিল প্রদর্শনী'?, ‘তোমরা কী এখনই রিহার্সেল করবে'?, ‘কখন শুরু হবে ওপরে'? কাসপার্স সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠেন৷ এগিয়ে যান আলো আঁধারি এক করিডোর দিয়ে৷ স্টুডিওর দরজাটা খোলেন৷ একটি ব্যান্ডের রিহার্সেলের রুম এটি৷ তারপর আর একটি দরজা খুলে বলেন, ‘‘এখানে আমি থাকি৷'' অস্থায়ী একটি জায়গা৷ ফ্লি মার্কেট থেকে আসবাবপত্র আনা হয়েছে৷ এক কোণায় রয়েছে ঘর গরম করার জন্য একটি কয়লার হিটার (ওভেন)৷

শিল্পীদের টিকে থাকা সহজ নয়

কাসপার্স লিলগালভিসের বয়স ৪০৷ তিনি টেক্সটাইল শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ গ্রাফিক ডিজাইন করেছেন৷ বিভিন্ন পারফর্মেন্স ও ফটোগ্রাফিতে অভিজ্ঞতা আছে তাঁর৷ কাসপার্স নিজেকে একজন সৌভাগ্যবান মানুষ বলে মনে করেন৷ কেননা যা করতে ভালো লাগে, তা থেকেই জীবনধারণ করতে পারছেন৷ একজন উচ্চাকাঙ্খী মানুষ এই শিল্পী৷

লাটভিয়ার বেশিরভাগ শিল্পীকেই জীবন ধারণের জন্য পাশাপাশি কোনো না কোনো কাজ করতে হয়৷ শিল্প ও সংস্কৃতির বাজারটা এখানে নিতান্তই ছোট৷ ভালোভাবে সংগঠিত নয়৷ কয়েকশ শিল্পী থাকলেও গ্যালারি কম এবং কোনো শিল্পমেলা নেই৷ আর সে কারণে কারখানার ভবনটি শিল্পীদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ৷ এই তো সবে শুরু৷ ভাবের আদান প্রদান ও মিলনের স্থান হবে এটি৷ হবে নানা বিভাগের শিল্প-প্রকল্পের এক প্ল্যাটফর্ম৷

বার্লিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়

কাসপার্স এই প্রসঙ্গে বার্লিনের কথা বলেন৷ বছর দশেক আগে বহু বাড়ি খালি পড়ে ছিল সেখানে৷ সারা বিশ্ব থেকে সৃজনশীলরা সেখানে জড়ো হওয়ার পর শহরটি স্পন্দিত হচ্ছে৷ রিগার ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে৷ প্রতিবছর ২০০০০ পর্যন্ত মানুষ শহর ছাড়ছেন, অধিকাংশই পশ্চিম ইউরোপে৷ অর্থনেতিক সংকট শুরু হওয়ার পর অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন৷ শুধু কারখানা নয় বাড়িঘর ও দোকানপাটও শুনশান হয়ে পড়ছে৷

এর মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে ‘ফ্রি রিগা ২০১৪' আন্দোলনটি৷ নগরের শূন্যতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ‘ওকুপাই মি' নামে একটি উদ্যোগের আয়োজন করা হয়েছে৷ শিল্পীদের শহরের পড়ে থাকা বাড়িঘরে রিহার্সেলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে৷ যে কেউ ‘ওকুপাই-স্টিকার' এনে খালি বাড়িগুলি চিহ্নিত করতে পারেন৷ শহরের মানচিত্র দিয়ে ইন্টারনেটেও দিতে পারেন৷ দেখাতে পারেন এই সব বাড়ির অবস্থান৷