1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ভারতে ভার্মিকম্পোস্টিং

৫ জুলাই ২০২৩

ভারতের মতো জনবহুল দেশে খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে শস্যের উচ্চ ফলনশীলতা জরুরি৷ কিন্তু অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ব্যবহার মাটি ও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে৷ ভার্মিকম্পোস্টিং এই সমস্যার সমাধান করতে পারে৷

https://p.dw.com/p/4TRqV
চাষিরা রাসায়নিকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মাটি বাঁচানোর প্রয়োজন বুঝতে পারছেন৷ তাঁরা নিশ্চিত, যে ভার্মিকম্পোস্টের কল্যাণে উৎপাদনশীলতা বজায় রেখেও পানিসম্পদ বাঁচিয়ে আরও স্বাস্থ্যকর খাদ্য মানুষের থালায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব৷
চাষিরা রাসায়নিকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মাটি বাঁচানোর প্রয়োজন বুঝতে পারছেনছবি: DW

একাধিক প্রজন্ম ধরে বলকার সিংয়ের পরিবার ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে ৩০ একর বড় খামারে গম, ধান এবং আখ চাষ করে আসছে৷ ১৯৬০-এর দশকে তথাকথিত ‘সবুজ বিপ্লব'-এর সময়ে ভারতে উচ্চ ফলনশীল শস্য চালু করা হয়৷ তখন থেকেই চাষিরা মাটি থেকে যতটা সম্ভব সম্পদ নিংড়ে নিতে ডায়ামোনিয়াম ফসফেট ও ইউরিয়ার মতো রাসায়নিক সারের উপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন৷

সিং পরিবারও ব্যতিক্রম নয়৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তিনি লক্ষ্য করেছেন যে সেখানকার মাটি উৎপাদনশীলতার সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে সার মাটির আর্দ্রতা ছিনিয়ে নিয়েছে৷ উৎপাদনশীলতা কমে চলেছে এবং প্রত্যেক মরসুমে পানির চাহিদাও বাড়ছে৷ আমরা যত বেশি সার ব্যবহার করি, তত বেশি পানির প্রয়োজন হয়৷'' 

ভার্মিকম্পোস্টিং যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

সেই দুষ্টচক্র ভাঙতে তিনি কাছের কম্পোস্ট কারখানায় এক কর্মশালায় অংশ নেন৷ সেখানে তিনি ভার্মিকম্পোস্টিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন৷ কেঁচো কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গাছের ফলন বাড়াতে সেই কৌশল প্রয়োগ করা হয়৷ মাটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে বাণী যাদব বলেন, ‘‘ভার্মিকম্পোস্টিং এক জৈব প্রক্রিয়া, যার আওতায় দুগ্ধ ও শস্যজাত বর্জ্য কেঁচোর খোরাক হিসেবে কাজে লাগানো হয়৷ কেঁচো বায়ো-ডিগ্রেডেবল পদার্থ গ্রহণ করে হজম করে৷ সেগুলির অন্ত্রে নির্দিষ্ট কিছু জীবাণু ও এনজাইম রয়েছে৷ পিএইচ বা অম্লতার মাত্রা এমন, যে কেঁচোর মল ভার্মিকম্পোস্ট হয়ে ওঠে৷''

চাষবাসের ক্ষেত্রে কেঁচোর উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনা বাড়াতে বাণী যাদব প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন৷ মাটির নীচের জগতের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কেঁচোর ভূমিকা বহুকাল ধরে পরিচিত৷ বিশেষ করে মাটির ইকোসিস্টেমে এই প্রাণীর কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে৷ সেগুলির মলের মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের মতো উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উপাদান রয়েছে৷ বাণী যাদব বলেন, ‘‘মাটির কাঠামো চূর্ণ করে দেয় বলে ভার্মিকম্পোস্ট খুব ভালো৷ ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির আর্দ্রতা সৃষ্টির ক্ষমতাও বেড়ে যায়৷''

ভার্মিকম্পোস্টিং জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে অভিযানে তিনি উদ্যোগপতি প্রতীক বাজাজের সমর্থন পাচ্ছেন৷ প্রতীক বলেন, ‘‘আমি চিরকাল প্রকৃতির টান অনুভব করি৷ ছোটবেলায় কেঁচো নিয়ে খেলতে ভালোবাসতাম৷ কিন্তু কখনো ভাবি নি, যে কেঁচো আমার নিজের ব্যবসা চালু করার কারণ হবে৷'' 

তিনি একটি লক্ষ্য নিয়েই ব্যবসা শুরু করেন৷ ভারতের বাজারে রাসায়নিক সারের মূল্য এখনো ভার্মিকম্পোস্ট ব্র্যান্ডগুলির তুলনায় প্রায় অর্ধেক৷ প্রতিযোগিতার বাজারে সেই ব্যবধান ভাঙতে চান প্রতীক৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রতীক বাজাজ বলেন, ‘‘সঠিক প্রক্রিয়া খুঁজে পেতে আমাদের দেড় বছর ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে হয়েছে৷ কোনো ভার্মিকম্পোস্টের নির্দেশিকা যে সব সমস্যার সমাধান বাতলে দেয় নি, সেগুলি খুঁজতে আমি নানা ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে দেখেছি৷ যেমন বৃষ্টিপাত থেকে ভার্মিকম্পোস্ট কীভাবে বাঁচানো যায় এবং কম্পোস্টের উপর তার ক্ষতিকারক প্রভাব কীভাবে এড়ানো যায়? এমন সমস্যার সমাধান করতে আমাদের নিজস্ব উত্তর খুঁজতে হয়েছে৷ সেই পথে অনেক ব্যর্থতা এসেছে, তবে সাফল্যের মাত্রাও কম ছিল না৷''

প্রতীক চাষিদেরও প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের ভার্মিকম্পোস্টিং প্রয়োগ করতে সাহায্য করেন৷ এখনো পর্যন্ত তিনি এক হাজারেরও বেশি চাষির জন্য কর্মশালা আয়োজন করেছেন৷ যেমন মনপ্রীত সিংয়ের মতো চাষি সম্প্রতি নিজের আখের খামারে রাসায়নিক সারের বিকল্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে মানুষ আমাদের কাজ দেখে বিদ্রুপ করে৷ তারা বলে, আমরা সারা দিন গোবরের মধ্যে হাঁটু ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি৷ কিন্তু তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না৷ আমরা ফলের প্রতি মনোযোগ দেই৷ গম, রুটি, ডাল, ভাত ইত্যাদি যা খাই, আমরা কীভাবে নিশ্চিত করতে পারি যে সেগুলি রাসায়নিক-মুক্ত?''

এই অঞ্চলের চাষিরা রাসায়নিকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মাটি বাঁচানোর প্রয়োজন বুঝতে পারছেন৷ তাঁরা নিশ্চিত, যে ভার্মিকম্পোস্টের কল্যাণে উৎপাদনশীলতা বজায় রেখেও পানিসম্পদ বাঁচিয়ে আরও স্বাস্থ্যকর খাদ্য মানুষের থালায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব৷

আদিত্য পাণ্ডে/এসবি