1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রামপালে কাজ বন্ধ হবে না

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ জুলাই ২০১৭

পরিবেশের মূল্যায়ন করার আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ না করতে ইউনেস্কো আহ্বান জানালেও, তাতে কান দিচ্ছে না বাংলাদেশ৷ জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী সোমবার দাবি করেন, ‘‘বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কোনো বাধা নাই৷''

https://p.dw.com/p/2hRzp
UNESCO Weltkulturerbe Sundarbans
ছবি: DW/M. Mamun

গত মাসে পোল্যান্ডে বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের ৪১তম সভায় সুন্দরবন ও রামপাল নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ৩০ জুলাই৷ তাতে বলা হয়, ‘সুন্দরবন এলাকার কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) আগে সেখানে বড় কোনো শিল্প বা অবকাঠামো নির্মাণ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে৷' শুধু তাই নয়, পরিবেশগত মূল্যায়নের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পর্যালোচনার জন্য হেরিটেজ সেন্টারে পাঠাতেও বলা হয়৷  ইউনেস্কো জানায়, ২০১৯ সালে হেরিটেজ কমিটির ৪৩তম অধিবেশনে এ সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে৷

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত সংক্রান্ত ঐ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সুন্দরবন ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুই পৃষ্ঠায় মোট ১১টি সিদ্ধান্তের কথা জানান হয়৷

যার মধ্যে চতুর্থ দফায় – ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট (এসইএ) সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত স্বাগত জানানো হয় এবং এই সমীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঐ অঞ্চলে কোনো বড় আকারের শিল্প বা অবকাঠামোগত উন্নয়নের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়৷ বলা হয় সমীক্ষাটি শেষ হওয়ার পর অপারেশনাল গাইডলাইনের ১৭২ অনুচ্ছেদ মেনে যত দ্রুত সম্ভব তার একটি কপি আইইউসিএন দিয়ে পর্যালোচনার জন্য বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রে পাঠাতে৷

‘সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বার বার মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে’

এছাড়া সপ্তম দফায় ‘রামপাল প্রকল্প নিয়ে ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর রিঅ্যাক্টিভ মনিটরিং মিশনের করা অন্যান্য সুপারিশও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়৷'

দশম দফায় বলা হয়, ‘রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হলে সুন্দরবনে পরিবেশগত প্রভাব পড়বে বলে কমিটি উদ্বিগ্ন৷ এতে বায়ু ও পানিদূষণ বাড়বে৷ নৌ-চলাচল ও ড্রেজিং বেড়ে যাবে৷ স্বাদু পানি কমে যাবে৷ এর মধ্যেই সেই অঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে৷ বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম অধিবেশনে স্ট্রাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট (এসইএ)-এর অংশ হিসেবে এ সবের প্রভাব নিরূপণ নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশকে৷ ঝুঁকি কমাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে৷ সুন্দরবনের আউটস্ট্যান্ডিং ইউনিভার্সাল ভ্যালুর (ওইউভি) ওপর ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও বলা হয়৷

সবশেষে একাদশ দফায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ, সম্পদের সুরক্ষামূলক অবস্থা এবং উপরে যেসব সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাছে জমা দিতে হবে৷ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় কমিটির ৪৩তম অধিবেশনে প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷'

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সহ আরো কিছু পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে বিগত ৩৯তম সভার ৭ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৬ সালের ২২ থেকে ২৮ মার্চে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সদস্যরা সুন্দরবন এলাকা ভিজিট করে একটা প্রতিবেদন জমা দেয়৷ সেই প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া জবাব এবং আরও কিছু তথ্য একত্রিত করে ৩ জুলাইয়ে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ২১ সদস্যের ৪১ তম সভায় সুন্দরবনকে ডেঞ্জার লিস্টে নেওয়া হবে কিনা– তা নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ আলোচনা শেষে ১২ জুলাই সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়৷

এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ঐ সভায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ওপর আপত্তি তুলে নিয়েছে ইউনেস্কো৷ কিন্তু সোমবার বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে ইউনেস্কোর বরাত দিয়ে প্রকৃত সিদ্ধান্ত প্রকাশ হওয়ার পর বিকেলে এক জরুরি প্রেসব্রিফিংয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী৷ তিনি বলেন, ‘‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলবে৷ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির প্রতিবেদনেও বলা আছে, এই প্রকল্পের কাজে কোনো বাধা নেই৷ সংবাদমাধ্যমগুলো বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করছে৷''

বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ছোট ছোট অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়া যাবে৷ তবে এই কেন্দ্রের আশেপাশে বড় আকারে কোনো শিল্প কারখানা বা কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ রা যাবে না৷''

তাঁর কথায়, ‘‘সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হোক, তা আমরাও চাই না৷ হেরিটেজ কমিটি বাংলাদেশকে এনভায়রনমেন্টাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছে৷ আগামী দু'বছরের মধ্যে এই রিপোর্ট তৈরি করা হবে৷ পাশাপাশি আগামী ২০১৮ সালের মধ্যেই আমরা কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেবো৷''

গণমাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘‘রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন নেই – গণমাধ্যমে এ বিষয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো বিভ্রান্তিকর৷''

জ্বালানি উপদেষ্টার কথার জবাবে জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের একগুয়েমি এবং প্রতারণার ব্যাপারে আমরা সবাইকে সতর্ক করে আসছি সব সময়৷ এবার আবারো প্রমাণ হলো যে সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বার বার মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে৷ এটা প্রমাণিত এবং ইউনেস্কোও বলেছে সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করতে হবে, নয় ওখান থেকে সরাতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টার মতো একটা পদে থেকে ক্রমাগত প্রকৃত সত্য কীভাবে অস্বীকার করতে পারে, তা আমার কাছে একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার৷ এটা সবাই দেখতে পাচ্ছে৷ লেখা আছে৷ যারা আপত্তিকে অনাপত্তি বলে তারা যে সত্যকে অস্বীকার করবে, এটাই তো স্বাভাবিক৷ আমরা চাই দেশের স্বার্থে দেশের মানুষের স্বার্থে এখনই রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা হোক৷ এটা বন্ধে যত দেরি হবে ততই দেশের ক্ষতি৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পরিবেশের ক্ষতি না করেও কম খরচে কীভাবে দেশের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় তার একটি পরিকল্পনা বা প্রস্তাব আমরা উপস্থাপন করেছি গত সপ্তাহে৷ আশা করছি, সরকার আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করবে৷''