রাতের আঁধারে সরানো হলো ভাস্কর্য
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ ভাস্কর্যটি সরানোর প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন একদল প্রতিবাদকারী৷
ন্যায়বিচারের প্রতীক
রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিসের’ আদলে তৈরি এক হাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে দাঁড়িপাল্লা ধরা ভাস্কর্যটি ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয় গতবছরের শেষের দিকে৷ এরপর হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামি সংগঠন ভাস্কর্যটিকে ‘অনৈসলামিক’ আখ্যা দিয়ে সেটিকে সরিয়ে ফেলার দাবি তোলে৷
গ্রিক দেবী, নাকি বাঙালি নারী?
ইসলামপন্থি নেতারা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্যটিকে গ্রিক দেবীর বলে জানালেও ভাস্কর মৃণাল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, ‘‘গ্রিক দেবী ঠিক নয়, বলাও ঠিক হবে না৷ এটা গ্রিক ভাস্কর্য নয়, একটা বাঙালি মেয়ে, শাড়ি-ব্লাউজ পরা৷ গ্রিক হলে সেখানে অন্য পোশাক থাকতো৷ ভুল জিনিস মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়৷’’
রাতের বেলা অপসারণ
ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা নিয়ে আলোচনার মাঝেই বৃহস্পতিবার হঠাৎ সেটিকে সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়৷ রাত সাড়ে এগারোটা থেকে ভোর চারটার মধ্যে সেটিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে নামিয়ে ফেলা হয়৷ এ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাতির সংখ্যা কমিয়ে অনেকটা রাতের আঁধারে মুর্তি সরানোর কাজ পরিচালনা করা হয়৷
নতুন ঠিকানা অ্যানেক্স ভবন?
ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে প্রতিস্থাপনের কথা শোনা যাচ্ছিল৷ তবে সেটা প্রতিস্থাপনের বদলে শুক্রবার ভোর রাত পাঁচটার দিকে একটি পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে অ্যানেক্স ভবনের ভেতর পানির পাম্পের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম৷
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ
এদিকে, বৃহস্পিতবার রাতে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার খবর প্রকাশের পরপরই সুপ্রিমকোর্টের সামনে জড়ো হন কয়েকশ’ প্রতিবাদকারী৷ মূলত বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘আপোশ, না রাজপথ?-রাজপথ, রাজপথ’, ‘হেফাজতের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মৌলবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও জ্বালিয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে ভাস্কর্য অপসারণ ঠেকানোর চেষ্টা করেন৷
বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ
শুক্রবার ঢাকায় প্রতিবাদকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ৷ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়৷ কয়েকজন প্রতিবাদকারীকে পুলিশ আটক করেছে বলেও জানা গেছে৷
ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের দাবি
ন্যায়বিচারের প্রতীক ভাস্কর্যটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা৷ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের তরফ থেকেও প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷