1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজাকার আল-বদররা বাংলাদেশটাকে তছনছ করে ফেলেছে’

৯ মার্চ ২০১১

মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল সেনাবাহিনীতে চাকরি নিয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে৷ ভোলার এই তরুণ ছোটবেলা থেকেই বেশ সাহসী ছিলেন৷ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে৷

https://p.dw.com/p/10Veg
এসব হত্যাকাণ্ডের পরও মাথা উঁচু করে ঘুরছে রাজাকাররাছবি: Dhaka National Archives

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মোস্তফা কামাল চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক, তখন ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় অবস্থান তাদের৷ যুদ্ধ শুরুর পরপরই পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে অবস্থা নেন এই রেজিমেন্টের সৈনিকরা৷ ১৬ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদাররা চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিশ্চিহ্ন করতে এগিয়ে আসে৷ শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ৷ তখন আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেন মোস্তফা কামাল৷

১৮ই এপ্রিল

যুদ্ধের এক পর্যায়ে নৌ এবং আকাশপথেও হামলা শুরু করে পাকিস্তানিরা৷ অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিসেনারা৷ কিন্তু নিজের পরিখা থেকে সরতে রাজি হননি কামাল৷ বরং এলএমজি নিয়ে শত্রু বাহিনীর উপরে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখেন তিনি৷ ১৮ই এপ্রিল শত্রু সেনার তুমুল আক্রমণে একসময় প্রাণ হারান তিনি৷ তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে রুখতে পেরেছিলেন এই যোদ্ধা৷

Muklasur Rahman Freiheitskämpfer Bangladesch Flash-Galerie
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুখলেছুর বলেনছবি: Ali Mahmed

প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান

এই বীর সেনার মৃত্যুর খানিক আগে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুখলেছুর রহমান৷ সতীর্থরা সরে যাচ্ছে, তাই কামালকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু কামাল রাজি হননি৷ সেদিনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে মুখলেছুর বলেন, ‘‘আমি মোস্তফা কামালের পরিখায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি৷ তাঁকে বলি, ভাই চলেন৷ আমাদের সকলকেই ব্যাক করতে বলেছে৷ আমরা চলে যাই৷ তখন কামাল বলেন, না, আমি কাভারিং ফায়ার দেবো৷ আপনারা চলে যান৷'' রহমান বলেন, ‘‘মোস্তফা কামালের পরিখা ছিল পুকুরের এক প্রান্তে৷ আমি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাঁতরে পুকুরের অপরপ্রান্ত পৌঁছাতেই দেখি সেলিং-এ তাঁর (কামাল) পরিখা উড়ে গেল৷''

বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি

সেদিন মোস্তফা কামালের বীরত্বের জন্যই বেঁচে যান অনেক মুক্তিসেনা৷ যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর এই একক নৈপুণ্য উৎসাহিত করে অন্য সেনাদেরকে৷ বীরশ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি লাভ করেন কামাল৷ মুখেলসুর রহমান জানান, অল্প বয়সি কামাল ছিলেন অসীম সাহসী৷

মুখলেছুর রহমান এর কথা

মুখলেছুর রহমানের বয়স বর্তমানে ৮৫ বছর৷ আখাউড়ায় বাস করেন তিনি৷ বর্ষীয়ান এই মুক্তিসেনা জানান, মোস্তফা কামালের মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ খুঁজে পান স্থানীয় মানুষ৷ কামালকে শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি পাকিস্তানিরা, বরং নৃশংসভাবে বেয়নেটবিদ্ধও করে তাঁকে৷ অকুতোভয় এই যোদ্ধাকে দাফন করা হয় দরুইন গ্রামেই৷ তবে, তাঁর জানাজা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি তখন৷

Bangladesch Ermordete Intellektuelle
এহেন হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীনতা এসেছে – কিন্তু শান্তি এসেছে কি?ছবি: Dhaka National Archives

জার্মানিতে চিকিৎসা

অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মুখলেছুর রহমান নিজেও একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা৷ ডিসেম্বরে নোয়াখালিতে যুদ্ধের সময় গলায় গুলি লাগে তাঁর৷ ডান হাতটাও অচল হয়ে যায় সেসময়৷ ১৯৭২ সালে তাঁর চিকিৎসায় এগিয়ে আসে তৎকালীন পূর্ব জার্মান সরকার৷ তাঁকেসহ কয়েক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষ বিমানে পূর্ব জার্মানিতে নিয়ে আসা হয়৷ এদেশে ছয়মাস চিকিৎসা করা হয় মুখলেছুর-এর৷

হতাশ মুখলেছুর

বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে বেশ হতাশা প্রকাশ করলেন মুখলেছুর রহমান৷ তাঁর মতে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের যা প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো পূরণ হয় নি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশ একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হবে এবং ভালোমতো চলতে পারবো৷ কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে রাজাকার আল-বদরে ভরে যায়৷ তারা বাংলাদেশটাকে তছনছ করে ফেলেছে৷''

উল্লেখ্য, দরুইন গ্রামে মোস্তফা কামালের সমাধিস্থলে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ৷ পুকুরের পাড়ে যে স্থানে তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন, সেই জায়গায়ও সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ এছাড়া তাঁর নামে ভোলায় স্মৃতি জাদুঘর এবং পাঠাগার তৈরি করা হয়েছে৷ একটি এলাকারও নামকরণ করা হয়েছে কামালনগর৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম (সহায়তা করেছেন ব্লগার আলী মাহমেদ)

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন / দেবারতি গুহ