1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজধানীতে এবার ভিআইপি প্রার্থী কম

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৬ ডিসেম্বর ২০০৮

প্রত্যেক নির্বাচনেই রাজধানীতে লড়াই করেন হেভিওয়েট (ভিআইপি) প্রার্থীরা৷ তবে এবার ব্যতিক্রম৷ অনেক নতুন মুখ রাজধানীতে এবার লড়ছেন দুই জোটেরই প্রার্থী হয়ে৷ যে ক'জন ভিআইপি প্রার্থী আছেন তাদেরও অনেকে এবার ধরাশায়ী হতে পারেন৷

https://p.dw.com/p/GNXq
নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত ঢাকা-৬ আসনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকাছবি: Mustafiz Mamun

রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের মতে, এবার এমনিতেই রাজধানীতে আসন বেড়েছে ৭টি৷ তারওপর প্রার্থী সংকটের কারণে বাইরের নেতাদের মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি৷ এ কারণে খুব বেশি ভিআইপি প্রার্থীর দেখা মেলেনি৷ জোট-মহাজোটের এই লড়াইয়ে এবার বড় ভুমিকা রাখবে নতুন ভোটাররা৷ বদলে যাওয়ার শ্নোগান না দেশ বাঁচানোর শ্নোগান কোনটিকে গ্রহণ করেন নতুনরা তা এখন দেখার অপেক্ষা৷ নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ নতুনদের স্বপ্ন দেখিয়েছে৷ শুনিয়েছে বদলে যাওয়ার গল্প৷ আর বিএনপির ইশতেহারে নতুনদের স্বপ্ন দেখানো হলেও তাদের মূল শ্নোগান দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও৷ কোন শ্নোগান নবীনদের মনে দাগ কাটে তা এখন দেখার অপেক্ষা৷

Bangladesch Wahlen 2008
ঢাকা-৬ আসনে প্রবীণ রাজনীতিক সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নবীন প্রার্থী মিজানুর রহমান খান দিপু৷ছবি: Mustafiz Mamun

ঢাকা-৬
পুরনো ঢাকার (ঢাকা-৬) এই আসনটি অন্য কারণে এবার আলোচিত৷ প্রবীণ রাজনীতিক ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নবীন প্রার্থী মিজানুর রহমান খান দিপু৷ জাতীয় যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷ দিপু নবীন হলেও লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে৷ তাই তাকে ফেলনা হিসেবে মনে করছেন না অপর দুই প্রবীণ প্রার্থী৷ এই আসনে লড়াই হবে মূলত ত্রিমুখী৷ বি. চৌধুরী ব্যক্তি ইমেজের ভোট ছাড়াও ধানের শীষের অনেক ভোট নষ্ট করবেন৷ আর মুন্সিগঞ্জের (বিক্রমপুরের ভোট বলে পরিচিত) ভোট একচেটিয়া নিতে পারলে হিসাব নিকাশ পাল্টেও যেতে পারে৷ চমক দেখাতে পারে নবীন দিপু৷ কিন্তু কাগজে কলমের হিসাবে যে যতই এগিয়ে থাকুক না কেন, ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত এগিয়ে সাদেক হোসেন খোকা৷ ফলে ধরাশায়ী হবেন বি. চৌধুরীর মত ভিআইপি৷

ঢাকা-১৭
দুই জেনারেলের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি লে. জেনারেল (অব.) হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷ দুই লাখ ৬২ হাজার ১৫৫ ভোটারের গুলশান ক্যান্টনমেন্ট (ঢাকা-১৭) আসনে সাধারণ ভোটারের পাশাপাশি রয়েছে সেনা সদস্যদেরও প্রচুর ভোট৷ কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এখন আর এককভাবে সেনাবাহিনীর ভোট পাবেন বলে মনে হচ্ছে না৷ কারণ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীও বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহ৷ ফলে সেনা সদস্যদের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এই আসনে এরশাদকে বলা হচ্ছে ভিআইপি প্রার্থী৷ আর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হান্নান শাহকে ভোটাররা বলছেন আলোচিত প্রার্থী৷ তাই ভিআইপি-আলোচিত দুই জেনারেল প্রার্থীর এই আসনে কে জেতেন তা দেখার অপেক্ষায় ভোটাররা৷

Bangladesch Wahlen 2008
ঢাকায় এখন নির্বাচনী আমেজছবি: Mustafiz Mamun

ঢাকা-৭
রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত লালবাগের (ঢাকা-৭) এই আসনটি৷ আর আলোচনায় উঠে আসার কারণ সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু৷ বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছরের পুরো সময়ই আলোচনায় ছিলেন তিনি৷ তবে ভালো কিছু করে নয়৷ কখনও জেল খেটে, কখনও ওয়ার্ড কমিশনারকে পিটিয়ে আবার কখনও আলোচনায় এসেছেন শিক্ষককে চড় মেরে৷ সর্বশেষ কারাগারে থেকেও ডেপুটি জেলারকে চড় মেরে আবারও আলোচনায় আসেন৷ আর সন্ত্রাস দুর্নীতি তো আছেই৷ তিনি আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে৷ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লিন ইমেজের অধিকারী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন৷ দু'দিন আগে জামিনে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বেরিয়েছেন পিন্টু৷ এখন শংকা এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তো? ভোটারা ঠিকমত ভোট দিতে পারলে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বড় ভোটের ব্যবধানেই জিতবেন৷ আলোচিত নেতা পিন্টু সুযোগ পাবেন না সংসদে যাওয়ার৷

ঢাকা-৮
দুই প্রজন্মের দুই ছাত্রনেতা লড়ছেন অফিস পাড়া বলে পরিচিত মতিঝিল, পল্টন ও রমনা এলাকা (ঢাকা-৮)৷ মহাজোট থেকে প্রবীন রাজনীতিক ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি এক কালের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেননের প্রতিদ্বন্দ্বী চারদলীয় জোটের নবীন প্রার্থী হাবিব উন নবী খান সোহেল৷ ইমেজের দিক থেকে এগিয়ে মেনন৷ সৎ ও যোগ্য নেতা আর প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হলেও রাশেদ খান মেননের নিজের তেমন কোন ভোট ব্যাংক নেই৷ নৌকার ভোটই তার একমাত্র ভরসা৷ লড়ছেন নৌকা নিয়েই৷ ফলে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ বদলে যাওয়া শ্নোগানে শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হতে পারেন ভিআইপি প্রার্থী মেনন৷

ঢাকা-৯
খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকায় (ঢাকা-৯) তিন বার নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের সাংগঠিক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটের মাঠে নতুন সাবেক ছাত্রনেত্রী চারদলীয় জোট প্রার্থী শিরিন সুলতানা৷ এই আসনের অলি গলি সাবের চৌধুরীর পরিচিত৷ এলাকার মেয়ে হলেও প্রথমবারের মত শিরিন সুলতানা নেমেছেন ভোটের মাঠে৷ বিগত নির্বাচনে জয়ী মির্জা আব্বাস দন্ডিত হওয়ায় এবার তিনি নির্বাচন করতে পারছেন না৷ শেষ মুহূর্তে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিলেও তার প্রধান প্রতিপক্ষ মির্জা আব্বাস৷ কারণ মির্জা আব্বাস মনে প্রাণে চাচ্ছেন না তার এলাকায় অন্য কেউ জিতে আসুক৷ কারণ শিরিনও রাজনৈতিক পরিবারের গৃহবধূ৷ যদিও চতুর শিরিন সব সময় পাশে রাখছেন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে৷ তারপরও ভোটের হিসেবে কোনভাবেই সাবের চৌধুরীকে পেরিয়ে যেতে পারছেন না তিনি৷ শেষ হাসি হয়ত হাসবেন সাবের চৌধুরীই৷

ঢাকা-১২
দুই প্রজন্মের দুই প্রার্থী এবার লড়ছেন ধানমিন্ডতে (ঢাকা-১২)৷ চারদলীয় জোটের প্রার্থী প্রবীন রাজনীতিক খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমাদ আর মহাজোট প্রার্থী নবীন ব্যারিষ্টার ফজলে নুর তাপস৷ দুই আইনজীবী প্রার্থীর বাড়িই গোপালগঞ্জ৷ প্রচারণায় নেই কোন অপপ্রচার৷ দু'জনই একে অপরের প্রশংশা করেন, নিজের জন্য ভোট চান৷ সাবেক এমপি হিসেবে মাহবুবউদ্দিন আহমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে৷ অন্যদিকে রাজনীতিতে নবীন তাপসের বিরুদ্ধে নেই কোন ধরনের অভিযোগ৷ দুর্নীতি কি তাও তিনি জানেন না৷ ফলে ভোটাররা বদলে যাওয়ার শ্নোগানে বেছে নিচ্ছেন তাপসকেই৷ এর সঙ্গে রয়েছে তাপসের 'সহানুভুতির' ভোট৷ বাবা-মা হারা এই এতিম ছেলেটিকে এলাকার মানুষের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা৷ তাই তাপসকে দেখে রাখার দায়িত্ব নিতে চান তারা৷ তরুণ এই আইনজীবী হয়ত বিপদেই ফেলবেন প্রবীন আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন আহমাদকে৷