1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌতুকের কারণে জানুয়ারিতেই ১৫ জন নিহত

Debarati Guha১৫ মার্চ ২০১২

যৌতুকের কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনা আগের থেকে বেড়ে গেছে৷ গত ৮ই মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’৷

https://p.dw.com/p/14Ko4
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb

সিরাজগঞ্জের বেলি খাতুন৷ সম্পন্ন ঘরেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছিলো৷ কিন্তু বিয়ের তিন বছর যেতে না যেতেই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হলো তার৷ বেলির বড় ভাইয়ের অভিযোগ, ‘‘কোনো দুর্ঘটনা নয়, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে৷''

বেলির ভাই মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেলির স্বামীকে দেয়া হয় সত্তর হাজার টাকা এবং এক ভরি সোনার গহনা৷ বিয়ের কিছুদিন পর আরো চল্লিশ হাজার টাকার জন্য বেলিকে চাপ দেয় তার স্বামী৷''

সেই টাকা আনতে দেরি হওয়ায় বেলিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং পরে দাম্পত্য কলহের কোনো এক পর্যায়ে তাকে পুড়িয়ে মারা হয় বলে জানান মেরাজুল৷

Muslimische Braut
বিয়ের সাজে (ফাইল ছবি)ছবি: AP

বেলির মতোই, আরো শত শত মেয়ে খুন হচ্ছে প্রতিবছর৷ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার তথ্য নিয়ে ‘অধিকার' নামের এই মানবাধিকার সংস্থাটি গত ক'দিন আগে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷

বাংলাদেশের ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা খবর এবং সংস্থাটির প্রায় তিন'শ মাঠ কর্মীর সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে প্রতিবেদনটি৷ সেখান থেকেই জানা গেছে যে, যৌতুকের কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই অন্তত ১৫ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে৷ আর গত ছয় বছরে খুন হয়েছে অন্ততপক্ষে ১,২৫৭ জন নারী৷ এছাড়া আত্মহত্যা, নির্যাতন ও তালাকের ঘটনা তো রয়েছেই৷

তবে এই প্রতিবেদন তৈরিকারী সংস্থা ‘অধিকার'-এর প্রকল্প সমন্বয়ক তাসকিন ফাহমিনা বলছেন, বাস্তবের চিত্রটা আরো ভয়াবহ৷

তাসকিন ফাহমিনা বলেন, ‘‘যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়ে ২০১০ সালে নিহত হয়েছে ২৩৪ জন৷ আর ২০১১ সালে যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন ৩০৫ জন৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, যৌতুকের কারণে যে পরিমাণ সহিংসতার ঘটনা বাস্তবে ঘটছে, তার তুলনায় প্রকাশিত ঘটনার পরিমাণ অনেক কম৷''

সামাজিক লোকলজ্জা, পারিবারিক সম্মানহানির কারণে নির্যাতিত অনেক নারীই আইনের আশ্রয় নেয় না বা খবর প্রকাশ করেন না৷ ফলে, আরো অসংখ্য ঘটনা আড়ালেই থেকে যায় বলেই মন্তব্য করেন তিনি৷

যৌতুকের বিরোদ্ধে দেশে কঠোর আইন আছে৷ কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এধরণের ঘটনা ত্রমাগত ঘটেই চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তাবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. এলিনা খান৷

এলিনা খান বলেন, ‘‘আমাদের দেশের যৌতুকের বিরোদ্ধে আমাদের দেশে দুটো আইন রয়েছে৷ এছাড়া আরো বিভিন্ন আইন আছে যেগুলো নারীর পক্ষে৷ কিন্তু সমস্যাটা হলো, আমাদের বিচার বিভাগ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা'র মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রয়েছে সামঞ্জস্যহীনতা৷''

তিনি বলেন, যৌতুকের কারণে মৃত্যু বা নির্যাতনের ঘটনায় যে সব মামলা হয়, দেখা যায় বছরের পর বছর সেগুলো আদালতে ঝুলে আছে৷ মামলার এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক সময় স্বাক্ষী হারিয়ে যায়৷ তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনেক আসামিই জামিনে ছাড়া পায় এবং বাদী পক্ষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে৷ ফলে, বাদী পক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই মামলা মীমাংসা করে নিতে বাধ্য হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

মামলা করার পর সাক্ষী না পাওয়ার ঘটনাটা নিহত বেলির ভাইয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে৷ বেলির ভাই মেরাজুল ইসলাম জানান, স্বাক্ষী না পেয়ে, পরবর্তীতে ছয় লক্ষ টাকার বিনিময়ে মামলা মীমাংসা করে নিয়েছেন তিনি৷

বিচারের দীর্ঘর্সূত্রিতা এবং শক্তিমানের বিরুদ্ধে দুর্বলের অসহায়ত্ব, এগুলো তো আছেই৷ তার ওপরে আছে আপোষকামী মানসিকতা৷ তাই, শুধু আইন দিয়ে যৌতুক সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন এলিনা খান৷

তাঁর মতে, ‘‘যৌতুক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে, একই সঙ্গে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে৷'' এসবের পাশাপাশি, মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা হলে যৌতুক সমস্যা কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি৷

প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য