1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অ্যালোন ইন বার্লিন'

আশীষ চক্রবর্ত্তী২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বার্লিনালেতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ছবি আজকাল কারো কারো কাছে একঘেয়েই লাগে৷ ‘অ্যালোন ইন বার্লিন' তাঁদেরও খুব ভাবিয়েছে, কাঁদিয়েছে৷ ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশের সব মানুষেরই দেখা উচিত, দেখে একটু ভাবা উচিত৷

https://p.dw.com/p/1HySr
Filmstill Alone in Berlin
ছবি: X Filme Creative Pool/Marcel Hartmann

‘অ্যালোন ইন বার্লিন'৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এক জার্মান দম্পতির সত্যিকারের গল্প নিয়ে নির্মিত ছবি৷ অভিনয় করেছেন এমা থম্পসন, ব্রেন্ডান গ্লিসন, ডানিয়েল ব্র্যুল-এর মতো তারকারা৷ আরো বড় কথা – ছবিটি ‘গোল্ডেন বেয়ার', অর্থাৎ বার্লিনালে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সেরা ছবি ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতাতেও ছিল৷

ফলে গত সোমবার, অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি পটসডামার প্লাৎসের মূল প্রদর্শনীস্থলে দর্শকের ঢল নেমেছিল৷ শো শুরুর পরও বাইরে ছিল শত শত আগ্রহীর ভিড়৷ বড় আশা নিয়ে এসে ছবিটি দেখতে না পারায় বিষণ্ণ মনে ফিরেছেন অনেকে৷ যাঁরা দেখেছেন বাড়ি ফেরার সময় তাঁরাও প্রসন্ন ছিলেন না৷ অটো আর আনার জন্য, শেষ দৃশ্যে আত্মশ্লাঘায় আত্মহত্যা করা পুলিশ কর্মকর্তার জন্য, সর্বোপরি দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধে প্রাণ হারাণো অযুত মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদছিল তাঁদের৷ থমথমে মুখগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ‘অ্যালোন ইন বার্লিন' দর্শকদের ছয় দশক আগের বার্লিনে ফিরিয়ে নিতে অনেকাংশেই সফল হয়েছে৷

Emma Thompson
এমা থম্পসনছবি: Getty Images/Z.Celotto

দর্শকরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিমগ্ন ছিলেন ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবিটিতে৷ ভিনসেন্ট পেরেসের নির্মাণশৈলিতে তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই৷ টানটান কাহিনি এবং এমা থম্পসন, ব্রেন্ডান গ্লিসনসহ অন্যদের অনবদ্য অভিনয়ই ছবির মূল শক্তি৷

কাহিনিও নতুন নয়৷ হান্স ফালাদার ‘ইয়েডার শ্টির্বট ফ্যুর অ্যালাইন' বা ‘এভরি ম্যান ডাইজ অ্যালোন' উপন্যাস অবলম্বনে এ ছবির কাহিনিও লিখেছেন পেরেজ৷ ছবির মূল চরিত্র জার্মানির সাহসী এক দম্পতি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে হিটলারের বিরুদ্ধে দু'জনই শুরু করেছিলেন নীরব যুদ্ধ৷ কাউকে আঘাত বা হত্যা করার যুদ্ধ নয়, যুদ্ধের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির যুদ্ধ৷ অটো কোয়াঞ্জেল ও তাঁর স্ত্রী শুধু পোস্টকার্ডে যুদ্ধবিরোধী ছোট ছোট বাক্য লিখেই অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন সেই যুদ্ধে৷ কিন্তু বার্লিনের আনাচে-কানাচে গোপনে ছড়িয়ে দেয়া পোস্টকার্ডগুলোর কয়েকটি চলে যায় গেস্টাপো বাহিনীর হাতে৷ তাতেই সর্বনাশ৷ ধরা পড়ে যান অটো-আনা৷ নাৎসি আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয় তাঁদের৷

অটো চরিত্রে ব্রেন্ডান গ্লিসন ও আনার ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন এমা থম্পসন৷ প্রথম দৃশ্যেই তাঁদের একমাত্র সন্তান গুলিতে লুটিয়ে পড়ে৷ সব দর্শকের চোখ সেই থেকেই পর্দায় স্থির৷ সন্তান হারানোর শোকে কাতর স্ত্রীর পাশে একটুখানি বসতে পারলেন না অটো৷ স্ত্রী তখন তাঁকেও দুষছেন৷ বাবা যুদ্ধে যাবার অনুমতি না দিলে তো সন্তানকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয় না!

Deutsche Welle DW Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

সন্তান হারিয়ে অটো কোয়াঞ্জেল যেন নিজের চেনা-জানা-সহজে মেনে আসা ভাবনার জাল ছিড়ে বাইরে উঁকি দিতে শিখলেন৷ বুঝলেন যুদ্ধ কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না৷ অকল্যাণকর, সর্বগ্রাসী যুদ্ধ ঠেকাতে তাই হাতে তুলে নিলেন পোস্টকার্ড৷

ছবির একটা দৃশ্য খুব দাগ কেটেছে মনে৷ সেই দিনটি অটো আর আনার প্রয়াত সন্তানের জন্মদিন৷ এক সময় অটোকে এগিয়ে আসতে দেখে আনার মনে হয়েছিল, অনেকদিন পরে স্বামী বুঝি একটু আনন্দে গা ভাসাতে চায়৷ আনা জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি নাচতে চাও?' মুখে কিছু বলেননি অটো৷ নীরবে, ধীরে ধীরে বিষাদে ঢাকা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে যেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার ভাষায় বলে যান,

‘‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য

ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা....''

সীমিত সামর্থ্য নিয়ে ধ্বংস রোধের চেষ্টা আমৃত্যু করে গেছেন অটো-আনা৷ বার্লিনে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে৷ সেই বার্লিনেই এখন বিশ্বের সব দেশের মানুষ সমবেত হয় যুদ্ধবিরোধী, নাৎসিবাদবিরোধী চেতনা নিয়ে৷ বাংলাদেশে এমন হবে কবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান