যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে ‘পারকুর’

সিরিয়ার ইনখিল শহরে কয়েকজনকে ‘পারকুর’-এ অংশ নিতে দেখতে পাচ্ছেন৷ পারকুর হচ্ছে এমন একটি খেলা, যার মাধ্যমে কেউ মেশিন বা অন্য কিছুর সাহায্য ছাড়াই লাফিয়ে বা অন্য শারীরিক উপায় ব্যবহার করে বাধা পেরোতে পারেন৷ ফ্রান্সে এই খেলাটির উদ্ভব হয়েছিল৷ ট্যাংক ছাড়াও বোমায় বিধ্বস্ত ভবন, ভেঙে যাওয়া জানালা ইত্যাদি ব্যবহার করেও পারকুর করে থাকেন সিরিয়ার ইনখিল শহরের ১৫ জন তরুণ৷

সিরিয়ায় ছয় বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ ইনখিল শহরটিও সরকার বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে৷ সবসময় যুদ্ধ কার ভালো লাগে? এ থেকে মুক্তি পেতেই তরুণরা পারকুরকে বেছে নিয়েছেন৷ ছবিতে ইব্রাহিম ইদকে বোমায় বিধ্বস্ত একটি ভবনের সামনে কসরত করতে দেখতে পাচ্ছেন৷

পারকুর করতে হলে শরীরকে অনেককিছু করার মতো গড়ে তুলতে হবে৷ ছবির এই দু’জনকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তাঁদের দেহ, মন পারকুরের জন্য প্রস্তুত৷ আশির দশকে ফ্রান্সে উদ্ভব হওয়ার পর ব্রিটেনসহ অনেক দেশেই পারকুর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ সিরিয়ার এই তরুণদের প্রশিক্ষক ইব্রাহিম আল-কাদিরি যখন পালিয়ে জর্ডান গিয়েছিলেন, সেখানেই তিনি প্রথম পারকুর সম্পর্কে জানতে পারেন৷

প্রশিক্ষক ইব্রাহিম তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে চা পান করছেন৷ যেদিন এলাকায় যুদ্ধের ডামাডোল থাকে না, সেরকম নীরব দিনগুলোতে পারকুর অনুশীলন করেন তাঁরা৷ বছর দুয়েক ধরে তারা এই কাজ করছেন৷ ‘‘এর মাধ্যমে আমরা যুদ্ধের পরিবেশ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে আর কিছু দুঃখ ভুলে থাকতে চেষ্টা করি,’’ বলেন তিনি৷

ইব্রাহিম তাঁর বাবার দোকানে কাজ করেন৷ শুরুতে বিপজ্জনক মনে হওয়ায় তাঁর পরিবার পারকুর করতে দিতে চায়নি৷ কিন্তু ইব্রাহিম তা শোনেননি৷ পরে ছেলের আগ্রহ দেখে তাঁর বাবা-মায়েরও পারকুরের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়৷ এখন তাঁরাও ছেলেকে উৎসাহ দিচ্ছেন৷

এই তরুণেরা একজন আরেকজনের ছবি ও ভিডিও তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন৷ পারকুর তাঁদের যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিলেও শারীরিক কিছু আঘাত দিয়েছে৷ পায়ের আঙুলে ব্যাথা, ঘাড় মচকে যাওয়া– এগুলো যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

১৮ বছর বয়সি মুহান্নাদ আল-কাদিরি বলেন, ‘‘আমি যখন উঁচু জায়গা থেকে লাফ দেই তখন আমি মুক্তি অনুভব করি এবং আমি এটি অনুভব করি৷ উঁচু এলাকা থেকে লাফ দেয়ার ক্ষেত্রে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে আমি ভালবাসি৷’’