1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘যারা ক্ষমতায় থাকেন তারাই আইন লঙ্ঘন করেন'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ মার্চ ২০১৮

বিএনপি'র অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাদের গ্রেপ্তার এবং তা নিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরাই আইন মানেন না৷ তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন৷''

https://p.dw.com/p/2u5Ng
ফাইল ছবিছবি: Reuters

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর থেকে তাঁর মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে দলটি৷ কিন্তু দলটির অভিযোগ পদে পদে তাদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে, আটক করা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের৷ মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে ঢুকে অস্ত্র উঁচিয়ে বিএনপি'র স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবুকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ৷ গোয়েন্দা পুলিশের সেই সশস্ত্র মহড়ার ছবি সংবাদ মাধ্যমে ছাপাও হয়েছে৷ এরপর বৃহস্পতিবার ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমানকে রীতিমত টেনে হেঁচড়ে পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়৷ বিএনপি'র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পরে যান সেই টানা হেঁচড়ার মধ্যে৷ অথচ এই প্রেসক্লাবের সামনেই পুলিশের কথায় ১৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি তাদের অনশন কর্মসূচি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করে দিয়েছিল৷

বৃহস্পতিবারের আটকের ঘটনার পর শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করলে পুলিশতো গ্রেপ্তার করবেই৷ আওয়ামী লীগ কোথাও রাস্তা বন্ধ করে সভা সমাবেশ করে না৷ একটি নির্দিষ্ট স্থানে সমাবেশ করা হয়৷ কিন্তু বিএনপি প্রেসক্লাবের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবেই৷ কারণ রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা বেআইনী৷ আর পুলিশ কাউকে বেআইনী কাজ করতে দেবে না৷ '' তাঁর এই বক্তব্য নিয়েই শুরু হয়েছে সমালোচনা৷

‘আইন শুধু বিএনপি’র জন্য?’

ওবায়দুল কাদেরের এই কথার জবাবে বিএনপি'র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, ‘‘ আমরা সব সময় পুলিশের অনুমতি নিয়েই সভা-সমাবেশ করেছি এবং করছি৷ বিএনপি'র কর্মসূচি যেখানে হচ্ছিল, তাতে মূল সড়কের যান চলাচল বিঘ্নিত হয়নি৷ প্রেসক্লাবের সমানের সড়কের মূল যান চলাচল নির্বিঘ্ন রেখে ফুটপাতের পাশে কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল৷ আমরা যে কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছি, তার রিসিভড কপি আমাদের কাছে আছে৷ পুলিশ কমিশনার সাহেব আমাদের মহাসচিবকে মৌখিকভাবে অনুমতির কথা বলেছেন৷ পুলিশ আমাদের বলেছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে করতে৷ আমরা তাদের কথা অনুযায়ী প্রেস ক্লাবের সামনে করেছি৷ ধড়পাকড়ের আগে আমাদের কোন ওয়ার্নিং দেয়া হয়নি বা কিছু বলাও হয়নি৷''

আজম খানের প্রশ্ন,‘আইন শুধু বিএনপি'র জন্য?' তিনি আওয়ামী লীগের বেশ কিছু সমাবেশের উল্লেখ করে বলেন,‘‘৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ঢাকা শহরের সব বাস ব্যবহার করে কর্মীদের জড়ো করেছে৷ সাধারণ মানুষ কোন যানবাহন পায়নি৷ তাতে আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি? আসলে বিএপিকে বর্তমান সরকার কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিই পালন করতে দিতে চায় না৷ যেকোন অজুহাতে নেতা-কর্মীদের আটক করছে৷ ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিলাম পাইনি৷ আমাদের সরকার এখন ঘরে বসে কর্মসূচি পালন করতে বলে৷ গণতন্ত্রকে তারা ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে৷''

‘সরকারি দলের লোকজনতো আর শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন না’

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সাধারণভাবে কোনো সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন৷ আর জনসাধারণের চলাচল ও যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার(মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেট্রোপিলটন পুলিশের ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় সভা সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়৷ আর পুলিশ কমিশনার যদি মনে করেন তাহলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো সভা সমাবেশ বা মিছিল বা কোনো ধরণের অস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন৷''

তিনি আরও বলেন, ‘‘যানবাহন ও জনগণের চলাচলে বিঘ্নিত এমন কোনো কাজ করা যাবে না৷ সেটা সভা সমাবেশ বা মিছিলের মাধ্যমে হতে পারে, অন্যভাবেও হতে পারে৷ আমরা প্রথমে অনুরোধ করি এধরণের কাজ বন্ধ করতে বা বিরত থাকতে৷ তাতে কাজ না হলে আমরা ছত্রভঙ্গ করতে শক্তি প্রয়োগ করি৷ আর এর বিপরীতে যদি কোনো অপরাধমূলক কাজ হয় তাহলে ধরণ অনুযায়ী আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেই৷''

‘আগে ক্ষমতাসীনদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে’

আইন প্রয়োগে পক্ষপাতের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করি৷ তবে আরো কিছু বিষয় আমাদের মাথায় থাকে৷ সরকারি দলের লোকজনতো আর শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে না৷ তারা এটা বজায় রাখার চেষ্টা করে৷''

রাস্তায় সভা-সমাবেশের ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী এং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘রাস্তাঘাট দখল করে সভা সমাবেশ ও মিছিল মিটিং-এর বিরোধিতা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে৷ এটা জনগণের স্বাধীন চলাচলের অধিকারের লঙ্ঘন৷ এর বিরুদ্ধে আইনও আছে৷ কিন্তু যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই এই আইন মানেন না৷''

তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীনরা যখন কোনো কর্মসূচি পালন করে তখন রাস্তা-ঘাট দখল করে তা করে, যানবাহনও দখল করে নেয়৷ ভয়াবহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়৷ অন্যদিকে, বিরোধীরা কোনো কর্মসূচি দিলে তা বন্ধ করতে পুলিশই রাস্তাঘাট ও যানবাহন বন্ধ করে দেয়৷ তাই আগে ক্ষমতাসীনদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷ তাদের দেখেই তো অন্যরা সেই পথে চলবে৷''

এ ব্যাপারে আপনাদের কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷