মূর্তি নয়, ভাবমূর্তি
৯ মার্চ ২০১৮মূর্তি ভাঙার রাজনীতি বরদাস্ত করছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আগেই জানিয়েছিলেন, রাজ্যে যে কোনো দলের মূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করবে প্রশাসন, দোষীদের শাস্তি পেতে হবে৷ কাজেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তাত্ত্বিক নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মূর্তি ভাঙচুর করতে যাওয়ার অপরাধে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়াকে৷
খোদ মুখ্যমন্ত্রীই পরে যাদের মাওবাদী বলে চিহ্নিত করেন৷ এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিনভর দফায় দফায় অশান্তি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়৷ কখনও বিজেপি বনাম তৃণমূল, কখনও হিন্দুত্ব অস্তিত্ব রক্ষা কমিটির সঙ্গে বামপন্থি ছাত্রদের৷
যাদবপুর বিশ্বদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী উদ্দালক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে সরাসরিই বললেন, ত্রিপুরায় লেনিন-মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙার চেষ্টায় তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে৷ কারণ, তাঁর মতে, ওটা নিছক মূর্তি ভাঙা, বা বিজয় উল্লাসের আতিশয্য নয়, ওটা বামপন্থিদের একটা রাজনৈতিক বার্তা দিতে চেয়েছে বিজেপি৷ যে বিরোধিতাকে এভাবেই তারা গুঁড়িয়ে দেবে৷ উদ্দালকের মতে, পালটা বক্তব্যটাও তাই একই রকম জোরালো হওয়া উচিত ছিল৷ মিছিল বা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সেই বার্তাটা পৌঁছনো সম্ভব ছিল না, যে তা হলে পালটা হামলাটাও একইরকম জোরদার হবে৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রাক্তন ছাত্রী, পুরোপুরি বামপন্থি বাড়ির মেয়ে নিলোভনা চক্রবর্তী যদিও মনে করছেন, পালটা মূর্তি ভাঙাটা আদৌ ঠিক হয়নি৷ কারণ তাতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে খামোকা গুরুত্ব দেওয়া হয়ে গেছে৷ নিলোভনার বক্তব্য, শ্যামাপ্রসাদর মূর্তিতে কালি লাগানো, বা ভাঙচুরের চেষ্টার ফলে যেটা হয়েছে, যারা জানতও না কে শ্যামাপ্রসাদ, তারাও কৌতূহলী হয়ে পড়েছে৷ তাঁর নামে গুগল সার্চের হার বেড়েছে৷
আবার ঠিক একই কারণে এই মূর্তিভাঙাকে সমর্থন জানিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, এই যে মূর্তিভাঙার জেরে লোকের কৌতূহল বেড়েছে, এটা খুব ভালো একটা দিক৷
লোকে জানুক, কে শ্যামাপ্রসাদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর কী ভূমিকা ছিল৷ অন্যদিকে লেনিনই বা কে, বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁর কী অবদান, সেটাও লোকে জানুক৷ মূর্তি ভাঙার পর এবার ভাবমূর্তির মূল্যায়ন হোক, মত অনিকেতের৷
তবে চমৎকার একটা অন্যতর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কথা বললেন কবি-প্রাবন্ধিক সুস্নাত চৌধুরি৷ প্রথমত তাঁর বক্তব্য, বিরোধী গোষ্ঠীর মূর্তি ভাঙার প্রবণতা আজকের না৷ বহু বছর ধরে এটা হয়ে আসছে৷ কিন্তু একদা অনুপম ভাস্কর্যের শহর কলকাতায় আজকাল এমন অনেক মূর্তিই দেখা যায়, যেগুলি এত কদাকার যে ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হয়৷ সেই সব মূর্তি বস্তুত ভেঙে ফেলাই উচিত ছিল৷ লোকে এই শৈল্পিক প্রেক্ষিত থেকেও যদি বিষয়টাকে দেখত!