1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুসলমানদের জীবনসঙ্গী খোঁজায় ইন্টারনেটে ডেটিং পোর্টাল

৩ মার্চ ২০১১

ইন্টারনেট আজকাল মানুষের জীবনের সর্বত্র জড়িয়ে রয়েছে৷ এমনকি পাত্রপাত্রীর বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই প্রযুক্তি৷ ২০০৭ সালে মুসলমানদের জীবনসঙ্গী খোঁজায় সাহায্যের জন্য জার্মানিতে একটি ইন্টারনেট পোর্টাল গড়ে তোলা হয়৷

https://p.dw.com/p/10ShD
ছবি: AP

ইন্টারনেটের এই ডেটিং পোর্টালে ইতোমধ্যেই তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ইউজার বা ব্যবহারকারী৷ বেশিরভাগই জার্মানি, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের মানুষ৷ তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সৌদি আরবের লোকজনও খুঁজে পাওয়া যাবে এই পোর্টালে৷ অল্প সময়ের মধ্যেই মুসলিম পাত্রপাত্রী খোঁজার এই ইন্টারনেট পোর্টালটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷

পাত্রপাত্রী খোঁজার অন্যান্য পোর্টাল থেকে এটির পার্থক্য হল, এখানে ইসলামিক ধ্যানধারণা ও মুল্যবোধকে বিশেষ করে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷ শুধুমাত্র বিবাহ ইচ্ছুক নারী পুরুষরাই এই পোর্টালে যোগ দিতে পারেন৷ কোলনের ৩৪ বছর বয়স্ক জেমিলে উজার তাঁদেরই একজন৷ সুদর্শনা এই নারী একজল ধার্মিক মুসলিম৷ প্রথম বিয়েটা ভেঙে গেছে তাঁর৷ আর একবার ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখতে চান তিনি৷ জেমিলে জানান, ‘‘আমার প্রাক্তন স্বামী মুসলমান হলেও তা ছিল শুধু মাত্র কাগজে কলমে৷ ধর্ম কর্ম নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতেন না তিনি৷ এজন্য এখন আমি এমন একজন জীবনসঙ্গী পেতে চাই, যিনি সচেতনভাবেই নিজ ধর্ম কর্ম পালন করেন৷''

Hadi Heidari Liebe 6
ছবি: Hadi Heidari

এই পোর্টালে যোগদানকারীরা নিজের ধর্মচর্চা সম্পর্কেও তুলে ধরতে পারেন৷ যেমন কেউ নামাজ রোজা নিয়মিত পালন করেন কিনা, ধর্মান্তরিত মুসলিম কিনা, মাথায় হিজাব পরেন কিনা বা এসম্পর্কে মনোভাব কী - এসব লিখে জানাতে পারেন পোর্টালে৷ ইচ্ছে করলে কেউ তাঁর ছবি নির্দিষ্ট কাউকে দেখানোর জন্য পাঠাতেও পারেন৷ মূলত মুসলিমদের জন্য হলেও, কখনও সখনও খ্রিষ্টানরাও যোগ দেন এই পোর্টালে৷ এ প্রসঙ্গে জেমিলে উজার বলেন, এই পোর্টালে একজন খ্রিষ্টান যোগাযোগ করেছিলেন আমার সঙ্গে৷ তাঁকে পছন্দ হয়েছিল আমার৷ কিছুদিন চ্যাটও করেছিলাম আমরা৷ কিন্তু তিনি ধর্মান্তরিত হননি৷ এ ব্যাপারে কিছুটা সময় চেয়েছিলেন৷ আমি বলেছিলাম, মুসলমান হলেই কেবল আমি মত দিতে পারি৷ অন্য সব দিক দিয়েই আমাদের মিলেছিল, কিন্তু ধর্মই ছিল একমাত্র বাধা৷ তাই বিষয়টি আর গড়ায়নি৷''

কম আকর্ষণীয় হলেও খ্রিষ্টানের চেয়ে মুসলমান পাত্রের পক্ষেই মত দেবেন জেমিলে৷ আর নাস্তিকের তো প্রশ্নই ওঠেনা জানান কোলনবাসী এই নারী৷ বন্ধুবান্ধবেরা অবশ্য তাঁর এই ধরনের চিন্তাধারায় বিস্মিত হয়৷ তাঁদের মতে আসল কথা তো মানুষটি, তাঁর ধর্মবিশ্বাস নয়৷ এই কথা শুনতে হয় তাঁকে সবসময়৷মুসলিম পোর্টালের পরিচালকরা অবশ্য এক্ষেত্রে খোলামেলা৷ তাঁদের একজন কাদির ইউচেল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে সবাই স্বাগত৷ অর্থাৎ কোনো ধর্মের মধ্যে পার্থক্য করিনা আমরা৷ অবশ্য এটা ঠিক যে, আমাদের এখানে বিশেষ করে মুসলমানরাই যোগ দেন৷ কিন্তু আমরা নিজেরা কোন বিভেদ সৃষ্টি করিনা৷''

Berlin Liebe Aus dem Palast betrachtet
ছবি: picture-alliance/dpa

ইন্টারনেট পোর্টাল ‘মুসলিম হেল্প'কে এখন সারা ইউরোপে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় পাত্র-পাত্রী খোঁজার প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করা হয়৷ ৩১ বছর বয়স্ক কাদির ইউচেল এবং স্যুনেইট টির্গিল হঠাৎ করেই এই পোর্টাল গড়ে তোলায় এসে পড়েন৷ কয়েক বছর আগে ব্রিটেনের এক বন্ধু হন্যে হয়ে মুসলমান পাত্রীর খোঁজ করছিলেন৷ অবশেষে ব্যর্থ হয়ে কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র সফটওয়্যারে দক্ষ এই দুই বন্ধুকে একটি ওয়েব সাইট গড়ে তোলার অনুরোধ জানান তিনি, যাতে বিয়ের জন্য মুসলিম পাত্র পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যাবে৷ প্রথম দিকে নিখরচায় একটি ওয়েব সাইট তৈরি করেন ইউচেল ও টির্গিল৷ তারপর কিছুটা ব্যবসায়িক বুদ্ধিও মাথায় খেলে যায় তাঁদের৷ এছাড়া, এই সাইটে আসতে থাকা আজে বাজে কিছু মন্তব্য রোধ করার জন্য মাসিক একটা সদস্য ফিও ধার্য করেন এই দুই তরুণ৷ পুরুষদের জন্য ১৯ ইউরো ৯০ সেন্ট৷ আর মেয়েদের জন্য ১০ ইউরো৷ দেখে শুনেই বক্তব্যগুলি প্রকাশ করেন তাঁরা৷ বর্ণ বৈষম্যমূলক বা কোনো ধরনের বেআইনি কথাবার্তা ঢুকতে পারেনা তাঁদের ওয়েব সাইটে৷

সুনেইট টের্গিল বলেন, ‘‘কেউ কেউ আবার দ্বিতীয় স্ত্রী খোঁজেন৷ কিন্তু আমাদের প্ল্যাটফর্মে তাঁদের জায়গা দেইনা৷ যাঁরা অবিবাহিত, বিপত্নীক বা যাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, শুধুমাত্র তাঁরাই স্থান পান আমাদের ওয়েব সাইটে৷''

মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা মুক্তমনা তাঁদের যেমন টানে এই ওয়েব সাইট, তেমনি গোড়া ধার্মিক মুসলিমদের মনেও আগ্রহ জাগায় এটি৷ বিশেষ করে যাঁরা কেবল পর্দানশিন ধার্মিক পাত্রীই খোঁজেন৷ জানান কাদির ইউচেল৷ এই ওয়েব সাইটের সাফল্য বোঝা যায় বিয়ের হার লক্ষ্য করলে, যা এখন ১৭ শতাংশ৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ