মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়-পত্র প্রদানের দাবি
১৮ আগস্ট ২০১১তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ
একাত্তরে যুদ্ধে অংশ নিতে সংগ্রাম কমিটি তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন জেলায়৷ আব্দুল হালিম মিরাজ ছিলেন যশোর সংগ্রাম কমিটির সদস্য৷ তখন যশোরে লেখাপড়া করতেন তিনি৷ ২৫ মার্চ পাকবাহিনী নিরীহ বাংলাদেশিদের উপর হামলা শুরু করলে মিরাজ মাগুরার ফিরে যান৷ একদিন তিনি খবর পেলেন, পাকবাহিনীর মাগুরা আক্রমণ করতে আসছে৷ তখনও যুদ্ধের জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ সম্ভব হয়নি৷ তবুও মিরাজসহ এক-দুই'শো মানুষ লাঠি, বল্লম আর তীর-ধনুক নিয়ে তৈরি হয় যুদ্ধের জন্য৷ ডয়চে ভেলেকে মিরাজ বলেন, ‘‘সেদিন প্রায় দশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেও পাকিস্তানি সেনাদের সন্ধান পাইনি৷ তারা ভিন্ন পথে ঝিনাইদাহ চলে যায়৷''
মাগুরা আক্রমণ
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল দুপুরের দিকে ঝিনাইদহ এবং যশোর থেকে পাক সেনারা একযোগে মাগুরার দিকে অগ্রসর হয়৷ মাগুরা শহরে প্রবেশের পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেনারা৷ এরপর মাগুরা শহরের পি,টি,আই-তে ক্যাম্প স্থাপন করে তারা৷ এই সংগঠিত শত্রু বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল মুক্তিসেনাদের৷ তবে সেনা প্রশিক্ষণের জন্য ভারত যাননি মিরাজ৷ বরং ভারত থেকে ফিরে আসা গেরিলাদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার নিয়মকানুন শিখে নেন তিনি৷ এছাড়া, বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেন তাঁরা৷ ভারত থেকেও সহায়তা আসে৷
আশীর্বাদ
সেসময় মাগুরার খারাপ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্যার পানি, নদী, খাল, বিল, বনাঞ্চল পাকবাহিনীর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ অন্যদিকে, মুক্তিবাহিনীর কাছে এসব আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়৷ মিরাজরা একের পর এক গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুপক্ষকে কাবু করে ফেলে৷ এছাড়া একাধিকবার পাক সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি হন ফরিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘তিনটি যুদ্ধ করেছি আমি৷ পাকসেনারা খামার পাড়া ক্যাম্প উড়িয়ে দেয়৷ সেসময় আমরা পাকিস্তানি বাহিনীর উপর হামলা চালাই৷ কাজলী এলাকায় নদীর এক পাড়ে অবস্থান নেই আমরা৷ আর অপরদিকে পাকবাহিনী৷ দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয় সেসময়৷ খামারপাড়ায় আরেক যুদ্ধে কয়েক পাক সেনা নিহত হয়৷''
মাগুরা শত্রুমুক্ত
ডিসেম্বরের সাত তারিখ মাগুরা শত্রুমুক্ত হয়৷ মুক্তিবাহিনীর উপর্যুপরি হামলা আর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় বিপর্যস্ত পাকসেনারা একরকম পালিয়ে মাগুরা ত্যাগ করে৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েক বছর চাকুরি করেছেন মিরাজ৷ এরপর ব্যবসা বাণিজ্যে মনোযোগী হন তিনি৷
হতাশ মিরাজ
বর্তমানে আব্দুল হালিম মিরাজ এর বয়স ৬৪ বছর৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে এই বীরসেনা শোনালেন হতাশার কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘সারাদেশে এখন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ৷ এর মধ্যে ৫০ হাজারই ভূয়া৷ আমরা চাচ্ছি আসল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পরিচয়-পত্র প্রদান করা হোক৷ সরকার এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের কোন পরিচয়-পত্র দেয়নি৷''
বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, মনে করছেন মিরাজ৷ এজন্য সরকার যে কাজ শুরু করছেন, সেটা স্বল্প সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়, মানছেন তিনি৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ