1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী সংগঠক ফরিদা আখতার

২০ জুলাই ২০১১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার সময় পাক সেনাদের গুলির মুখে পড়েন নারায়ণগঞ্জের বীর সাহসী নারী ফরিদা আখতার৷ সেই ঘটনার কারণে হারাতে হয় পাঁচ মাসের শিশু পুত্রকে৷ তবুও দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন সকল ত্যাগ শিকার করে৷

https://p.dw.com/p/11zy4
Farida Akhter, Freiheitskämpferin, Narayangonj, Bangladesch Text: Farida Akhter, Freiheitskämpferin, Narayangonj, Bangladesch Datum: 25.03.1985 Eigentumsrecht: Md. Harunur Rashid, Narayangonj, Bangladesch
ফরিদা আখতারছবি: Md. Harunur Rashid

‘‘মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সময় আমার এক ছেলেকে হারিয়েছি৷ পাক সেনারা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল৷ সেই গুলি আমার মাত্র পাঁচ মাসের শিশুপুত্রের গা ছুঁয়ে গিয়েছিল৷ তবে গুলিটা তার গায়ে লাগেনি৷ কিন্তু পাক সেনাদের গুলি থেকে বাঁচতে আমি যখন দৌড় দিয়েছি তখন ছেলেটা আমার হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল৷ সে ইরিখেতের মধ্যে পড়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করে রেড ক্রসের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি৷ কিন্তু তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি৷'' এভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট এবং ত্যাগের কথা বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আখতার৷

১৯৫২ সালের ২৩ মে নারায়ণগঞ্জে জন্ম এই বীর সাহসী নারীর৷ তাঁর বাবা আব্দুর রহমান মিয়া এবং মা বেগম আকরামুন্নেসা রহমান৷ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন থেকেই বিভিন্ন সংগ্রাম ও আন্দোলনের সাথে জড়িত ফরিদা আখতার৷ ১৯৬৯ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনসহ অন্যান্য সংগ্রামেও অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ফরিদা৷ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি৷ এসময়ই ছাত্রলীগের ঢাকা জেলার মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা ছিলেন৷ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আগরতলা পাড়ি দেন তিনি৷ পথে নানা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন৷ পাক সেনাদের গুলির মুখে পড়ে নিজের শিশু সন্তানকে হারাতে হয়৷ এরপরও নিজের লক্ষ্য থেকে এতোটুকু বিচলিত হননি তিনি৷

আগরতলা জয় বাংলা অফিসে গিয়ে হাজির হন৷ শুরু করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম৷ অন্যান্য সংগ্রামী নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী৷ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা ছিলেন ফরিদা আখতার৷ প্রথমদিকে আগরতলা রেডক্রস সোসাইটির সাথে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন তাঁরা৷ পরে গোকুলনগর এবং মতিনগর প্রশিক্ষণ শিবিরে অস্ত্রচালনা এবং চিকিৎসা সেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷ তবে সেসময় পুরুষ যোদ্ধাদের জন্যও যথেষ্ট অস্ত্র ছিল না বলে সশস্ত্র যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি তাঁর৷ অবশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা দিয়েছেন৷

এরপর বাসে সাময়িকভাবে গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার কাজ করতে থাকেন তিনি৷ এছাড়া বিশ্রামগড় হাসপাতাল ও মেলাঘর এবং হাপানিয়া শিবিরের দায়িত্ব পড়ে ফরিদার উপর৷ দীর্ঘ নয়মাসের ঘটনাবহুল দিনগুলোর কয়েকটি স্মৃতি তুলে ধরেন ডয়চে ভেলের কাছে৷ তিনি জানান, ‘‘কসবা সীমান্তে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে জিবি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ তার একটা পা এবং একটা হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল৷ আমি প্রায় প্রতিদিনই তাকে দেখতে যেতাম৷ তার অবস্থার খোঁজ খবর নিতাম৷ সে তেমন একটা কথা বলতো না৷ প্রায় সময়ই চুপ করে থাকতো৷ কিন্তু একদিন আমাকে কাছে ডেকে বলে যে, ‘আপা, আমার তো শরীর ভালো না৷ সময় শেষ হয়ে আসছে৷ তো আমার এই চিঠিটা কুসুমের কাছে পৌঁছে দেবেন৷' আখাউড়ার একটা ঠিকানা দেওয়া ছিল খামের উপর৷ কিন্তু আমি বিষয়টাকে সেভাবে গুরুত্ব না দিয়ে তাঁকে বললাম যে, ‘ঠিক আছে চিঠিটা আমার কাছে থাক৷ আপনি তো সুস্থ হয়ে যাবেন৷ তবে আপনি যদি যেতে না পারেন আমি খবর দেবো যে আপনি অসুস্থ এবং এই হাসপাতালে আছেন৷ কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও প্রয়োজন হলে আপনাকে এখানেই চিকিৎসা করা হবে৷' এরপরই সে আমার কাছে তাঁর কুসুমের গল্প শোনালো৷ যুদ্ধে আসার মাত্র দুই মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল৷ সে সময়ই তাকে রেখে যুদ্ধে চলে আসে৷ যাহোক এর কয়েকদিন পর সকাল বেলা সে আমার কাছে ডাব খেতে চাইল৷ কিন্তু আমি অন্য কাজের মধ্যে সেটা ভুলে গিয়েছি৷ পরে হঠাৎ মনে পড়লে তার জন্য ডাব নিয়ে এসে দেখি মাসুদ নামের সেই মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে৷ এই ঘটনা আমাকে খুবই মর্মাহত করে৷ তাকে সেখানেই দাফন করা হলো৷ এরপর আমি তার চিঠিটা খুলে পড়লাম৷ তাতে সে লিখেছিল যে, ‘কুসুম, আমার হাত-পা দুটোই নেই৷ তাই আমি বেঁচে থেকেও কোন লাভ নেই৷ তুমি তোমার মতো নিজের একটা পথ করে নিও৷ বিয়ে করে নিও৷' পরে কুসুমকে আমি খুঁজে বের করে জানলাম যে, অন্য একজনের সাথে তার ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে৷ তবুও আমি চিঠিটা আমি তার হাতে দিলে সে আর্তচিৎকার করে কান্নাকাটি করে৷ এই ঘটনাটি আমাকে সারাজীবন নাড়া দেয়৷''

মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় সারদা সেবা সংঘেরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফরিদা আখতার৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী এনে নারায়ণগঞ্জের মানুষের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি৷ এছাড়া যুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী লুপ্ত না করে যুদ্ধের পর সেটির নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ মহিলা সংঘ৷ মহিলা সংঘের শুরু থেকে এর সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আখতার৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান