1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারে সাংবাদিক গ্রেপ্তারে নিন্দা, মুক্তি দাবি

৮ জানুয়ারি ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ক্যানাডা, বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা মিয়ানমারে গ্রেপ্তার হওয়া রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছেন৷ চার সপ্তাহ আগে সাংবাদিক দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷

https://p.dw.com/p/2qUaS
Reuters Journalisten Wa Lone and Kyaw Soe
ছবি: Reuters/A. Slodkowski

রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ে ও-কে গত ১২ই ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের কাছের একটি এলাকা থেকে  গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশের আমন্ত্রণেই সেখানে গিয়েছিলেন তাঁরা৷ তাঁরা দু'জন রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷

২৭শে ডিসেম্বর তাঁদের দু'জনকে আদালতে হাজির করার পর ইয়াঙ্গুনের ইনসেইন কারাগারে পাঠানো হয়৷ তবে আদালতে আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছিলেন তাঁরা৷ আগামী বুধবার আবারো তাঁদের আদালতে হাজির করা হতে পারে৷

Myanmar Prozess Reuters-Journalist Kyaw Soe Oo in Yangon
কিঁয় সোয়ে ও-কে কোর্টে হাজির করা হলে তাঁর বোন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েনছবি: Reuters

মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য ঐ দু'জন সাংবাদিক অবৈধভাবে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷ ব্রিটিশ আমলের ‘সিক্রেটস অ্যাক্ট'-এর অধীনে তাঁদের বিরুদ্ধে এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷ 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রেসিডেন্ট  এবং প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে অ্যাডলার তাঁদের দুই সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন৷ সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘খুব শিগগিরই শুনানি শুরু হবে৷ এটা একেবারেই পরিষ্কার যে, তাঁরা কোনো ভুল করেননি, তাঁরা নির্দোষ৷ তাঁদের আটক করার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে৷ তাই মিয়ানমারে সব সাংবাদিককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া নিশ্চিত করতে হবে৷''

Myanmar Prozess Reuters-Journalist Wa Lone in Yangon
কোর্টে ওয়া লন ও তাঁর স্ত্রীছবি: Reuters

রোহিঙ্গা সংকটের নতুন আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা প্যানেলের প্রধান সুরাকিয়ার্ট সাথিরাথাই জানিয়েছেন, তিনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি'র জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বলেছেন যাতে মামলাটি নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা হয় এবং সঠিক নিয়ম মেনেই যেন বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়৷

ওয়াশিংটনভিত্তিক ফ্রিডম হাউজ এক বিবৃতিতে অবিলম্বে এই দুই সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেছে৷

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির সভাপতি বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা৷ মিয়ানমার সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে৷ ''

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি চায় এবং তাঁদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে চায়৷''

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দুই সেনেটরও এই সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করেছেন৷

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কানো বলেছেন, ‘‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষা করাও জরুরি৷''

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘‘মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং এই দুই সাংবাদিকের মুক্তির ব্যাপারে সব দেশের সম্ভাব্য সবকিছু করা উচিত৷''

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, ক্যানাডা, নরওয়ে এবং সুইডেনও অবিলম্বে রয়টার্সের এই দুই সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেছে৷ অস্ট্রেলিয়া এই গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷

নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক বলেছেন, ‘‘রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের আটক উদ্বেগজনক৷''

পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী ৫০ জন এক বিবৃতিতে রয়টার্সের এই সাংবাদিকদের আটকের ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হামলা' বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন৷

মোবাইলে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভিডিও

নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘‘দুই সাংবাদিককে এখনই মুক্তি দিতে হবে, নাহলে অং সান সু চি'র সরকারের উপর মানুষের যে অল্প আস্থাটুকু আছে, সেটাও থাকবে না৷''

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের ঘটনা যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য এই সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে৷

২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ হবে না: জাতিসংঘ

২০১৭ শেষ হয়ে নতুন বছর শুরু হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আসা বন্ধ হয়নি৷ ডিসেম্বরেও প্রায় ২৪০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ এছাড়া বছরের শুরু থেকে প্রতিদিনই অনেক মানুষ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা৷

২০১৮ সালের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে এসেছেন ৫০ বছরের আহমেদ৷ তিনি জানালেন, এক মাস আগে তার দুই ছেলে মাছ ধরতে গেলে, তাদের জবাই করে হত্যা করা হয়৷ সেখানকার পরিস্থিতি এখনো বদলায়নি৷

গত বছরের ২৫ শে আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷

এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)