হেলিকপ্টার ভেঙে দুই জার্মান সেনা নিহত
২৭ জুলাই ২০১৭উত্তর মালিতে হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে জাতিসংঘের মিনুসমা মিশনে সংশ্লিষ্ট দু'জন জার্মান সৈন্যের প্রাণ হারানোর খবরটি নিশ্চিত করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ বার্লিনে তিনি বলেন, ‘‘দেশের সেবায় এই দু'টি মানুষের মৃত্যু আমাদের সকলকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে ও আমাদের শোকবিহ্বল করেছে৷''
হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ার কারণ এখনও অজ্ঞাত৷ বাইরে থেকে আক্রমণের কোনো হদিশ এ যাবৎ পাওয়া যায়নি, বলে জানিয়েছেন জার্মান সেনা উপপ্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ইওয়াখিম ব়্যুলে৷ ‘টাইগার' গোত্রের হেলিকপ্টারটি স্থানীয় সময় দুপুর দু'টো বেজে কুড়ি মিনিটে গাও শহরের ৭০ কিলোমিটার উত্তরে ভেঙে পড়ে ও পুড়ে যায়৷ দৃশ্যত ভেঙে পড়ার আগে হেলিকপ্টার থেকে কোনো আপৎ সংকেত পাঠানো হয়নি৷ জাতিসংঘের মিশনের তরফ থেকে অকুস্থলে সৈন্য পাঠানো হয়েছে৷ নিহত সৈনিক দু'জনের পরিবারবর্গকে দুঃসংবাদ জানানো হয়েছে৷
ঘটনার তদন্ত চলেছে৷ ভূপাতিত হেলিকপ্টারটির ঠিক পিছনে আর একটি টাইগার হেলিকপ্টার আকাশে ছিল৷ এই দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটির পাইলট দৃশ্যত জানিয়েছেন যে, প্রথম হেলিকপ্টারটি ‘‘হঠাৎ এবং কোনোরকম আপৎকালীন সংকেত না পাঠিয়ে সামনের দিকে উলটে যায় ও সোজা মাটির দিকে পড়ে৷'' এ খবর দিয়েছে জার্মানির ‘ডের স্পিগেল' পত্রিকা৷
হেলকপ্টারটি মাটিতে যুদ্ধের প্রগতি পর্যবেক্ষণ করার সময় ভেঙে পড়ে, বলে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিবের এক মুখপাত্র জার্মান ডিপিএ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন৷ ত্রাণকর্মীদের অকুস্থলে পাঠানো হয়েছে, বলে তিনি জানান৷ মালির সামরিক মুখপাত্র দিয়ারান কোনে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দু'টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ চলছিল৷ (জার্মান) সৈন্যরা ওখানে পর্যবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত ছিলেন৷''
‘‘বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের কার্যকলাপের ফলে যে এ ধরনের প্রাণঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা দুঃখজনক'', বলে কোনে যোগ করেন৷
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন যে, তিনি টেলিফোনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে খবর দিয়েছেন ও ম্যার্কেল নিহতদের পরিবারবর্গকে তাঁর গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইমায়ারও তাঁর শোক ও সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তাঁর সমবেদনা জানিয়েছেন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তি অভিযানে জার্মানির অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
বিদেশে নিয়োজিত জার্মান সৈন্যদের প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটল প্রায় দু'বছর পর৷ শেষ ঘটনা ঘটেছিল আফগানিস্তানে, ২০১৫ সালে, যেখানে ২০০২ সাল যাবৎ ৫৬ জন জার্মান সৈন্য প্রাণ হারিয়েছেন৷
বর্তমানে মালিকেই জার্মান সৈন্যদের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক মিশন বলে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ বিদ্রোহীদের সাবেক ঘাঁটি গাও-তে মোট ৮৭৫ জন জার্মান সৈন্য নিযুক্ত আছেন৷ তাদের সঙ্গে চারটি পরিবহণ হেলিকপ্টার ছাড়া চারটি টাইগার জঙ্গি হেলিকপ্টার ছিল৷ মিনুসমা শান্তি অভিযানের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী দৃশ্যত যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেই টাইগার হেলিকপ্টারটির ভেঙে পড়ে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ আফ্রিকার গরমে এই হেলিকপ্টারগুলি ঠিকমতো কাজ করে কিনা, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে৷
এসি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, ডিডাব্লিউ)