মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্তে কংক্রিটের দেয়াল?
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলা হবে: মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নিয়েতোর সঙ্গে সাক্ষাতের স্বল্প আগে টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিছুদূর ইস্পাতের বেড়া এখনই আছে৷ এবার কি কংক্রিটের দেয়াল তৈরি হবে?
দেয়াল তৈরি ভালোই বোঝেন ট্রাম্প
‘‘আমি দেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটি সুবিশাল দেয়াল তুলব; অন্য কেউ আমার মতো ভালো দেয়াল বানাতে পারে না৷ আর আমি মেক্সিকোকে দিয়ে এই দেয়াল তৈরির দাম দেওয়াব’’, নির্বাচনি প্রচার অভিযানে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ এযাবৎ তিনি বিশেষ করে বহুতল ভবন আর হোটেল বানিয়েছেন৷ সীমান্তে প্রাকার তাঁর দশ-দফা অভিবাসন নীতির প্রথম দফা৷
মাঝপথে থেমে যায় সেই দেয়াল
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৩,২০০ কিলোমিটার, তার মধ্যে ১,১০০ কিলোমিটার পথ জুড়ে ইতিমধ্যেই বেড়া তৈরি হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ও মেক্সিকোর ছয়টি প্রদেশ এই সীমান্ত বরাবর৷ মরুভূমি থেকে শুরু করে মহানগরীর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেই সীমান্ত৷ এলাকাটি দুর্গম বলে মার্কিন নিউ মেক্সিকো রাজ্যে সীমান্তের একটি ক্ষুদ্র অংশ খোলা রাখা হয়েছে৷ অন্য অনেক জায়গায় সশস্ত্র সীমান্তরক্ষীরা টহল দিচ্ছে৷
অলঙ্ঘনীয়
মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, বলে অনুমান করা হয়৷ এই অভিবাসীদের অধিকাংশই আসেন মেক্সিকো থেকে৷ বেআইনিভাবে মার্কিন মুলুকে বাস করা খুব সহজ কাজ নয়৷ কিছু কিছু মেক্সিকানকে থাকতে দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের পরিবারবর্গকে মেক্সিকো থেকে নিয়ে আসতে দেওয়া হয় না, অর্থাৎ ভিসা দেওয়া হয় না৷
শুধু একটু স্পর্শ...
সীমান্তের বেড়া পরিবারদের আলাদা করে রাখে, বুকে জড়িয়ে না ধরে শুধু হাত ছুঁয়ে যেটুকু সান্নিধ্য, যেটুকু সান্ত্বনা পাওয়া যায়৷ ট্রাম্প যদি তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করেন, তাহলে ইস্পাতের বেড়ার ফাঁকটুকুও নিরেট কংক্রিট হয়ে যাবে৷
অন্যায় সন্দেহ
‘‘মেক্সিকো যখন এদেশে মানুষ পাঠায়, তখন তাদের সেরা মানুষগুলোকে পাঠায় না’’, নির্বাচনি প্রচার অভিযানে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ ‘‘ওরা এমন সব লোক পাঠায়, যাদের অনেক সমস্যা আছে৷ তারা ড্রাগস, অপরাধ, ধর্ষণ, এই সব নিয়ে আসে৷ তবে কিছু ভালো মানুষও আছে বলে আমি ধরে নিচ্ছি৷’’ ট্রাম্প বেআইনি অভিবাসীদের, অন্তত অপরাধীদের বহিষ্কার করতে চান৷ তবে সব হুমকি সত্ত্বেও বহু মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্রে আসার স্বপ্ন পরিত্যাগ করতে রাজি নন৷
মরুভূমি, সীমান্ত, মৃত্যু
কিছু মানুষের সমৃদ্ধির স্বপ্ন শেষ হয় সীমান্তে: কিছু যান কারাগারে, অন্যরা প্রাণ হারান রক্ষীদের গুলিতে৷ মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেড়ার ভিতর দিয়ে গুলি চালিয়েছেন, মিডিয়ায় যার তুমুল সমালোচনা হয়েছে৷ মেক্সিকোর ছ’জন নাগরিক এভাবে মারা যাওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট রক্ষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০১৫ সালে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্যের বিরুদ্ধে এক ফেডারাল কৌঁসুলি মামলা করেন৷
বন্দুক হাতে জমির পাহারায়
মার্কিন খামারচাষি জিম চিল্টন তাঁর জমি পাহারা দিচ্ছেন৷ তাঁর দু’লাখ বর্গমিটার পরিধির খামারটি অ্যারিজোনা রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, মেক্সিকোর সীমান্ত ঘেঁষে, মাঝে শুধু একটি কাঁটাতারের বেড়া৷ চিল্টন নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন, এমনকি মাঝেমধ্যে বন্দুক কাঁধে করতেও দ্বিধা করেন না৷
বেড়া শেষ হয় সমুদ্রে
সান ডিয়েগোর ওটি মিজা সীমান্ত পারাপার কেন্দ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অবধি বেড়ার শেষ সাড়ে ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অংশটিকে স্থানীয় লোকজন ঠাট্টা করে বলেন ‘তর্তিয়া ওয়াল’৷ তর্তিয়া হলো ‘স্প্যানিশ ওমলেট’৷
প্রতিবেদন: জাব্রিনা পাবস্ট/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ