1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষের আত্মসম্মান এবং আত্মমর্যাদা

১৯ জুন ২০১১

মানুষের আত্মসম্মান এবং আত্মমর্যাদায় কখনো আঘাত হানা যাবে না– কিন্তু যদি আঘাত হানা হয় তখন কী করা হবে?

https://p.dw.com/p/11fBj
কোথায় আত্মসম্মান?ছবি: picture-alliance/dpa

এর সঙ্গে এসেছে আরো বেশ কিছু প্রশ্ন – যদি বিশ্বায়নের ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ে? যদি তাদের ক্রমাগত শোষণ করা হয়? যদি আমরা আলোকিত ভবিষ্যতের কথা বলি, তাতে বিশ্বাস করি – তাহলে অবশ্যই এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে৷ মানবাধিকার রক্ষার প্রতিটি শর্ত পূরণ করতে হবে৷ প্রতিটি মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে৷ বেশ জোর দিয়ে কথাগুলো বলেছেন বার্লিনের জার্মান মানবাধিকার সংস্থার উপ-পরিচালক মিশায়েল ভিন্ডফুর৷

Internationaler Währungsfond in Washington DC
কোন ধরণের পরামর্শ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল?ছবি: picture alliance/dpa

১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য৷ এই অধিকার একটি রাষ্ট্র চাইলেও লঙ্ঘন করতে পারবে না৷ ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষদের রক্ষা করার একমাত্র হাতিয়ারের নাম ‘মানবাধিকার'৷ এ কারণে চাইলেই কোন রাষ্ট্র তার নাগরিকের ওপর পীড়ণ-নির্যাতন চালাতে পারে না৷ চাইলেই অবৈধভাবে কাউকে আটক করতে পারে না৷ জন্ম, গোত্র, গোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ কোন কারণই মানুষকে বৈষম্যের শিকার করতে পারে না৷

নাগরিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সংস্কৃতিক অধিকার নিয়ে পৃথিবীর সব মানুষ জন্মেছে৷ এবং জন্ম থেকে আমৃত্যু এই অধিকারগুলো প্রতিটি মানুষ ভোগ করতে পারে৷ আর এই অধিকারগুলোই বৈষম্য, হুমকি, হামলা অন্যায়-অত্যাচারের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত রেখেছে৷ পৃথিবীর সব দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর নজর রাখছে৷ যেখানে যখনই কোন অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেছে প্রতিবাদের সোচ্চার কন্ঠ৷ মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময়ই রক্ষাকর্তার দায়িত্ব পালন করেছে৷ তার মানে এই নয় যে, বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং এনজিওগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করার অধিকার রাখে৷

USA Wirtschaft Washington DC Zentrale der Weltbank Gebäude
ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরছবি: ullstein - Giribas

আন্তর্জাতিক চুক্তি সবচেয়ে বড় বাধা

মানবাধিকার রক্ষায় যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়ন করা হয় তাতে অনেক রাষ্ট্র স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায়৷ এর মূল কারণ হল – চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে চুক্তির অনুচ্ছেদগুলো নিজ দেশের আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷ তখনই রাষ্ট্রগুলো বেঁকে বসে৷ উদাহরণস্বরূপ এইচআইভির চিকিৎসার জেনেরিক ওষুধের কথা বলা যেতে পারে৷ পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি হয় এই জেনেরিক মেডিসিন এবং তা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ৷ তাই উন্নয়নশীল কিছু দেশ চেষ্টা করছে অল্প দামে এই জেনেরিক তৈরি করতে৷ বাঁধ সেধেছে আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং প্যাটেন্ট রাইট৷ এর মূল কারণ হল এর সঙ্গে জড়িত অর্থনীতি এবং পশ্চিমা বিশ্বের একচেটিয়া ব্যবসা করার প্রবণতা৷

মানবাধিকার তথা সুচিকিৎসার অধিকার ধুলোয় মিশেছে৷ এর সঙ্গে একযোগে কাজ করছে বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল৷ বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল উন্নয়শীল দেশগুলোকে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষিজমি বা কৃষিকাজের অবকাঠমো এবং সংস্কার নিয়ে মাথা না ঘামাতে৷ খাদ্য শস্য আমদানি করা হবে এই দেশগুলোতে৷ আর এ কারণে কৃষকদের কোন ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না৷ কৃষিকাজ থেকে তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে৷ তাদের কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাধা দেয়া হচ্ছে৷ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে খাদ্য শস্য রপ্তানি করা হবে এবং তা উন্নয়শীল দেশগুলোতে আমদানি করা হবে৷ তৃতীয় বিশ্বে কৃষিকাজকে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে, কৃষিকাজের জন্য জমি বাড়াতে কৃষকদের অনুৎসাহিত করছে বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল৷ কারণ এর ফলে পশ্চিমা বিশ্ব লাভবান হবে এবং সেটাই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি৷ ফলস্বরূপ ছোট-খাট কৃষিকাজের মাধ্যমে যে সব কৃষক জীবিকা নির্বাহ করে তাদের জন্য জীবন ধারণ হয়ে উঠেছে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য৷ কারণ আমদানি করা খাদ্যশস্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে৷

NO FLASH Strassenkind Afrika
অভুক্ত আফ্রিকাকে কোন পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে?ছবি: picture-alliance / Ton Koene

পশ্চিমা বিশ্ব সবসময়ই মুনাফায় আগ্রহী

তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দূর্বল রাষ্ট্রগুলো৷ অর্থনৈতিক জোর না থাকায় দেশগুলো উন্নতদেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না৷ আলাপ-আলেচনায়ও উদ্যোগী হতে পারে না৷ দরিদ্র দেশগুলোর রাজনৈতিক অবকাঠামো অত্যন্ত দূর্বল৷ ভেঙে পড়া অর্থব্যবস্থার কারণে দুনীতিগ্রস্ত সরকার কখনোই নাগরিকদের অধিকারের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করে না৷ আর তখনই আত্মসম্মানবোধ বা আত্মমর্যাদা হুমকির সম্মুখীন হয়৷ বিশেষ করে যে সব দেশে সারাক্ষণই সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে৷ সে দেশগুলোতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে৷ অর্থনৈতিকভাবে শক্ত এবং সবল দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে৷ কারণ প্রতিটি সংঘাত এবং সংঘর্ষের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য৷ এই দেশগুলোতে পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন৷ উদাহরণস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর কথা বলা যেতে পারে৷ সেখানে রয়েছে নানা ধরণের মূল্যবান খনিজ পদার্থ৷ সেগুলো উত্তোলন করা হবে মানবাধিকারের প্রতিটি শর্ত মেনে – এমনটিই বলা রয়েছে৷ কিন্তু দেখা গেছে দুর্নীতির কারণে সরকার এসব শর্ত মানতে একেবারেই রাজি নয়৷ চোরাই পথে এসব খনিজ পদার্থ আসছে ইউরোপে৷ আর এসব কারণেই আফ্রিকায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ৷ অনেক চেষ্টা করেও এই অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়নি৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: জাহিদুল হক