1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাইতী নেপাল এবং অনুরাধা কৈরালা

১৯ জুন ২০১১

২০১১ সালে যে ১০ জন সিএনএন হিরোজ এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নেপালের অনুরাধা কৈরালা৷ তার প্রতিষ্ঠান ‘মাইতী নেপাল’৷ তার সংগ্রাম ‘নারী ও শিশু পাচার রোধ’ করা৷

https://p.dw.com/p/11f0G
Nisha stands guard keeping an eye for women being trafficked into India to work as prostitutes at Kakarvitta border, 330 miles (525 kilometers) east of Katmandu, Nepal, Sunday, July 2, 2000. Nisha who was a sex worker in India now works with NGO's and UNICEF and helps identify girls being pushed into prostitution. There are estimated 200 thousand women from Nepal working as prostitutes in brothels across India.(AP Photo/Binod Joshi)
নেপালি কন্যাছবি: AP

সিএনএন প্রতিবছর বিশেষ একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ নাম সিএনএন হিরোজ এ্যাওয়ার্ড৷ এই পুরস্কারে কখনো সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, স্কুল শিক্ষক বা ব্যবসায়ীদের দেখা যায়৷ স্ব স্ব ক্ষেত্রে এরা রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর৷ মাইতী নেপালের প্রতিষ্ঠাতা অনুরাধা কৈরালা এর ব্যতিক্রম নন৷

মাইতী নেপাল একটি সংগ্রাম, একটি কণ্ঠ৷ যে কণ্ঠ নিপীড়িত, নির্যাতিত মেয়েদের কথা বলে৷ গৃহ নির্যাতন থেকে শুরু করে নারী ও শিশু পাচারের মত অপরাধকে রুখতে কাজ করছে মাইতী নেপাল৷ ১৯৯৩ সালে বেশ কিছু শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী এগিয়ে আসেন সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার জন্য৷ সক্ষম হয়েছেন এবং সাহায্য করছেন অসহায় মেয়েদের৷ এ পর্যন্ত প্রায় বারো হাজার মেয়েকে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে মাইতী নেপাল৷ জোর করে এসব মেয়েদের পতিতা করা হয়েছিল৷ শিশুদের নিয়োগ করা হয়েছিল বিভিন্ন কাজে৷ এসব থামাতে চেয়েছেন অনুরাধা কৈরালা৷ এ ধরণের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রেরণা উৎসাহ কীভাবে পেলেন?

অনুরাধা কৈরালা বললেন, ‘‘আসলে ১৯৯০ সালের আরো আগে থেকেই নেপালে মেয়েদের পাচার করা হত৷ শুরু হয়েছে ১৯২৬ সাল থেকে৷ কেউই কখনো এর প্রতিবাদ করেনি, এসব মেয়েদের সাহায্য করতেও কেউ এগিয়ে আসেনি৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর অনেকেই এ নিয়ে কথা বলা শুরু করে, প্রশ্ন করা শুরু করে৷ তখন বেশ কিছু সংস্থাও এগিয়ে আসে পাচার বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে৷ তবে মূল সমস্যা ছিল গ্রামগুলোতে৷ তখন আমরা কাজ শুরু করি গ্রামে৷ গ্রামের মানুষদের মানবাধিকার, নারীর অধিকার, শিশুর অধিকার নিয়ে কথা বলি৷ অথচ রাজধানী কাটমান্ডুতেই এসব অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে৷ এরপরই আমি প্রতিষ্ঠা করি ‘মাইতী নেপাল'৷''

Nepalese women sing and dance as they celebrate to plant rice seedlings on the outskirts of Katmandu, Nepal, Sunday, June 29, 2008. (AP Photo/Binod Joshi)
ছবি: AP

খুব ছোট আকারে শুরু হলেও এখন অনেক বড় একটি সংস্থা মাইতী নেপাল৷ কিন্তু তারপরও সরকারের কাছ থেকে কোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা ‘মাইতী নেপাল' পাচ্ছে না৷ ক্ষোভ দেখিয়ে অনুরাধা কৈরালা বললেন, ‘‘আর্থিকভাবে কোন সাহায্য আমরা সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছি না৷ তবে পুলিশ বাহিনী আমাদের সাহায্য করছে এবং আইনগত দিক থেকেও বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি৷''

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপ

তবে দেশে বিদেশে ‘মাইতী নেপাল'-এর কথা সবাই জানে৷ যে ধরণের কাজ সংস্থাটি করছে তাতে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তাই সরকারের কাছ থেকে কোন ধরণের সাহায্য না পেলেও ‘মাইতী নেপাল' নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে৷ বিভিন্ন সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রসঙ্গে অনুরাধা কৈরালা বললেন, ‘‘আমি যখন প্রথম প্রতিষ্ঠানটি চালু করি তখন আমি আমার নিজের টাকা এর পেছনে খরচ করেছি৷ এরপর ব্রিটেনের প্রিন্স চালর্স প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন৷ সেই অর্থ দিয়ে আমরা কিছু জমি কিনি৷ প্রতিষ্ঠানটিকে বাড়াই৷ এছাড়া জার্মানির সোনিয়া কিল ফাউন্ডেশন আমাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে৷ এই যে এত বিশাল ভবনে আমরা কাজ করছি তা এই ফাউন্ডেশনই গড়ে দিয়েছে৷ সংস্থাটি এখনও আমাদের সাহায্য করছে৷ এছাড়া বোনো-ডিরেক্টহিল্ফেও আমাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করছে৷ আমরা সাহায্য পাচ্ছি কার্ল-মার্ক্স ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও৷''

এ বছর অনুরাধা কৈরালা সিএনএনের হিরোজ এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন৷ পুরস্কার হাতে তুলে দিয়েছেন হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ডেমি মুর৷ পুরস্কার দেয়ার আগে ‘মাইতী নেপাল'-এর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি দেখানো হয়৷ এরপরই অনুরাধা কৈরালাকে ডাকা হয় স্টেজে পুরস্কার নেয়ার জন্য৷ উপস্থিত দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন অনুরাধা কৈরালাকে৷ কেমন ছিল পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি? অনুরাধা কৈরালা উচ্ছাস, ‘‘আমি যখন এই পুরস্কার পাই তখন আমি অ্যামেরিকাতেই ছিলাম৷ প্রথমেই আমার মনে হয়েছে যে সব মেয়েকে আমি সাহায্য করেছি, আমার সেই মেয়েগুলো কেন কাছে নেই? এটাতো ওদেরও পুরস্কার৷ আমার মনে হয়েছে এই সময়ে আমার উচিত ছিল ওদের কাছে থাকার৷ তবে আরেকটি দিক হল আমি যে কাজ করছি, যে সমস্যা তুলে ধরেছি তা বিশ্ববাসী জানছে, দেখছে৷ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আজ এক স্বরে বলবে, ‘‘হ্যাঁ নারী-পাচার তীব্র একটি সমস্যা৷'' আমি আশা করছি এখন সারা বিশ্ব আমাকে সাহায্য করবে, সহযোগিতা করবে৷ হয়তো একদিন আমরা এমন একটি পৃথিবী পাবো, সমাজ পাবো যেখানে মানুষকে আর পাচার করা হবে না৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন