দ্য কোরস
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩সবচেয়ে ছোট বোন আন্দ্রেয়া কোর জেন যেন হ্যামেলিনের সেই বাঁশিওয়ালা৷ বাঁশিতে সুর তুললে বিমোহিত হয়ে যান শ্রোতারা৷ টিনের বাঁশি, যা কিনা আয়ারল্যান্ডের ঐতিহ্যেরও অংশ৷ যে বয়সে ওই বাঁশির সঙ্গে প্রথম মিতালি, আন্দ্রেয়া অবশ্য তখন ঐতিহ্য-টৈতিহ্য কী বস্তু বোঝেই না৷ পরিবারের চতুর্থ এবং শেষ সন্তান তখন যা হাতে নেয় কিছুক্ষণ পর তা-ই হারিয়ে ফেলে৷ পরিবারের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী সব ভাই-বোনই কিছু না কিছু বাজাতো৷ আন্দ্রেয়ার নেশা বাঁশিতে৷ যে বাদ্যযন্ত্রটিকে ভালোবেসে ফেলেছে, তা বারবার হারালে তো মুশকিল! একই জিনিসের পেছনে অবিরাম পয়সা ঢেলে যেতে বাধ্য করায় বাবা-মার বকুনি জুটবেই৷ মেয়েটি ঠিক করলো, বাঁশি বাজাবেই, তবে বাবা-মায়ের কষ্ট বাড়ানো চলবে না৷ সেই ভাবনা থেকে অন্য কোনো বাঁশির কথা ভাবেই নি৷ আন্দ্রেয়ার বয়স এখন ৪০ হতে চলেছে৷ সেই টিনের বাঁশি আছে, আর সেই সুবাদে হাজার হাজার মুগ্ধ শ্রোতাও আছে তাঁর সঙ্গে৷
দ্য কোরস৷ জগত মাতিয়ে দেয়া আইরিশ ব্যান্ড৷ আন্দ্রেয়া সেখানে শুধু বাঁশিই বাজান না, চার জনের ব্যান্ডের প্রধান গায়িকা এবং গীতিকারও তিনি৷ অনেক জনপ্রিয় গান তাঁর লেখা৷ টপ চার্টে ‘দ্য কোরস' নামটা দেখা যায় প্রায়ই৷ ব্যান্ডটির জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে বড় কৃতিত্ব আন্দ্রেয়াকেই দিয়ে থাকেন ভক্তকূল৷ আন্দ্রেয়ার তাতে বেজায় আপত্তি৷ বড় ভাই জিম কোর সঙ্গে না থাকলে কী এত কিছু সম্ভব হতো?
ব্যান্ডে জিমের প্রত্যক্ষ ভূমিকা কি-বোর্ড এবং গিটার বাজিয়ের৷ কিন্তু পরোক্ষে কত কী যে করেন তার হিসেব ক'জন রাখেন! জিমের পিঠেপিঠি বোন শ্যারন বাজান বেহালা, পরের জন ক্যারোলিন আসর মাতিয়ে রাখেন ড্রাম আর ড্রামেরই আইরিশ সংস্করণ বোধরান বাজিয়ে৷ তিন বোন দেখতেও বেশ৷ তাঁদের ছেড়ে মঞ্চের একমাত্র পুরুষটির প্রতি বেশি মনযোগ দেয়ার যুক্তি মিডিয়াই বা খুঁজবে কেন?
কেউ জানতে না চাইলেও আন্দ্রেয়া, ক্যারোলিন আর শ্যারন সব সাক্ষাৎকারে সুযোগ মতো ঠিকই বলে দেন বড় ভাইয়ের অবদানের কথা৷ বড় সন্তান হিসেবে পরিবার আর শিল্পী হিসেবে সংগীতের প্রতি দায়িত্ব সেই কবে থেকেই তো নীরবে পালন করে যাচ্ছেন জিম৷ ছেলে ভালোভাবে হাঁটতে শেখার আগেই শিল্পী বাবা-মা তাঁকে বসিয়ে দিয়েছিলেন পিয়ানোর সামনে৷ একসময় গান, কি-বোর্ড আর গিটারেও ওস্তাদ হয়ে যান জিম৷ একা বা অন্য কোনো ব্যান্ডে যোগ দিয়েও নাম কামানো সম্ভব ছিল৷ একটা ব্যান্ডে যোগ দিয়ে সেই সম্ভাবনা জাগিয়েওছিলেন৷ কিন্তু তখন থেকেই তাঁর ভাবনায় আদরের তিন বোন৷ তাই যখন মনে হলো বোনগুলো প্রতিভা এবং গানের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে প্রস্তুত, তখনই জিম নেমে পড়েন পরিবারের পদবী ‘কোর'-কে হৃদয়ের মতো ব্যান্ডের নামে রেখে নতুন করে পথ চলতে৷
বড় কষ্টের সেই পথ চলা৷ ভাই-বোনেরা খুব ভালো গাইতে, বাজাতে পারেন, সে কারণে নেচে-গেয়ে-বাজিয়ে আসর মাত করতে খুব একটা সময় লাগেনি৷ কিন্তু দেশের বাইরেও নিজেদের তুলে ধরবেন কী করে? পেশাদার প্রডিউসার না থাকলে তো এ যুগে এগোনোই যায় না৷ এক শুভাকাঙ্খীর পরামর্শে বোনদের নিয়ে জিম গিয়েছিলেন সেই মুহূর্তে মাইকেল জ্যাকসনের ‘হিস্টরি' অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত ডেভিড ফস্টারের কাছে৷ সরাসরি ‘না' বলেন নি তিনি, শুধু একটু সময় চেয়েছিলেন৷ কিন্তু এ খবর পেয়েই চটে যান জ্যাকসনের দেহরক্ষী৷ কোর পরিবারের চার সন্তানকে ফস্টারের ধারেকাছেও ঘেঁষতে না দিতে তারপর তিনি কী কী করেছিলেন, সে এক বিশাল গল্প৷ ‘দ্য কোরস' অবশ্য সেই অধ্যায় পেছনে ফেলে অনেক এগিয়ে এসেছে৷ গানবাজনা যে কত আনন্দের, কত উপভোগ্য একটা শিল্প – তা হেসেখেলে বোঝাতেই ব্যস্ত তাঁরা৷ শুনুন, দেখুন – তাহলেই বুঝতে পারবেন ‘দ্য কোরস' কেন সবার চেয়ে আলাদা৷