1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহীয়সী নারী ‘মাদার টেরেসা’র জন্ম শতবর্ষ

২১ আগস্ট ২০১০

দুঃস্থ ও আর্ত মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ মাদার টেরেসা ছিলেন বহু মানুষের কাছে আশার আলো৷ জীবনে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েও, নিজের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাননি তিনি৷

https://p.dw.com/p/Ot0S
Pope John Paul, Mother Teresa, Calcutta, India, মহীয়সী , নারী, মাদার টেরেসা,
কলকাতায় মাদার টেরেসা’কে ধরে আছেন পোপ দ্বিতীয় জন পল (ফাইল ছবি)ছবি: AP

মাদার টেরেসার জন্ম ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট, আজকের ম্যাসেডোনিয়ার রাজধানী স্কপিয়োতে৷ আসল নাম আগ্নেস গঞ্জে বয়াজু৷ বাবা ছিলেন আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত এক ব্যবসায়ী৷ সচ্ছল এক পরিবারে ক্যাথলিক ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন তিনি৷ মাত্র ১৭ বছর বয়সে স্বদেশ ত্যাগ করে আয়ারল্যান্ডের সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায় মিশনারি হিসাবে যোগ দেন তিনি৷ ১৯২৮ সালে প্রথমবারের মত ভারতে যান মাদার টেরেসা এবং দার্জিলিংএর লোরেটো কনভেন্টে সন্নাসী হওয়ার দীক্ষা নিতে শুরু করেন৷ এ প্রসঙ্গে মাদার টেরেসা বলেন, ‘‘এটা হল ঈশ্বরের ভালবাসা৷ ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে ভালবাসেন, আমাদের নাম জানেন৷ তিনি ফুল, মাঠ বা প্রকৃতির সব সৌন্দর্যের চেয়েও মানুষের ভাল মন্দের দিকে নজর রাখেন বেশি৷''

১৯৩০ সালে কোলকাতার সেন্ট মেরি ক্যাথলিক গার্লস স্কুলে পড়ানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাদার টেরেসা ৷ ১৯৪৬ সালে ট্রেনে করে দার্জিলিং যাওয়ার দীর্ঘ পথে গভীর এক চেতনা জেগে ওঠে তাঁর মনে, যেন ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান তিনি৷ দরিদ্র থেকেও দরিদ্র মানুষদের সেবা করাই হল তাঁর মিশন৷ ১৯৪৮ সালে পোপের অনুমোদন নিয়ে কনভেন্ট ত্যাগ করে ‘অর্ডার অফ সিস্টার্স' গড়ে তোলেন তিনি৷ নীল পাড়ের সাধারণ সুতির সাদা শাড়ি হয় এই সব সিস্টারের পোশাক৷ ১৯৫০ সালে আত্মপ্রকাশ করে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি' সংস্থা, স্বীকৃতি পায় ভ্যাটিকানের৷

কলকাতার রাস্তাঘাটে অনেক দরিদ্রকে মারা যেতে দেখেছেন টেরেসা৷ অজ্ঞান এক মহিলাকে দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি, যার দেহের অর্ধেকটা ইঁদুর ও পিঁপড়ায় খেতে শুরু করেছে৷ সিস্টার টেরেসা স্থির করলেন কাউকে আর একা মরতে দেয়া হবেনা৷ তিনি মরণাপন্ন মানুষদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নগর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় হিন্দু মন্দিরের পাশে পরিত্যক্ত এক বাড়িকে ‘হোম ফর দ্য ডাইং'এ পরিণত করেন৷ পরে যেটির নাম দেয়া হয় ‘নির্মল হৃদয়'৷ এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে কিছুটা শান্তি ও সম্মান পেতেন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষরা৷ পেতেন চিকিৎসা ও পেটভরে খাবার৷ আজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তাদের শেষ আশ্রয় পেয়েছেন এই কেন্দ্রে৷ এই প্রসঙ্গে মাদার টেরেসা বলেছেন, ‘‘মৃত্যু হল মানুষের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি৷ কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে শান্তি নিয়ে মরতে পারে, তা হলে তার পক্ষে জীবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোও সহজ হয়৷''

দরিদ্রদের সাহায্য করার কাজটা প্রথম দিকে খুব সহজ ছিলনা মাদার টেরেসার পক্ষে৷ অর্থের জন্য ধনী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে তাঁকে৷ হতাশাও পেয়ে বসেছে কখনও কখনও৷ তবে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি অচিরেই দেশ বিদেশের দাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়িয়ে দেন অনেকে সাহায্যের হাত৷ মাদার টেরেসা নিজেকে কখনও সমাজকর্মী হিসাবে দেখেননি৷ তাঁর মতে ধর্মের বিশেষ করে যিশু খ্রিষ্টের নির্দেশে তিনি দরিদ্রদের সেবায় ব্রতী হয়েছেন৷ ‘‘কাজটা তাঁর জন্য যেন উপাসনা''৷

অচিরেই মিশনারিজ অফ চ্যারিটির শাখা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার নানা দেশেও৷ বিভিন্ন স্থানে খোলা হয় আশ্রয় ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ইত্যাদি৷ মাদার এগিয়ে আসেন কুষ্ঠ রোগীদের সেবায়৷ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবদরদী এই নারী৷ ছুটে গিয়েছেন ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্থ মানুষদের কাছে, উদ্ধার করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে আহত বাচ্চাদের৷ মাদার টেরেসার মতে, ‘‘পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কোন না কোন ভাবে কষ্ট পায়৷ এই কষ্টকে যিশু খ্রিষ্টর প্রতি ভালবাসায় রূপান্তরিত করতে হবে৷ বিশেষ করে আজ যেখানে পাপে ভরে গেছে চারিদিক৷''

মিশনারিজ অফ চ্যারিটির আওতায় এখন বিশ্বব্যাপী ৪০০০ নান কাজ করছেন৷ ১৩০টি দেশে ৬০০'রও বেশি সাহায্য কেন্দ্র চালাচ্ছে তাদের কর্মকান্ড৷ জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মহীয়সী এই নারী৷ ১৯৭৯ সালে পান নোবেল পুরস্কার৷ ১৯৮০ সালে দেয়া হয় তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন৷ কিন্তু অহমিকা কখনও স্পর্শ করতে পারেনি ক্ষণজন্মা এই মানুষটিকে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ