দরকার স্থায়ী পুনর্বাসন
১৮ মে ২০১৩কিভাবে আবার নতুন করে ঘর তৈরি করবেন, উঠে দাঁড়াবেন তা নিয়েই দুঃচিন্তায় আশ্রয়হীন উপকূলের এসব মানুষ৷ যদিও সরকার ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ বাড়ি-ঘর তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সহায়তারও আশ্বাস দিচ্ছেন তারা৷
প্রতিবছর এক একটি ঝড় আসবে আর বাড়ি-ঘর নিয়ে যাবে, পরে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ঘর-বাড়ি তৈরি করে বেঁচে থাকবে উপকূলের মানুষ – এভাবে ভাবতে রাজি নন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. এম এস আকবর এমপি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আশ্রয়হীন এসব মানুষের জন্য প্রয়োজন স্থায়ী পুনর্বাসন৷ সরকার বা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের যে সাহায্য-সহযোগিতা করছে, তা অস্থায়ী না হয়ে স্থায়ী হলে মাঝে মধ্যেই এসব মানুষকে ঘর ছাড়তে হবে না৷''
স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাখা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এমন ঘরবাড়ি তাদের নির্মাণ করে দেয়া দরকার যে, এই ধরনের ঝড়ে তাদের আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে না৷ আসল কথা পাকা দালান কোঠা নয়, এমন কিছু করা দরকার যা ঝড়ে অন্তত উড়ে যাবে না৷ নিজের ঘরেই যেন তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন, তেমন ব্যবস্থা করতে হবে৷ সেটা করা গেলে জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতিও কমবে৷
ডা. এম এস আকবর বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার একটি গ্রামে ২শ'ঝড় প্রতিরোধক ঘর নির্মাণকরা হয়েছে৷ এবারও এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ তবে রেড ক্রিসেন্ট করলেইতো আর হবে না, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ তিনি বলেন, উপকূলের মানুষ সব সময় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন৷ আসলে এই ধরনের দুর্যোগে তারা শেষ সম্বল গরু-ছাগল, হাস-মুরগি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না৷ ফলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যায়৷ তাই এসব মানুষের নিজের ঘরবাড়ি শক্ত হলে জীবনহানি যেমন কমবে, তেমনি তাদের শেষ সম্বলটুকুও আর হারাতে হবে না৷
প্রতিবছরই কোনো না কোনো নামে ঝড় আঘাত হানছে৷ আর ঝড় শেষে পুনর্বাসনের পেছনে প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়৷ তবে একবারেই সবাইকে স্থায়ী পুনর্বাসন করা যাবে এমনটি নয়৷ কিছু কিছু করে শুরু করলে এক সময় পুরো উপকূলের সব মানুষকেই স্থায়ী কিছু করে দেয়া যাবে৷
‘মহাসেন' চলে গেছে, কিন্তু উপকূলের কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি, রাস্তা ঘাট বিধ্বস্ত করে রেখে গেছে৷ বরগুনা, পটুয়াখালি ও ভোলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি৷ ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে উঠতি রবি ফসলের৷ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপকূলের অনেক এলাকা৷ ঘূর্নিঝড়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর তা নিরূপণের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন৷ শুক্রবারও দেখা গেছে, কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও মানুষের ভিড় রয়েছে৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কিন্তু বাড়ি-ঘর না থাকায় এসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছেন না৷
নোয়াখালির হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহিদুর রহমান টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, উপজেলার নিঝুম দ্বীপের কয়েকটি চর ও নদীর পাড়ের নলের চর, কেয়ারিং চর, নঙ্গলিয়ার চর, চর বাসার, চর কিংসহ ১২টি ইউনিয়নে শতশত কাঁচাঘর, কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে৷ উপড়ে পড়েছে শত শত গাছপালা৷ এর বাইরে কয়েক হাজার হেক্টর জমির বাদাম, সয়াবিন ও অন্যান্য রবিশস্যের ক্ষেতে পানি জমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ তিনি বলেন, নদীর পাড়ের ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার প্রায় লক্ষাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল৷ এখনও অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন৷ তাদের সবাইকে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পুরোটা নিরূপণ করার পর ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারিভাবে ত্রাণ দেয়া হবে৷
এছাড়া স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সরকারি সিদ্ধান্ত৷ সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে৷ তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছে করলে এই ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷