‘মহারাজা, তোমারে সেলাম’
বিশ্বের দরবারে বাঙালি সংস্কৃতির উজ্জ্বল প্রতিনিধি সত্যজিৎ রায়৷ অস্কারবিজেতা চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ, চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিক রূপেও সমাদৃত৷ ২ মে, জন্মবার্ষিকীতে তাঁর ঘর ঘুরে এসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন.....
শততম জন্মদিন
বেঁচে থাকলে এই বৈশাখে শতবর্ষে পা রাখতেন সত্যজিৎ রায়৷ ১৯২১ সালের ২ মে তাঁর জন্ম৷ আমবাঙালির সঙ্গে শ্রদ্ধা পুত্র সন্দীপ রায়ের৷
হলুদ বাড়ির তিনতলায়
শুধু বাড়ি বললে কম বলা হবে৷ বলা ভালো, সৃষ্টির সূতিকাগার৷ বিশপ লেফ্রয় রোডের দি প্রপার্টি ইন্ডিয়া কোম্পানির বাড়িতে সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাটিয়েছেন৷ তাঁর লেখা-আঁকা আর চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনী দক্ষতার সাক্ষী তিনতলার ঘরগুলি৷
ভরা থাক স্মৃতিসুধায়
এই বাড়ির ইঁট-কাঠ-কড়ি-বরগায় এক দীর্ঘদেহী মানুষের স্মৃতি৷ তাঁকেই ছুঁয়ে দেখার চেষ্টাই যেন ভক্তদের৷ জন্মদিনে মানিকবাবুর বসার ঘর জমজমাট৷ অতিথি আপ্যায়নে তাঁর পুত্র সন্দীপ৷
বারান্দার স্মৃতি
ছোটবেলা থেকেই তাঁর পছন্দ ছিল বারান্দা৷ ভবানীপুরে মামার বাড়ির বারা্ন্দা সম্পর্কে নিজেই বলেছেন, ‘‘শোবার ঘর থেকে বেরিয়েই বারান্দা, সকাল-দুপুর-বিকেলভরে দেখতাম রাস্তায় কতরকম লোকের চলাফেরা৷’’ বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ির লম্বা লাল বারান্দা জুড়ে তাঁর কত স্মৃতি জড়িয়ে৷ পুত্রের জন্মদিনে বাবা সুকুমার রায়কেও স্মরণ৷
তোমার সৃষ্টির পথ
বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার প্রথম কৃতিত্ব তাঁরই৷ কলকাতা পুরসভা বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালকের স্মৃতিধন্য বিশপ লেফ্রয় রোডকে শিল্পীর সৃষ্টিতে সাজিয়েছে৷ রাস্তার দুধারে ভিক্টোরিয়ান যুগের আদলে তৈরি আলোকস্তম্ভের সঙ্গে সত্যজিতের আঁকা পোস্টার যেন তাঁর নিবাসের দিকচিহ্ন৷
দাদু-নাতি যুগলবন্দি
বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, ‘‘...বাংলা শিশুসাহিত্য এই রায়চৌধুরীদের পারিবারিক এবং মৌরশি কারবার ভিন্ন কিছুই নয়৷’’ উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিতের তিন প্রজন্মকে কুর্নিশ জানায় বাঙালি৷ দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অসামান্য সৃষ্টি গুপী গাইন-বাঘা বাইনকে বইয়ের পাতা থেকে চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে এনেছিলেন সত্যজিৎ৷ কলকাতায় জহরলাল নেহরু রোড থেকে বিশপ লেফ্রয় রোডে ঢোকার মুখে ‘হীরক রাজার দেশে’র পোস্টার৷
এ তোমার মাটি
দক্ষিণ কলকাতার লি রোডের খুব কাছেই ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোড৷ এটাই রায় পরিবারের ঠিকানা৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নামকরণ করেছেন ‘সত্যজিৎ রায় ধরণী’৷ সরণী নয়, কারণ এটাই ছিল মানিকবাবুর সৃষ্টির আপন ভুবন৷
বাঙালি গোয়েন্দার বিশ্বজয়
সত্যজিৎ সৃষ্ট তুখোড়, মেধাবী, অসামান্য পর্যবেক্ষণশক্তির অধিকারী ও অসীম সাহসী গোয়েন্দা প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা সববয়সি পাঠকের একান্ত প্রিয়জন৷ রহস্যের জট ছাড়াতে তাঁকে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হলেও তিনি আদ্যোপান্ত বাঙালি যুবক৷ ছাপার অক্ষরে ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বময়৷ সত্যজিতের ফেলুদার ফরাসি, ইতালীয়, জাপানি ও জার্মান অনুবাদের প্রচ্ছদ৷
দেশেও ফেলুদার জয়জয়কার
সত্যজিতের চলচ্চিত্রের মতো সাহিত্যের চাহিদা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায়৷ গোয়েন্দাকাহিনী থেকে আশ্চর্য সব ছোটগল্পের অনুবাদ হয়েছে৷ ওড়িয়া, গুজরাতি, মারাঠি, মালায়ালম ভাষায় অনূদিত বইয়ের প্রচ্ছদ৷
চলচ্চিত্রের নেপথ্য ভাবনা
কোনও কাহিনী থেকে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে অভিনেতার কস্টিউম থেকে কেশসজ্জা, সব কিছুতেই নিখুঁত ডিটেলিংয়ে বিশ্বাসী ছিলেন সত্যজিৎ৷ তা সে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা নরেন্দ্রনাথ মিত্রের কাহিনী হোক, কিংবা নিজের লেখা ফেলু মিত্তিরের উপন্যাস৷ সোনার কেল্লা’র জন্য ফেলুদা এবং ভিলেন মন্দার বোস ও ডাক্তার হাজরার মেক-আপ ভাবনার স্কেচ৷
নিঁখুতেই নজর
খুঁতখুঁতে ছিলেন বলেই নিখুঁত না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়তেন না৷ ফেলুদার খাস কলকাতার রহস্য কাহিনী ‘বোসপুকুরে খুনখারাপি’র খসড়া দেখেই সেটা বোঝা যায়৷ তাঁর হাতে লেখা খসড়াটির সঙ্গে আঁকা প্রচ্ছদ৷
নতুন যুগের কেতা
সিনেমা আর গল্পের বাইরে ফেলুদা অনেক আগেই টিভি সিরিয়াল ও কমিক্সে হাজির হয়েছেন৷ এখন ব্যাটম্যান, সুপারম্যানের মতো টি-শার্টেও হাজির তিনি৷ বিপণনের জগতে ছোটদের সঙ্গে মোলাকাতের জন্য নয়া রাস্তা এই ফেলুদা টি-শার্ট৷ ৩০০ টাকায় দেদার বিকোচ্ছে কলকাতার আইসিসিআর-এ৷
তথ্যচিত্রে সত্যজিৎ
পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সত্যজিৎ তৈরি করেছেন তথ্যচিত্রও৷ ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘সিকিম’, ‘সুকুমার রায়’, ‘বালা’, ‘ইনার আই’ প্রভৃতি৷ তাঁর জীবন ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক তথ্যচিত্র৷ জন্মদিনে নতুন একটি তথ্যচিত্রের মুক্তি সন্দীপ রায় ও সব্যসাচী চক্রবর্তীর হাতে৷
দেওয়াল জুড়ে সত্যজিৎ
ছোটদের জন্য লেখালেখি ও ছবি তৈরিতে খুব উৎসাহী ছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ তাদের রং-তুলিতেই ফুটে উঠেছেন তিনি৷ একটি কর্মশালায় ছেলেমেয়েরা এঁকেছে সত্যজিতের পৃথিবীকে৷ নেহরু চিল্ড্রেন্স মিউজিয়ামের দেওয়ালে৷