অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস
১৭ এপ্রিল ২০১৮রায়ের পরই ইস্তফা দেন আদালতের বিচারক৷ তাঁর ইস্তফা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন৷
পুরানো হায়দ্রবাদ শহরের চারমিনারের কাছে ঐতিহাসিক মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর রায়ে মূল অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দসহ পাঁচজনকে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে নির্দোষ বলে খালাস করে দেন জাতীয় তদন্তকারী আদালত৷ অভিযুক্ত পাঁচজনই কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য৷ দীর্ঘ ১১ বছর ধরে মামলা চলার পর গতকাল সোমবার রায় ঘোষণা হয়৷ রায় ঘোষণার পরই নাটকীয়ভাবে ইস্তফা দেন বিচারক কে.রবীন্দর রেড্ডি৷ তাঁর ইস্তফার প্রেক্ষিতে এই রায় নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক৷ অভিযোগ উঠেছে, এই রায়ের পেছনে সম্ভবত কোনো চাপ ছিল৷ জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে অপব্যবহার করা হয়েছে বলেও ধারণা করছেন কেউ কেউ৷ আসাম মাইনরিটি সেলের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘কিছু তো একটা হয়েছেই৷ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিচারককে কোনো-না-কোনোভাবে হুমকি দিয়ে বাধ্য করা হয়েছে৷ চাপ দেওয়া হয়েছে এই ধরনের রায় দিতে৷ পেশাগত নৈতিকতায় বিচারক সেটা মেনে নিতে পারেননি৷ প্রতিবাদ হিসেবে ইস্তফা দিয়েছেন৷''
এই রায় নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে চলে তীব্র চাপানউতোর৷ ঐ বিস্ফোরণকাণ্ডের পরই সাবেক কংগ্রেস জোট সরকার হিন্দু সন্ত্রাসবাদ তত্ত্ব তুলে ধরেন৷ অভিযোগ ছিল, বিস্ফোরণের নেপথ্যে হাত ছিল বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-এর৷ কিন্তু এই রায়ে হিন্দু সন্ত্রাস তত্ত্ব ধোপে টিকলো না৷ মুখ পুড়লো কংগ্রেসের৷ কারণ, এনআইকে কাজে লাগিয়েছে সাবেক কংগ্রেস সরকার, এমনটাই অনেকে মনে করছেন৷ বিজেপির তরফে বলা হয়, এই রায়ের পর গেরুয়া সন্ত্রাস নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধী যা বলে এসেছেন, তার জন্য তাঁদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত৷
এই রায় পক্ষপাতমূলক বলে মন্তব্য করেন নিখিল ভারত মজলিসি-ই- ইত্তেহাদুল মুসলিমিন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন ওয়েইসি৷ তিনি মনে করেন, এই রায়ে ন্যায়বিচার হয়নি৷ সামগ্রিকভাবে ভারতের মুসলিম সমাজ মর্মাহত৷ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা গোলাম নবী আজাদ মনে করেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলির ওপর দেশের মানুষ আস্থা হারাচ্ছে৷
২০০৭ সালের ১৮ই মে হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদ কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণে৷ নিহত হয় নামাজ পড়তে আসা নয় জন, আহত হয় বহু৷ ঐ ঘটনার পর মসজিদের বাইরে মারমুখী জনতার বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ গুলি চালায়৷ তাতেও একাধিক ব্যক্তি হতাহত হয়৷ ঐ বিস্ফোরণে নাম জড়ায় উগ্র হিন্দুত্বত্বাদী আরএসএস সংগঠনের৷ প্রাথমিক তদন্তে হায়দ্রাবাদ পুলিশ এক উগ্রপন্থি মুসলিম গোষ্ঠী হরকতুল জেহাদের কাজ বলে সন্দেহ করে৷ তারপর তদন্তভার চলে যায় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই-এর হাতে৷ তারা সন্দেহ করে এর পেছনে হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের হাত আছে৷ সেখান থেকে ২০১১ সালে জাতীয় তদন্ত এজেন্সি এনআইএ তদন্তে নামে৷
আসাম মাইনরিটি সেলের সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম এই রায় প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে আরো বলেন, ‘‘আগে আমরা দেখেছি, ভারতের আইন ব্যবস্থা কত শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছিল৷ আজকের দিনে আমরা বিজেপিশাসিত ভারতে দেখছি, দেশের গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ এই দেখুন, সুপ্রিম কোর্টের চার জন বিচারক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদে নামলেন৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে৷ তিন তালাক, মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণকাণ্ড, বিচারকের পদত্যাগ ইত্যাদি দেখে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, দেশের আইন বা বিচার ব্যবস্থার ওপর বিজেপি সরকারের একটা চাপ রয়েছে৷ এটা ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষে আদৌ শুভ লক্ষণ নয়৷ আরও দেখছি, মোদীর সরকারে একটা হিটলারি শাসন কায়েম করার প্রবণতা৷ মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যদি এই কাজ না করে থাকে, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি যদি না করে থাকে,তাহলে কে এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী? ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলির উচিত তাদের খুঁজে বের করা৷''
কে এই অসীমানন্দ?
তার আসল নাম নব কুমার সরকার৷ স্বঘোষিত সন্যাসী এবং আরএসএস-এর প্রচারক৷ বোটানিতে এম-এ৷ আদি নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়৷ থাকতেন হরিদ্বারের আশ্রমে৷ সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ২০১০ সালে৷ আজমীর দরগা, মালেগাঁও এবং সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণকাণ্ডের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের সন্দেহ৷