1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মঙ্গলগ্রহে বরফ খুঁজে পেয়েছে নাসার নভোযান ফিনিক্স

দেবারতি গুহ২৮ জুন ২০০৮

মঙ্গলগ্রহ নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই৷ অনেকের মতে পৃথিবী ছাড়া আর অন্য কোন গ্রহে যদি প্রাণ থেকে থাকে, তবে তা আমাদের ছায়াপথের এই রক্তিম গ্রহটিতেই৷

https://p.dw.com/p/ESGa
সৌর জগতের রক্তিম গ্রহ মঙ্গলছবি: picture-alliance/ dpa

পৃথিবীর নিকটতম এই গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব কিনা - সেটা নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীরা জলের অস্তিত্ব সন্ধানের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বহুদিন যাবত্৷ তাই ফিনিক্সের সেখানে বরফ খুঁজে পাওয়ায়, এবার এক যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হল৷

আসলে ২০০২ সালেই বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের মেরু অঞ্চলের মাটির নীচে বরফজমা জলের সন্ধান পান৷ আর সেই জলের নমুনা সংগ্রহ এবং জীবনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের খোঁজেই, ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে ফিনিক্সকে মঙ্গলে পাঠানো হয়৷

এর আগে ১৯৯৯ সালেও অবশ্য মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা, মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণের চেষ্টা চালায়৷ কিন্তু মিশনের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেই চেষ্টা বিফল হয়৷

এবারে, মঙ্গলগ্রহের মেরু অঞ্চলে নভোযান ফিনিক্সের রোবোটিক হাতের খোঁড়া একটি গর্তের, পর পর কয়েকদিনে তোলা ধারাবাহিক ছবি থেকে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা৷ প্রথম তোলা ছবিতে অবশ্য শুধু এটাই দেখা গিয়েছিল যে সেই গর্তের ভেতর অবস্থিত লালচে মাটিতে, চাঁই আকৃতির বেশ বড় সাদা পদার্থ পড়ে আছে৷ কিন্তু, পরের দিকের তোলা ছবিগুলিতে ধারাবাহিকভাবে সেসব সাদা পদার্থ মিলিয়ে যেতে দেখা যায়৷
তবে সেই সাদা পদার্থ যে বরফ লবণ বা অন্য কিছু নয়, সে বিষয়ে সন্দেহ দূর করতে, গত ২৫-শে মে মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণ করে ফিনিক্স৷

আর তখনই কয়েক ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে সেখানে সাদা বরফের মতো পদার্থ দেখতে পেলেও সতর্ককতার কারণে পরীক্ষা না করেই তাকে 'বরফ' বলে ঘোষণা করেনি নাসা৷ পরে অবশ্য সেই পর্যায়ক্রমিক ছবিগুলি থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, যে তাঁরা একটি বরফে আচ্ছাদিত স্তরে আছেন এবং তাঁদের এই অভিযানের বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য পূরণ হতে চলেছে৷ আর তারপরই, নভোযান ফিনিক্সের এই মঙ্গল অভিযানের প্রধান অনুসন্ধান কর্মকর্তা, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিটার স্মিথ অত্যন্ত আনন্দ আর গর্বের সঙ্গে জানান, যে তারা মঙ্গল গ্রহে জমে যাওয়া জল অথবা বরফের সন্ধান পেয়েছেন৷


কিন্তু, বিজ্ঞান বলে কথা ! তাই, আগামী সপ্তাহগুলিতে আবারো মঙ্গলের বরফ ও মাটি পরীক্ষা করে দেখবে বৈজ্ঞানিকরা৷ শুধু তাই নয়, জৈবিক উপাদান অনুসন্ধানের জন্য এসবের ভূ-তাত্ত্বিক ইতিহাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে বলেও জানিয়েছে নাসা৷

মঙ্গলগ্রহে জলের অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা যখন তুঙ্গে - ঠিক তখনই মঙ্গলগ্রহের জন্ম রহস্য সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা গেছে৷ এতকাল বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, বিশালাকার এক উল্কাপাতের ফলে মঙ্গলগ্রহ বর্তমান রূপ পেয়েছে৷ এবার মঙ্গলগ্রহের উত্তর মেরুতে সেই আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে৷ উত্তর গোলার্ধের মসৃণ উপত্যকা ও দক্ষিণ গোলার্ধের পার্বত্য এলাকার মধ্যে বৈপরীত্য ঠিক এই কারণেই দেখা যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

এর আগে এত খুঁটিনাটি অঙ্ক করে মঙ্গলগ্রহের এই বিষয়টির বিশ্লেষণ করা হয় নি৷ এই হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৩৯০ কোটি বছর আগে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কোনো মহাজাগতিক বস্তু মঙ্গলগ্রহে আঘাত করেছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসেচুসেট্‌স প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে৷ আমাদের সৌর জগতে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা অতি বিরল৷

এদিকে, চীনের মহাকাশ সংস্থা China National Space Administration এবং রাশিয়ার Russian Federal Space Agency-র মধ্যে সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ এই চুক্তি অনুযায়ী সম্ভবত ২০০৯ সালের অক্টোবার মাসে, রাশিয়ার এক রকেট ২টি মানুষবিহীন মহাকাশযান উত্‌ক্ষেপণ করবে৷ সেই রকেটের মাধ্যমে চীন একটি ছোট স্যাটেলাইট এবং রাশিয়া Phobos Explorer নামের আরেকটি মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে পাঠাবে৷ সেই রকেট মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে পৌঁছতে ১০ থেকে ১১ মাস সময় নেবে৷ তারপর চীন-এর স্যাটেলাইট-টি রকেট থেকে বিযুক্ত হয়ে মঙ্গলগ্রহ প্রদক্ষিণ শুরু করবে৷ শোনা যাচ্ছে, রাশিয়ার Phobos Explorer-এর মধ্যে যেসব যন্ত্রপাতি থাকবে, তার অংশবিশেষ আসবে হংকং-এর পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷

অন্যদিকে, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ESA এমন লোকের খোঁজ করছে, যারা স্বেচ্ছায় মঙ্গলগ্রহ অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত৷ তবে এই অভিযানে মহাকাশে পাড়ি দেওবার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ সেটা কিরকম ? আসলে মঙ্গলগ্রহে যাবার প্রস্তুতি নিতে পৃথিবীতে বসেই পুরো প্রক্রিয়াটা যতটা সম্ভব নকল করার চেষ্টা করা হবে৷ এর জন্য ESA রাশিয়ার Institute of Biomedical Problems-এর সঙ্গে একযোগে ৬ ব্যক্তিকে মোট ৫২০ দিনের জন্য নকল মঙ্গলগ্রহ অভিযানে পাঠাতে চায়৷ তবে একেবারে টানা ৫২০ দিনের অভিযান শুরু করার আগে ২০০৮ সালে ১০৫ দিনের ২-টি ছোট অভিযানের আয়োজন করা হবে৷ এরপর হয় এ-বছরের শেষে অথবা ২০০৯ সালে ৫২০ দিনের একটানা অভিযান শুরু হবে৷ আর তার জন্য সব মিলিয়ে ১২ জন ব্যক্তির প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে৷ যাদের বয়েস হতে হবে ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো হওয়া প্রয়োজন এবং যেটা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন, সেটা হলো মহাকাশ ও এই অভিযানের প্রতি তাদের অদম্য উত্‌সাহ৷ Mars 500 নামে ESA-র এই প্রকল্পে সক্রিয় হবার জন্য আবেদনের শেষ তারিখ চলতি বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর৷