ভোঁদড়ের বিষ্ঠা থেকে মহার্ঘ কফি
টডি ক্যাট কফি বিন বা ‘কোপি লুওয়াক’-এর দাম পড়ে ইউরোপে কিলো প্রতি ২২০ ইউরো৷ এশিয়ান সিভেট ক্যাট নামের ভোঁদড়টি থাকে প্রধানত ইন্দোনেশিয়ায়৷ তাদেরই বিষ্ঠা থেকে পাওয়া যায় ঐ সৌখিনতম কফি৷
এশিয়ান সিভেট ক্যাট কফির বিচি খেতে পছন্দ করে
লাল রঙের কফি ফলের সামনে শুয়ে রয়েছে এক সিভেট ক্যাট৷ এই ভোঁদড়রা অ্যারাবিকা, লাইবেরিকা আর এক্সেলসা কফির ‘বেরি’ বা কুল খেতে ভালোবাসে৷ পরে তাদের বিষ্ঠার সঙ্গে যে কফির বিচিগুলো বেরিয়ে আসে, সেগুলো রোস্ট করে ‘কোপি লুওয়াক’ নাম দিয়ে বিক্রি করা হয়৷ এই কফি বিশ্বের সবচেয়ে দামী বলে পরিচিত৷
খাঁচায় বন্দি
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, জাভা আর সুলাভেসি দ্বীপগুলোর খামারগুলিতে যেভাবে এই কোপি লুওয়াক ভোঁদড়দের রাখা হয়, তা পশুপ্রেমিকদের পছন্দ নয়৷ বহুমূল্য কফি উৎপাদনের জন্য হাজার হাজার টডি ক্যাটকে জঙ্গল থেকে ধরে খাঁচায় পুরে রাখা যায়৷ সেখানে তাদের অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে শুধু কফি বিন খাইয়ে রাখা হয়৷
ভোঁদড়ের বিষ্ঠা থেকে কফি
দিনে একবার করে ভোঁদড়দের বিষ্ঠা সংগ্রহ করা হয়৷ বালি দ্বীপের এই ছোট খামারটিতে নয়টি টডি ক্যাট আছে৷ বছর দু’য়েক হলো এই খামারে কোপি লুওয়াকের চাষ হচ্ছে৷ এলাকার গরীব চাষিদের কাছে তাদের জীবিকার মূল্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের চেয়ে বেশি৷
সর্বভূক
মুক্ত প্রকৃতিতে একটি ভোঁদড় বছরে ২০০ থেকে ৩০০ কিলোগ্রাম কফি বিন ‘উৎপাদন’ করে৷ কফির কুল ছাড়া সিভেট ক্যাটরা অন্যান্য ছোটখাট জীবজন্তু, কেঁচো ইত্যাদি খায়৷ কোপি লুওয়াকের উৎকর্ষ নির্ভর করে কি ধরনের কফি, কতোটা বৃষ্টি পড়েছে আর যে মাটিতে কফির বিচিগুলো পড়েছিল, তার উপর৷
দাম কিভাবে চড়ে
কোপি লুওয়াক যখন শেষমেশ পশ্চিমের দোকানে-বাজারে বিক্রি হয়, তখন তার দাম বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায়৷ এশিয়ায় তার দাম যেখানে কিলোগ্রাম প্রতি ৪০ ইউরো, সেক্ষেত্রে ইউরোপে কোপি লুওয়াকের দাম পৌঁছায় কিলোগ্রাম প্রতি ২০০ ইউরোয়৷ এই কফি বিশেষ রকম মোলায়েম বলে পরিচিত, যেহেতু কফির বিচির তিক্ত উপাদানগুলি ভোঁদড়ের পেটে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বদলে যায়৷
দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য
ইন্দোনেশিয়া যখন ওলন্দাজ উপনিবেশ ছিল, তখন ভোঁদড়ের বিষ্ঠার কফি শুধু ‘নেটিভ’-দের জন্যে বলে মনে করা হতো৷ আজ সেই কফি একটি মহার্ঘ পণ্যে পরিণত হয়েছে৷ জার্মান প্রাণিবিজ্ঞানী আলফ্রেড ব্রেম উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে দেখেছিলেন, ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় মানুষজন কিভাবে কফির বিন কুড়িয়ে, পরে তা থেকে একটা পানীয় তৈরি করছে৷
প্রতিবেদন: কার্স্টেন গ্রুন/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী