1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি মিডিয়ার আরো সহনশীল হওয়া প্রয়োজন’

৩ মে ২০১৭

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পোল্যান্ডের মতো দেশে সাংবাদিকদের উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে, বাড়ছে প্রকাশ্য সংলাপের সঙ্কীর্ণতা৷ ইনেজ পোল-এর মতে এজন্য মিডিয়াও খানিকটা দায়ী৷

https://p.dw.com/p/2cHKt
Türkei Protest für Pressefreiheit
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Suna

পরিসংখ্যান দেখলে ঘাবড়ে যেতে হয়৷ সারা বিশ্বে ক্রমেই আরো বেশি সাংবাদিক চাপের মুখে পড়ছেন, কাজে বাধা পাচ্ছেন, হুমকি শুনছেন, কারারুদ্ধ হচ্ছেন – এমনকি প্রাণ হারাচ্ছেন৷ আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ সত্ত্বেও মিশর বা বুরুন্ডির মতো দেশের সরকার সাংবাদিকদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছেন৷

তুরস্কে গতবছর একটি সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সাংবাদিকদের পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে৷ সরকার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ তুরস্কে ১৫০ জনের বেশি সাংবাদিক আজ কারারুদ্ধ, তাদের মধ্যে জার্মান-তুর্কি সাংবাদিক ডেনিজ ইউচেলও আছেন৷ সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক ও ইয়েমেনে সাংবাদিকরা চতুর্দিক থেকে হুমকির মুখে৷ ঠিক এই সব দেশেই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর কাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি – বিশেষ করে স্থানীয় মিডিয়ার সীমাবদ্ধতার আঙ্গিকে তারা যখন নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করতে পারে৷

Pohl Ines Kommentarbild App
ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেজ পোল

মিডিয়াবিরোধী প্রচারণা

কিন্তু আরো একটি বিকাশধারা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের সর্বাশেষ বিবরণ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রগুলিতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্রমেই আরো বেশি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডের মতো দেশে মিডিয়া বিরোধী প্রচারণা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যার ফলে নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রণয়নের পথ প্রশস্ত হচ্ছে, যাতে গুপ্তচর সংস্থাগুলির নজরদারির পরিধি বাড়ানো যায় এবং তথাকথিত হুইসলব্লোয়ারদের ভয় দেখানো যায়৷

এক্ষেত্রে সবার আগে নাম করতে হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ নির্বাচনি প্রচারণার সময় মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলির পেশাদারি রিপোর্টিংকে খেলো করে তুলতে সমর্থ হন৷ টুইটারের কল্যাণে তিনি দিনে কিংবা রাতে তাঁর অপ্রমাণিত মন্তব্যগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন৷ বহুক্ষেত্রে তিনি নিজে মিথ্যাপ্রচার করেন, অথবা বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে ফেক নিউজ প্রচারের অভিযোগ করেন৷

দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের এই নীতি বেশ সফল হচ্ছে এবং তা শুধু ট্রাম্পের নিজের সমর্থকদের মধ্যেই নয়৷ অপরদিকে ট্রাম্পের সমালোচকরাও স্বীকার করবেন যে, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বহুকাল ধরেই স্বাধীন বা নিরপেক্ষ নয়, তারা চলে কর্পোরেট কোম্পানিগুলির অর্থে ও স্বার্থে৷ প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলি সম্পর্কে অন্তত এটুকু বলা চলে যে, তারা সাধারণ মানুষদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার পরিবর্তে সমাজের শিক্ষিত, ওপরমহলের মানুষদের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায়৷

Symbolbild digitaler Populismus
টুইটারের কল্যাণে তিনি দিনে কিংবা রাতে তাঁর অপ্রমাণিত মন্তব্যগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দেনছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul

বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস

এই বিকাশধারা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সীমিত নয়৷ ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, এমনকি জার্মানির মতো দেশেও আজ পেশাদারি সাংবাদিকতার ভাবমূর্তি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মলিন৷ এবং এই বিশ্বাসযোগ্যতা হারানো ইন্টারনেটের যুগে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়াতে পারে৷

পেশাদারি সাংবাদিক, যারা নীতিমালা অনুসরণ করে চলেন, জনগণ যদি এই ধরনের সাংবাদিকদের আর বিশ্বাস না করে, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্য মতবিনিময় ও বিতর্ককে কবজা করে ফেলতে বিশেষ বিশেষ স্বার্থের কোনো অসুবিধা হবে না৷ সেজন্য থাকবে ফেক নিউজ, ভুয়া যড়যন্ত্র নিয়ে জল্পনা-কল্পনা এবং সাইবার চোখরাঙানির মতো অস্ত্র৷ প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া তখন জনমত গঠনে তাদের গুরুত্ব হারাবে৷

গণতন্ত্রের ঝুঁকি

গণতন্ত্রের পক্ষে এই পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক৷ মিডিয়ার পেশাদারি সাংবাদিকরাও এর জন্য অংশত দায়ী, বিশেষ করে তারা যখন ধরে নেন যে, তারাই সত্যের ইজারা নিয়েছেন – এভাবেই ট্রাম্পের মতো মানুষদের পালে হাওয়া লাগে৷

প্রতিষ্ঠিত, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের পুরনো মর্যাদা ফিরে পেতে পারে, যদি তারা বাস্তবিক জনগণের কথা শুনতে শেখে – বিশেষ করে যারা ভিন্নমত পোষণ করেন, যারা নিজেদের উপেক্ষিত ও অবহেলিত বোধ করেন এবং শেষমেশ পপুলিস্টদের সহজিয়া সমাধানে আকৃষ্ট হন৷ সাংবাদিকদের ভালো-মন্দের ভেদাভেদ করা উচিৎ – বিচার নয়৷ জার্মানিতে অন্তত একটি আইনব্যবস্থা আছে, যা স্পষ্ট নির্ধারণ করে দেয়, কি বলা চলে আর কি বলা চলে না৷

ইনেজ পোল/এসি