1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে মুসলিম নারীদের জয়

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
২৭ অক্টোবর ২০১৬

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মুম্বাইয়ের বিখ্যাত হাজি আলি দরগায় অবাধ প্রবেশাধিকারের পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় পেয়েছেন মুসলিম নারীরা৷ রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করতে রাজি হয়েছে দরগার ট্রাস্ট৷

https://p.dw.com/p/2Rl39
Indien Bhopal muslimische Braut BG Massenhochzeit
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta

মুম্বইয়ের সমুদ্র উপকূলে পঞ্চদশ শতাব্দির বিখ্যাত হাজি আলি দরগায় মুসলিম নারীদের অবাধ পরবেশের ওপর থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নেবে, এই মর্মে ভারতের শীর্ষ আদালতকে জানিয়ে দিয়েছে দরগার ট্রাস্ট, বলেছে, এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকবে৷ বছর চারেক আগে দরগায় মুসলিম নারীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলা হয়, দরগায় নারীদের প্রবেশ ইসলাম ধর্মমতে ঘোরতর পাপ৷ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ পবিত্র কোরান এবং মহানবি হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন৷

নারীদের সমানাধিকারের দাবিতে ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন' নামে এক নারীবাদী সংগঠন মুম্বই হাইকোর্টে আর্জি জানালে আদালত ঐ নিষেধাজ্ঞা সংবিধানসম্মত নয় বলে খারিজ করে দেন৷ দরগা ট্রাস্ট সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপীল করলে শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখেন৷ সংবিধান অনুযায়ী, ভারতে নারী-পুরুষ বৈষম্য অবৈধ৷

শুধু মসজিদ বা দরগা শরিফ নয়, অনেক হিন্দু মন্দিরেও মহিলাদের গর্ভগৃহ পর্যন্ত প্রবেশাধিকার নেই৷ যেমন কেরালা রাজ্যের সবরিমালা ধর্মস্থান৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নারী অধিকার কায়েম করার লড়াইয়ে এক ঐতিহাসিক জয় বলে অভিহিত করেন ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের শীর্ষ নেত্রী নূরজাহান নিয়াজি৷ তিনি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সর্বদাই বিশ্বাস করি, আদতে এটা মুসলিম মূল্যবোধেরই জয়৷ কারণ ইসলাম ধর্মে সাম্য, গণতন্ত্র ও নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথাই বলা হয়৷ লিঙ্গ বৈষম্য আসলে কিছু মুসলিম ধর্মীয় নেতার মানসিকতাই পরমাণ করে৷''

 সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সম্পর্কে দক্ষিণবঙ্গের এক মৌলবি নজরুল হাফেজ (হাজি সাহেব) ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘মেয়েরা পর্দানসিনভাবে মসজিদে বা দরগায় যাতায়াত করতেই পারেন, তবে সেটা মার্জিতভাবে৷ অনেক জায়গায় তাঁরা যাচ্ছেনও৷ তবে যাতায়াতের যেসব নিয়ম ইসলাম ধর্মে বলা আছে, সেটা মেনে চলতে হয়৷ মক্কা ও কাবা শরিফে নামাজের জন্য পুরুষ ও নারীদের জন্য আছে পৃথক ব্যবস্থা৷ দেশের বিভিন্ন দরগাতে একই ব্যবস্থা আছে বলে জানি৷ ইসলাম ধর্মে বা শরিয়তে কিছু কিছু বিধিনিষেধ আছে৷ কোথায় মুসলিম নারী যেতে পারবেন, কোথায় যেতে পারবেন না, সেটা মেনে চললে কোনো সমস্যা নেই৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কী বলা হয়েছে জানি না. কাজেই সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইনা৷''

 ভারতীয় সংবিধানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমানাধিকারের প্রসঙ্গে হাজি সাহেব বলেন, ‘‘ভারতের সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার আছে৷ সেই অনুযায়ী, মুসলিম ব্যক্তিগত নিয়মবিধিই প্রযোজ্য হবে৷ মুসলিম ব্যক্তিগত আইন সংবিধানের ২৫ ও ২৬ নং ধারার মৌলিক ধর্মীয় স্বাধীনতার মধ্যেই পড়ে৷ দ্বিতীয়ত, ইসলাম ধর্মে নারীদের যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া আছে, সেটা সমর্থন করি৷''

অন্য এক নারীবাদী কর্মী মহম্মদ নাজমুল হক ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘দরগা শরিফে মহিলাদের প্রবেশাধিকার আছে এবং থাকা উচিত৷ না থাকাটা গর্হিত৷ তবে হ্যাঁ, মহিলাদের ঋতুকালীন সময়ে নিজেদের অপবিত্র মনে করে মহিলারা নিজেরাই ঢুকতে চাননা৷ সেটা আলাদা কথা৷ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এবং মুসলিম পার্সোনাল আইন নিয়ে গোটা দেশে চলেছে তুমুল বিতর্ক৷ হাজি আলি দরগা কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেওয়ার প্রেক্ষিতে মুসলিম নারীদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো, মুসলিমসমাজের বিবাহ, তিন তালাক, বহু বিবাহ, খোরপোষ ইত্যাদিতে এক প্রগতিশীল সংস্কারের পথ প্রশস্ত করবে বলে মনে করছেন অনেকে৷

 নতুন দিল্লির জামা মসজিদ
নতুন দিল্লির জামা মসজিদছবি: Reuters/Ahmad Masood

এ বছরের প্রথম দিকে নারীবাদী ত্রুপ্তি দেশাইয়ের নেতৃত্বে কয়েকশ' মহিলা জোর করে প্রবেশ করেন মহারাষ্ট্রের এক শনি মন্দিরে৷ সেই মন্দিরেও ছিলনা নারীদের প্রবেশাধিকার৷ এখন কেরালার সবরীমালা মন্দিরের গর্ভগৃহে নারীদের প্রবেশাধিকার সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের দিকে সবাই তাকিয়ে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য